<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডান পায়ের স্যান্ডেলের পেছনটা রাবার দিয়ে এমন করে বাঁধা যেন তা খুলে না যায়। পায়ের আঙুলগুলোও কিছুটা কোঁকড়ানো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পা টেনে টেনে হাঁটতে হয়। এভাবেই জীবনের পথ চলছেন কিশোরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা বাজিতপুরের নিলখী গ্রামের বাসিন্দা মো. শামসুদ্দিন (৭১)। মুক্তিযুদ্ধে আহত হওয়ার পর থেকেই তাঁর এ অবস্থা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="" height="119" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/03.March/13-03-2023/121/90-.jpg" style="float:left" width="255" />১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর ভোরে নিকলী থানা অপারেশনে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের গুলি শামসুদ্দিনের ডান ঊরু এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল। পরে তাঁর চিকিৎসা হয় ভারতের মেঘালয়ের শিলং হাসপাতালে। গুলিতে প্রচুর রক্তপাত হলেও এবং ক্ষতটা প্রথমেই সুচিকিৎসার অভাবে বিষিয়ে গেলেও প্রাণে বেঁচে যান শামসুদ্দিন। তবে কখনোই আর পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেননি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৯ মার্চ বিকেলে এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির উঠানে বসে একাত্তরের রক্তঝরা দিনের স্মৃতি রোমন্থন চলছিল। কথা বলতে বলতে প্রায়ই শামসুদ্দিনের চোখ ছলছল করে উঠছিল। তিনি জানালেন, একাত্তরের জুনের শেষ নাগাদ যখন ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যান, তখন তাঁর বয়স ১৯ বছর। মেট্রিক (বর্তমানের এসএসসি) পাসের পর কলেজে পড়া হয়নি। ১২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাঁকে উজ্জীবিত করে। মার্চের শেষে চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাণ্ডবলীলা রীতিমতো অস্থির করে তোলে তাঁকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এপ্রিলের শেষ দিকে নিলখী গ্রামেরই নূরুল্লাহ স্যার তাঁর সহপাঠী বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে চিঠি লিখে তাঁদের কয়েকজনকে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির ইকো-ওয়ান ক্যাম্পে পাঠান। ২৫ দিন বাঁশতলী ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ চলে। জুনের মাঝামাঝি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ১২০ জনকে বালাটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড়ছড়া ও টেকেরঘাট হয়ে দেশে ফিরে প্রতিটি থানা এলাকার জন্য ১০ জনে ভাগ হয়ে পড়েন শামসুদ্দিনরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচটি সম্মুখযুদ্ধসহ অন্তত ৯টি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন মো. শামসুদ্দিন। নিকলীর যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত হওয়ার দিনের স্মৃতিচারণা করে শামসুদ্দিন জানান, তখনো হাওরে বর্ষার অথৈ পানি। ১৮ অক্টোবর নিকলীর উজানের পথ ধরে রাজাকারদের আসার খবর পেয়ে তাঁরা অ্যামবুশ (অতর্কিত হামলা) করার চেষ্টা করেন। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে রাতের বেলা মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি নৌকা একসঙ্গে হাওরের বিচ্ছিন্ন জনপদ ছাতিরচরের ঘাটে ভেড়ে। বহরে ছিলেন শামসুদ্দিনসহ আটজন প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা। ভোর ৪টার দিকে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তখন অন্যদের জাগিয়ে তুলে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘুমিয়ে থাকলে চলবে?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ওই সময় সবাই মিলে হুট করেই নিকলী থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না তাঁদের। তবে খবর পেয়েছিলেন থানা, স্কুল ও বাজার এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা ক্যাম্প করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শামসুদ্দিন জানান, ১৯ অক্টোবর বিকেলেই মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য একটি গ্রুপ আবার নিকলী থানা আক্রমণ করেছিল। সেই যুদ্ধে গুরুইয়ের মতি মিয়াসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলাপকালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুদ্দিন কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তপাত ও আত্মত্যাগে দেশ স্বাধীন হলেও তাঁদের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। শামসুদ্দিন জানালেন, নিজে যুদ্ধে হয়েছেন পঙ্গু। ক্যান্সারে ভুগে দুই বছর আগে স্ত্রী মারা গেছেন। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে গেছেন বছর দশেক আগে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জংধরা পুরনো টিনের ঘরেই বাস করেন শামসুদ্দিন। প্রভাবশালী প্রতিবেশীরা জমি দখল করে রেখেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যসহ হামলার শিকার হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের দেওয়া বসতঘর চেয়েও পাননি তিনি। এখন সরকারি ভাতার টাকাটাই তাঁর চলার একমাত্র অবলম্বন।</span></span></p>