<p style="text-align:justify">আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন। পরে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব পদে নিয়োগ হলেও উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ এখনো অনেক পদ খালি। গত তিন মাসেও গুরুত্বপূর্ণ এই পদগুলোতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসহ সার্বিক কার্যক্রম।</p> <p style="text-align:justify">বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ৩১ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া শেষ হয়নি। এই তিনটি পদই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে নিয়োগ হয়। এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।</p> <p style="text-align:justify">তবে রেজিস্ট্রার পদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হলেও এখনো এ পদটি শূন্য রয়েছে আট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ দুই পদই শূন্য ১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর বাইরে আরো ছয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর আইন পাস হলেও এখনো কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পদ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার।</p> <p style="text-align:justify">এই চারটি পদ একে অপরের পরিপূরক। একটি পদ শূন্য থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিশেষ করে উপাচার্যকে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ নানা ধরনের সভার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাঁকে নীতিনির্ধারণী কাজও করতে হয়। কোষাধ্যক্ষ আর্থিক ব্যাপার দেখেন।</p> <p style="text-align:justify">রেজিস্ট্রার উপাচার্য দপ্তরকে সাচিবিক সেবা দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে উপ-উপাচার্যই মূল ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করেন। ফলে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই উপ-উপাচার্য না থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।</p> <p style="text-align:justify">শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১ অধিশাখা) নুরুন আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগ শেষ করতে চাই। অনেক ফাইল চলমান। প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময়ও লাগে। প্রতিদিনই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হচ্ছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়িই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগ শেষ করতে পারব।’</p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক মো. নাজমুল আহসান। এ ছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক মো. সোহেল হাসান। </p> <p style="text-align:justify">ইউজিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে উপাচার্য না থাকা পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় হলো চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ; রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।</p> <p style="text-align:justify">শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে বেশ কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে গত সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ও সমর্থনকারী কাউকে এসব পদে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একাডেমিক স্কলার হতে হবে, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। কিন্তু সব মানদণ্ড পূরণ করা শিক্ষক পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে অনেক কষ্টে উপাচার্য নিয়োগের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">গত জুন মাস থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। আর এই সময়ে রোজা, ঈদসহ নানা ধরনের ছুটিতেও বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ১ জুলাই থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান। তখন থেকে পুরোপুরি বন্ধ থাকে ক্লাস-পরীক্ষা। কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলন শুরু হলে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৮ আগস্ট থেকে স্কুল-কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। কারণ বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার পদত্যাগ করেন। এরপর একে একে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রায় চার মাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ দুই পদই শূন্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিরোজপুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় নওগাঁ এবং মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেহেরপুর। </p> <p style="text-align:justify">উপ-উপাচার্য না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা। </p> <p style="text-align:justify">উপ-উপাচার্য আছে কিন্তু কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।</p>