<p>সংসদ সদস্য হয়েও এলাকার সব ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি নিজেও ঠিকাদার। করতেন নিজ সংসদীয় আসন (কয়রা-পাইকগাছা)-সহ অন্যান্য এলাকার কাজও। একাদশ সংসদের প্রার্থী হওয়ার সময় হলফনামায় নিজের পেশা হিসেবেও উল্লেখ করেন ঠিকাদার।</p> <p>২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পাঁচ বছরে ঠিকাদারি কাজ, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, দলের মধ্যে পৃথক বলয় তৈরিসহ নানা অভিযোগে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন বাবু। মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন বাম ঘরানার আওয়ামী লীগ নেতা রশীদুজ্জামান। তিনি বর্তমানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় রয়েছেন কারাগারে। তবে সদ্য বিলুপ্ত সংসদের এমপি না হলেও আক্তারুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে রয়েছে পাঁচ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়াসহ নানা অভিযোগ। এজন্য চলছে দুদকের তদন্তও।</p> <p>খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আগের ঠিকাদারি ব্যবসা আরো জোরদার করেন। নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাজও করেছেন তিনি। নিজ প্রতিষ্ঠান দিয়ে শুধুমাত্র তার সংসদীয় আসন কয়রা-পাইকগাছায় ২৪ কোটি টাকার কাজ করেন। এই হিসাব কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও মেলেনি এ সংক্রান্ত তথ্য।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/29/1730200554-ba1c638afd2f9390086a59112f948a16.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/29/1440456" target="_blank"> </a></div> </div> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একজন সহকারী প্রকৌশলী বলেন, গত পাঁচ বছরে আক্তারুজ্জামান বাবুর কাছে অফিস ছিল অনেকটা জিম্মি। কোনো কাজ হলেই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে না হলেও অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়েও কাজ করতেন বাবু। এর ফলে পুরো অফিস ছিল তটস্থ। এ ছাড়া তিনি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরেরও ঠিকাদার। যখনই তিনি এমপি হন তখন তার কাজের তদারকি করার ক্ষমতা ছিল না আমলাদের। কেননা যার কাছে অভিযোগ করা হবে তিনি নিজেই ঠিকাদার।</p> <p>স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েই আলোচিত হয়ে ওঠেন আক্তারুজ্জামান বাবু। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। সুন্দরবনে তার অনুগতদের দিয়ে আধিপত্য বিস্তার, কয়রা-পাইকগাছা এলাকায় তার প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি কাজ করা, অন্য ঠিকাদারদের নানাভাবে বাধা দেওয়া, বিতর্কিত কর্মী নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, উপকূলীয় এলাকার অন্যান্য ঠিকাদারি কাজে অনিয়মসহ নানান অভিযোগ ছিল বাবুর বিরুদ্ধে। এমপি থাকাবস্থাতেই বিক্ষুব্ধ জনতার রোশানলে পড়ে ট্রলার নিয়ে পালিয়েছেন এমনো নজির ছিল।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে স্বামী পাঠিয়েছেন ৮৭ লাখ টাকা, দেশে ফিরে দেখেন সবই ফাঁকা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/29/1730190241-0331f1beab22fb6d25616fda3a99b07b.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে স্বামী পাঠিয়েছেন ৮৭ লাখ টাকা, দেশে ফিরে দেখেন সবই ফাঁকা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/29/1440411" target="_blank"> </a></div> </div> <p>নিজ প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু যে অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেটি উল্লেখ করে মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জিয়াউল আহসান টিটো জানান, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজটি তার প্রতিষ্ঠানের নামে হলেও করেছেন সাবেক এমপি বাবু।</p> <p>হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আক্তারুজ্জামান বাবুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ছিল এক কোটি টাকার। কিন্তু এমপি হওয়ার পর কেডিএর ময়ূরী আবাসিকে প্লট কিনেছেন প্রায় ৬০ লাখ টাকায়। নগরীর টুটপাড়া ফরিদ মোল্লার মোড়ে নিজ নামের তিন কাঠা প্লটে গড়েছেন পাঁচতলা বাড়ি। ঢাকার মোহাম্মদপুরে শেলটেকের ফ্ল্যাট রয়েছে। রয়েছে গাজীপুরে প্রায় ১০ বিঘা জমি। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা এলাকায় রয়েছে ৩০ বিঘার কৃষি জমি। এমপি থাকাকালীন সময়ে তিনি কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় দুটি বাড়ি তৈরি করেন। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ কলেজের সামনে মো. শাহাবুদ্দিন সরদারের জমি জোর করে দখলে নেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলেও ক্ষমতার চাপে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন ভুক্তভোগী। খুলনা মহানগরীর টুটপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়ি ছাড়াও দুই উপজেলায় পৃথক বাড়িসহ ফ্ল্যাট-প্লটের মালিক হয়েছেন তিনি। এসব অবৈধ সম্পদ গড়ার বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে দুদক।</p> <p>সম্প্রতি কয়রায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরে যাওয়ার আগে মূল সড়কের পাশে তার ‘বাংলো’ বাড়িটি ৫ আগস্টের জনরোষের শিকার হয়েছে। বাড়ির সবকিছু ভাঙচুর ছাড়াও মালামাল লুট হয়েছে। দেওয়াল ভেঙে ফেলা হলেও সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়াল দিয়ে কোনো রকমে বাড়িটি রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ঘরের দরজা-জানালা খোলা, মেঝেতে পড়ে ছিল মা-ছেলের লাশ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/29/1730179780-794cdb9c73f8c687c66ee249c67e263a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ঘরের দরজা-জানালা খোলা, মেঝেতে পড়ে ছিল মা-ছেলের লাশ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/29/1440371" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আক্তারুজ্জামান বাবুর কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ছিলেন না নিজ দলেরও অনেকে। এমনকি পেশাজীবীরাও করেন বিরূপ মন্তব্য। বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো কয়রা শাখার সদস্য সচিব কামাল হোসেন বলেন, ‘আক্তারুজ্জামান বাবু মাফিয়া স্টাইলে পাঁচ বছর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার কথার বাইরে কোনো সরকারি কর্মকর্তা কিছুই করতে পারেননি। তার আমলের এমন কোনো নিয়োগ নেই যা বিনা টাকায় হয়েছে।’ জনপ্রতিনিধি হয়েও কিভাবে নিজ নামে ঠিকাদারি করেছেন সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি। তাছাড়া কয়রা-পাইকগাছায় কয়েকটি বাড়ি করেছেন অবৈধভাবে। তিনি যেসব উন্নয়নকাজ করেছেন তাও নিম্নমানের। কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি।</p> <p>গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর অন্যান্য এমপির ন্যায় আক্তারুজ্জামানও আত্মগোপনে চলে যান। এ জন্য তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার তার মোবাইলে কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।</p>