<p style="text-align:justify">নামে হেমন্ত, রূপে যেন বর্ষাকাল। আকাশে মেঘের ঘনঘটা, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র চোখ-রাঙানি। কোনোভাবেই আকাশের ধূসর কালো মেঘের চাদর ছিঁড়ে নীল আকাশটা উঁকি দিচ্ছে না। ঠিক এ রকম আবহাওয়াই তো চাই গঙ্গাফড়িংদের। মেঘ মানেই বৃষ্টি, বৃষ্টি মানেই জল। জল হলো গঙ্গাফড়িংদের জীবনদাত্রী, বংশরক্ষার জিয়নকাঠি।</p> <p style="text-align:justify">পানি হলো ওদের ডিম ফোটা আর ছানাপোনার সুইমিংপুল। তাইতো গঙ্গাফড়িংরা মেঘ দেখলেই ডেরা থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসে, উড়তে থাকে আকাশে। চাতকের মতো জল চায় মেঘেদের কাছে, জল ছাড়া যে এদের ডিম পাড়া হবে না। উড়তে উড়তে ক্লান্ত হলে অবশ্য আশপাশের গাছপালা আর মরা ডালের আগায় বসে এরা খানিকটা জিরিয়ে নেয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="ক্রসফায়ারে হত্যার মামলায় বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/30/1730253447-6fe58cd8aeff84f72ba0d4ed956a62a1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">ক্রসফায়ারে হত্যার মামলায় বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Court/2024/10/30/1440723" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">আবার কখনো কখনো এরা শিকারের সন্ধানে নেমে আসে ফসলের ক্ষেতের ওপর। উড়তে থাকে আর উড়ন্ত অবস্থায়ই খপ করে ধরে ফেলে এর শিকার অন্য পোকাকে। পাগুলো খ্যাংড়াকাঠির মতো। শিকার ধরেই খাওয়া শুরু করে না, সরু পাগুলো ভাঁজ করে সাঁড়াশির মতো করে ঝুড়ি বানিয়ে তার ভেতরে রেখে দেয়। পাগুলো দিয়ে খামচে ধরে খানিকক্ষণ ওড়ার পর সুবিধামতো জায়গা পেলে সেখানে বসে শিকারকে খাওয়া শুরু করে। অবশ্য এতে সুবিধাও হয় এদের। পায়ের চাপে আর ধরার সময় এদের মুখের শক্ত চোয়ালের চাপে শিকার খানিকটা কাহিল হয়ে পড়ে। এতে সেসব শিকারকে খেতে এদের সুবিধাই হয়।</p> <p style="text-align:justify">হেমন্তের এক মেঘলা সকালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে থাকা ধানগাছগুলোর পাশে বসে গঙ্গাফড়িংদের ওড়াউড়ি দেখছিলাম। মেঘলা দিনে মাথার ওপর উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গাফড়িং। কোনোটার রং লাল, কোনোটা খয়েরি, বাদামি, হলদে, নীল, আবার কোনোটার রং কালো। এরা এত দ্রুত ওড়ে যে চট করে উড়ন্ত অবস্থায় কোনটা কোন ফড়িং তা ঠাহর করা মুশকিল। এদের দ্রুত উড়তেও হয় স্থান বদলাতে ও শিকার ধরতে, আত্মরক্ষার জন্যও। কেননা উড়ন্ত ফিঙে ও শালিক পাখিরা মাঝে মাঝে উড়তে থাকা গঙ্গাফড়িংদের শিকার করে খেয়ে ফেলে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="এখনো ভিসি নেই ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/30/1730252486-fb86bdbdfbb9f03c62c70dd92dce13c6.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">এখনো ভিসি নেই ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2024/10/30/1440722" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">গ্রামে এদের বলে গয়াল পোকা। গ্রামেই এদের বেশি উড়তে দেখা যায়; বিশেষত যেখানে স্বল্প গভীরতার ঘাস বা মরা ডালপালা ভরা স্থির জলের জলাশয় থাকে, তার আশপাশে। হেমন্ত হলো এদের প্রজনন ঋতু। তাই এ সময় সখারা সখির খোঁজে খুব ওড়ে। বর্ষাকাল পেরিয়ে শরৎ-হেমন্ত এলে অনেক জংলা ডোবায় জল জমে থাকে। সেসব জায়গা হয়ে ওঠে এদের ডিম পাড়ার আদর্শ ক্ষেত্র। বসন্ত-গ্রীষ্মেও এদের প্রজনন ও ডিম পাড়তে দেখা যায়। জলে ডোবা ঘাস বা ডালের ওপর ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে পানিতে সাঁতার কাটে, পানির নিচে সরকাদার তলে লুকিয়ে থাকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য। ব্যাঙ ও মাছরা দেখলে এদের কপালে দুর্গতি নামে। মাস তিনেক জলের মধ্যে থাকার পর হামাগুড়ি দিয়ে ডাঙায় উঠে আসে এবং ধানগাছ বা ঘাসের গোড়ায় পুত্তলি অবস্থায় যায়। প্রায় নিস্তেজ অবস্থায় খোলসের মধ্যে কয়েক দিন সেখানে থাকার পর খোলসের পিঠে ফুটো করে প্রাপ্তবয়স্ক ফড়িং বেরিয়ে আসে। জীবনের এক কাল কাটে জলে, অন্য কাল ডাঙায়। এ জন্য এদের বলে উভচর পোকা।</p> <p style="text-align:justify">বাংলায় অবশ্য ড্রাগনফ্লাইকে বলা হয় সুঠামদেহী ফড়িং। চিকন দেহের ছোট আরেক পদের ফড়িং আছে, যাদের বলে ড্যামসেল ফ্লাই বা সরুদেহী ফড়িং। এ দুই ফড়িংই ওডোনাটা বর্গের অধীন। সারা পৃথিবীতে ওডোনাটা বর্গের ছয় হাজার ৫০ প্রজাতির ফড়িং রয়েছে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ১৫০ প্রজাতির ফড়িং। এর মধ্যে গবেষকরা এ দেশে ৬২ প্রজাতির ফড়িং শনাক্ত করেছেন, যার মধ্যে ৩৯টি প্রজাতি সুঠামদেহী এবং ২৩টি প্রজাতি সরুদেহী ফড়িং।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="এবার প্রকাশ্যে এলো জাবি শিবির সভাপতি-সেক্রেটারি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/30/1730244531-763dd6318c820c55e058bc60f3f39be5.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">এবার প্রকাশ্যে এলো জাবি শিবির সভাপতি-সেক্রেটারি</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2024/10/30/1440718" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">একটা আলসে গঙ্গাফড়িংয়ের দেখা পেলাম ধানের শীষে বসা অবস্থায়। হাওয়ায় এত দুলছে যে তার স্থির ছবি তোলা দুষ্কর। তবু ভাগ্য ভালো যে উড়ে পালাচ্ছে না। উড়োজাহাজের মতো দেখতে ফড়িংটির চোখ ও দেহের রং হালকা নীল, গলা ও পেটের ওপর আড়াআড়িভাবে গাঢ় কালচে রঙের ডোরা দাগ, পাখা স্বচ্ছ জালের মতো, উদর ফোলা যা দেখতে অনেকটা ভেঁপু বা বাঁশির মতো। তাই এর বাংলা নাম রাখা হয়েছে ভেঁপুলেজী ফড়িং। ভেঁপুলেজী গঙ্গাফড়িংয়ের ইংরেজি নাম এশিয়ান পিনটেইল বা ট্রামপেট টেইল ড্রাগন ফ্লাই, বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাসিসোমা প্যানোরপয়ডেস (Acisoma panorpoides), পরিবার লিবেলুলিডি। এরা ধানক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা সুবজ পাতা ফড়িং, পাতা মাছি, সাদা মাছি, মাজরা পোকা ও পানিতে পড়া পোকার কিড়া শিকার করে চিবিয়ে খেয়ে কৃষকের উপকার করে। ব্যাঙাচির মতো দেখতে এর ছানাদের বলে নায়াড, জলমগ্ন ধানক্ষেতে জলের মধ্যে থাকার সময় সেখানে যেসব পোকা ধানগাছ থেকে জলে পড়ে যায় এরা তাদের খায়। তাই এরা আমাদের বান্ধব পোকা, এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।</p>
