<p>জার্মানিতে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের ঐক্য ভেঙে পড়েছে। চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ‘ট্রাফিক লাইট’ বলে পরিচিত জোট পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এ অবস্থায় জার্মানিতে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন হতে পারে। ওলাফ শলৎসের সরকারে এখন কেবল তার নিজের দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গ্রিন পার্টি রয়েছে। </p> <p>এদিকে অর্থমন্ত্রী লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস। ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির (এফডিপি) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর গ্রিন পার্টিকে নিয়ে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন শলৎস। বাজেট পাস করার জন্য সিডিইউর সমর্থনও চেয়েছেন তিনি। রক্ষণশীল নেতা মেরজ এই বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। ফলে আগামী ১৫ জানুয়ারি তিনি আস্থাভোট নেবেন। তারপর মার্চে হতে পারে আগাম নির্বাচন।</p> <p>সংবাদ সম্মেলন করতে আসার সময় শলৎসকে শান্ত দেখাচ্ছিল। তিনি যখন তার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণা করছেন, তখন তাকে খুবই আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লাগছিল। এই ঘোষণা করতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে গিয়েছিল। তবে তিনি শান্তভাবেই বোমা ফাটান। <br /> তিনি এফডিপি নেতা লিন্ডনারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, খুবই ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নীতি নিয়ে চলছিলেন। এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। শলৎস বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আমাদের কোনো প্রস্তাব রূপায়ণ করতে রাজি ছিলেন না। আমি দেশকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।’</p> <p>শলৎস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের বাজেটে এক হাজার কোটি ইউরোর ঘাটতির মোকাবেলা করার জন্য একটা পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধের জেরেই জোটে ভাঙন ধরল। </p> <p>গত সপ্তাহে লিন্ডনার একটি নথি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি আর্থিক প্রস্তাবের একটা তালিকা দেন, যা অন্য দলগুলো মানেনি। তার মধ্যে ছিল, জনকল্যাণে খরচ ছাঁটাই করা, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে খরচ ছাঁটাই করা, কম্পানিগুলোর কর কম করার প্রস্তাব কার্যকর করা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়নি।</p> <p>শলৎসের বক্তব্য, এফডিপি নেতা তার নতুন প্রস্তাব কার্যকর করার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। অথচ ওই প্রস্তাবগুলো ছিল দেশের জন্য জরুরি ও ভালো। দেশের ক্ষতি হোক এটা তিনি চাননি।</p> <p>শলৎস জানান, তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য, কম্পানিগুলোকে সাহায্য করার জন্য, গাড়ি প্রস্তুতকারক কম্পানিতে কর্মরতদের চাকরি বাঁচাতে বাড়তি ঋণ নেওয়া হোক। তিনি বিনিয়োগ করার জন্য কম্পানিগুলোকে কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউক্রেনকে বাড়তি সাহায্য করার কথা বলেছিলেন।</p> <p>শলৎস আরো জানান, গ্রিন পার্টির সঙ্গে মিলে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন। আস্থাভোট নেবেন ১৫ জানুয়ারি। আস্থাভোটে হারলে সে ক্ষেত্রে মার্চে নির্বাচন হবে। ২০ মিনিট ধরে নিজের কথা বলার পর শলৎস কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে চলে যান।</p> <p>বিরোধী অতিডানপন্থী এএফডি জানিয়েছে, তারা শলৎসের জোট সরকারে ভাঙনকে স্বাগত জানাচ্ছে। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। তাদের হাত থেকে জার্মানির মুক্তি পাওয়া দরকার ছিল। এএফডি নেতাদের অভিযোগ, এই জোট দেশকে আর্থিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান সংকট থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার। এএফডির দাবি, শলৎস অবিলম্বে আস্থাভোট নিন।</p> <p>জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থী দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। বামপন্থী দলগুলো একযোগে ঘোষণা করেছে, তাদের অনুকূলে হাওয়া আছে। শলৎসের জোট দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং অস্থিরতা তৈরি করেছে। তারা তিন বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও দেশ ও মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।</p> <p>শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রথম থেকেই সমস্যা ছিল। এসপিডি ও গ্রিন হলো মূলত বামঘেঁষা দল, যারা বিশ্বাস করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী হতে হবে এবং জনকল্যাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে।</p> <p>আর এফডিপির অবস্থান ছিল উল্টো মেরুতে। তারা মনে করে, রাষ্ট্র খুব কম বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। আর্থিক ক্ষেত্রে সংযম দেখাবে। জার্মানিতে  ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে কড়াকড়ি আছে তা মেনে চলবে। তাই জোটের শরিকদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই মতবিরোধ হয়েছে।<br />  </p> <p><br />  </p>