<p>আফগানিস্তানের তালেবান নৈতিকতা মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) নতুন এক আইন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই আইনের অধীনে গণমাধ্যমে সকল জীবন্ত প্রাণীর ছবি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। আইনটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে দেশটির মন্ত্রণালয়।</p> <p>এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবান সরকার  কঠোর শরিয়া আইনকে আনুষ্ঠানিকতা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে।</p> <p>নৈতিকতা মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত পাপ দমন ও পুণ্যের প্রচার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম খাইবার এএফপিকে বলেন, ‘আইনটি আফগানিস্তানের সকল এলাকার জন্য প্রযোজ্য... এবং এটি ধাপে ধাপে প্রয়োগ করা হবে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তারা জনগণকে বোঝানোর জন্য কাজ করবেন যে, জীবন্ত প্রাণীর ছবি ইসলামী আইনের পরিপন্থী।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইন বাস্তবায়নে জবরদস্তির কোনো স্থান নেই। এটি শুধুমাত্র উপদেশ এবং লোকেদের বোঝানো যে, এসব বিষয় সত্যিই শরিয়া (আইন) বিরোধী এবং অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।’</p> <p>নতুন আইনে সংবাদ মাধ্যমের জন্য বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যার মধ্যে আছে, সকল জীবন্ত বস্তুর ছবি প্রকাশ নিষিদ্ধ করা অর্থাৎ মানুষ ও প্রাণীর ছবি। এ ছাড়া গণমাধ্যমকে ইসলাম নিয়ে উপহাস বা অবমাননা না করা অথবা ইসলামিক আইনের বিরোধিতা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>তবে নতুন আইনের বিষয়গুলো এখনো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। তালেবান কর্মকর্তারা নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ছবি পোস্ট করছেন। খাইবার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম সম্পর্কিত নতুন আইনের নিবন্ধগুলো বাস্তবায়নের জন্য অনেক প্রদেশে প্রচেষ্টা চলমান হলেও সব প্রদেশে এখনও শুরু হয়নি।’ তিনি আরো জানান, দক্ষিণ তালেবানের শক্ত ঘাঁটি কান্দাহার এবং পার্শ্ববর্তী হেলমান্দ প্রদেশের পাশাপাশি উত্তর তাখারেও এ সক্রান্ত কাজ শুরু হয়েছে।</p> <p>গতকাল সোমবার কান্দাহারের সাংবাদিকরা এএফপিকে জানিয়েছেন, তারা মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো বিবৃতি পাননি বা ছবি ও ভিডিও তোলার জন্য নৈতিকতা পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি। তবে মধ্য গজনি প্রদেশে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে তারা ধীরে ধীরে আইনটি বাস্তবায়ন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।</p> <p>নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিক এএফপিকে বলেছেন, ‘তারা ফটো সাংবাদিকদের আরো দূরে থেকে ছবি তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং অভ্যাসের জন্য কম ভিডিও ধারণ করার কথা বলেছেন।’ ময়দান ওয়ারদাক প্রদেশের সাংবাদিকদেরও একই কথা জানিয়েছেন নৈতিকতা পুলিশ।</p> <p>১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী তালেবান শাসনের অধীনে সারা দেশে টেলিভিশন এবং জীবন্ত জিনিসের ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে এখনও এ ধরনের আদেশ ব্যাপকভাবে আরোপ করা হয়নি।</p> <p>আগের সরকারের বিরুদ্ধে দুই দশকের বিদ্রোহের পর তালেবান কর্তৃপক্ষ যখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ দখল করে, তখন আফগানিস্তানের ৮ হাজার ৪০০ জন সংবাদকর্মী ছিল। তবে এখন মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, ৫৬০ জন নারীসহ মাত্র পাঁচ হাজার ১০০জন এখন এই পেশায় রয়েছেন।</p> <p>রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর সংকলিত সংবাদ স্বাধীনতা র‌্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১২২ তম স্থান থেকে ১৭৮ তম স্থানে নেমে এসেছে।</p> <p>সূত্র : এএফপি</p>