<p>চুয়িং গাম এখনকার শিশু-কিশোরদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় এক খাদ্য। বিভিন্ন রং, স্বাদ এবং আকারে এটি দোকানগুলোতে পাওয়া যায় এবং শিশু-কিশোররা পছন্দের গাম কিনে চিবাতে থাকে। তবে, চুয়িং গামের কিছু বিচিত্র ইতিহাস আছে। এই ইতিহাসের শিকড় অনেক পুরোনো এবং বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে স্থান করে নিয়েছে। </p> <p>চুয়িং গামের ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রায় ৯,০০০ বছর আগে উত্তর ইউরোপের মানুষ কিছু বিশেষ গাছের ছাল চিবাতেন। দুটি উদ্দেশ্যে। একটি ছিল নতুন স্বাদের খোঁজ, আরেকটি দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। মায়া সভ্যতাতেও চুয়িং গাম চিবানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই সভ্যতার মানুষেরা স্যাপোডিল্লা গাছের রস চিবাতেন। উদ্দেশ্য ছিল মূলত ক্ষুধা নিবারণ ও তৃষ্ণা মেটানো। </p> <p>আজটেক সভ্যতায় চুয়িং গাম চিবানোর জন্য কিছু নিয়ম ছিল। শিশু ও অবিবাহিত নারীরা প্রকাশ্যে গাম চিবাতে পারতেন, কিন্তু বিবাহিত নারীদের জন্য এটি ছিল ব্যক্তিগত কাজ। পূর্ণবয়স্ক পুরুষরা গাম চিবাতেন দাঁত পরিষ্কার করার জন্য, এবং তা ছিল গোপনীয়।</p> <p>চুয়িং গামের আধুনিক যুগ শুরু হয় ১৮৪০ সালের দিকে। মার্কিন ব্যবসায়ী জন কার্টিস নামের এক ব্যক্তি চুয়িং গাম ব্যবসায়িকভাবে শুরু করেন। তিনি স্প্রুস গাছের রস দিয়ে প্রথম চুয়িং গাম তৈরি করেন। কিন্তু এর স্বাদ তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। এরপর, বিভিন্ন উপাদান যোগ করে চুইনগামের স্বাদ উন্নত করা হয়। </p> <p>তবে, চুয়িং গামের ইতিহাসে মাইলফলক তৈরি হয় ১৮৮০ সালে। মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট অ্যান্টনিও লোপেজ ডি সান্তা আন্নার পরামর্শে টমাস অ্যাডামস চিকল নামের গাছের রস ব্যবহার করে উন্নত চুয়িং গাম তৈরির কাজ শুরু করেন। চিকল থেকে তৈরি গাম দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। </p> <p>বিশ শতকের শুরুতে চুয়িং গামের বাজার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮৯৩ সালে আরেক মার্কিন ব্যবসায়ী উইলিয়াম রিংলে জুনিয়র চুয়িং গাম বিপণনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেন। তাঁর উদ্যোগেই বাজারের চুয়িং গামের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ১৯২৮ সালে চুয়িং গামের আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তখন ফ্র্যাঙ্ক ফ্লিয়ারের কোম্পানি বাবল গাম তৈরি শুরু করে। এর পরবর্তী সংস্করণ 'ডাবল বাবল' বাজারে বিপ্লব সৃষ্টি করে।</p> <p>আজ চুয়িং গাম শুধুমাত্র একটি মজাদার খাবার নয়, এটি সময় কাটানোর এক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলোয়াড়দের থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি, প্রায় সবাইকেই চুয়িং গাম চিবোতে দেখা যায়। এটি কখনো মনের প্রশান্তির জন্য, কখনো বা খেলার সময় মুখের তরলতা বজায় রাখার জন্য। তবে, ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় চুয়িং গামকে আরও রঙিন এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে। </p> <p>চুয়িং গামের এই দীর্ঘ ইতিহাস শুধুমাত্র একটি খাবারের বিবর্তন নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি, সমাজ এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে এক অদ্ভুত সম্পর্ক স্থাপন করেছে।</p> <p>সূত্র: ব্রিটানিকা</p>
