<p>আগের দিনে টাকা বা জিনিসপত্র চুরি হলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরতে নানা ধরনের লোকজ পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো। এর মধ্যে চালপড়া ছিল অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি। সন্দেহভাজন ব্যক্তির হাতে চালপড়া দেওয়া হতো। কবিরাজরা মন্ত্র-তুকতাক ইত্যাদির মাধ্যমে চাল পড়ে দিতেন। মানুষ বিশ্বাস করত, সন্দেহভাজন যদি সত্যি চোর হয়, তাহলে তার শরীরে নানা রকম পরিবর্তন হবে। এমনকি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর যদি চোর না হয়, তাহলে সে সুস্থ থাকবে। </p> <p>প্রশ্ন হলো, এই পদ্ধতির পেছনে আসলেই কি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? </p> <p>বিজ্ঞান বলে যে চালপড়া বা এই ধরনের কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে সত্য বা মিথ্যার প্রমাণ করা সম্ভব নয়। মানুষের শরীর বা মন কোনোভাবে চালের ওপর এমন প্রভাব ফেলতে পারে না। এই পদ্ধতিগুলো কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষার ফলাফল নয়। বরং এটি লোকবিশ্বাস বা কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।</p> <p>অনেকে আবার বলেন, এই পদ্ধতিতে কাজ হয়–নিজে চাক্ষুস করেছেন? কিভাবে সম্ভব?</p> <p>সন্দেহভাজন ব্যক্তি যদি সত্যিই চুরি করে এবং চাল পড়ার সময় সে মানসিক চাপে থাকে। তখন তার শরীরে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, শরীর ঘামা বা হাত কাঁপতে পারে। ফলে অন্যদের কাছে ব্যাপারটা সন্দেহজনক হয়। তারা ধরেই নেয় এই ব্যক্তি চোর। তবে এর সঙ্গে মন্ত্রটন্ত্রের কোনো যোগ নেই। বরং চোর যদি চালপড়ায় বিশ্বাসী না হয়, তাহলে তার শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যাবে না।</p> <p>আধুনিক সমাজে আমরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং আইনের ওপর ভিত্তি করে অপরাধ নির্ধারণ করি। হাতের চাল নিয়ে মিথ্যা-সত্য নির্ধারণের পদ্ধতির চেয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ডিএনএ টেস্টিং এবং অন্যান্য আধুনিক ফরেনসিক প্রমাণ অনেক বেশি কার্যকরী। এসব পদ্ধতি আমাদের আরো নির্ভুল ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অপরাধীর পরিচয় জানতে সহায়তা করে। তাই চলপড়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।</p> <p>চালপড়ার মতো পদ্ধতি মূলত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে। সেই সময়ের মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির তেমন পরিচিত ছিল না, তাই তারা এই ধরনের পদ্ধতির ওপর বিশ্বাস করত। এটা পুরোই ভুল বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলে।</p> <p>চালপড়া এবং অন্য লোকজ পদ্ধতিগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো মূলত পুরনো কুসংস্কার এবং মানসিক চাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আজকের আধুনিক সমাজে আমরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং যুক্তির ওপর নির্ভর করে অপরাধ নির্ধারণ করি, যা আরো নির্ভুল এবং বিশ্বাসযোগ্য। তাই চালপড়ার মতো প্রথাগুলো শুধু একটি সামাজিক ঐতিহ্য হিসেবে দেখা যেতে পারে, তবে এর কোনো বাস্তবিক প্রমাণ বা কার্যকারিতা নেই।</p>