<p>বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর এবং রহস্যময় সমুদ্রপথের মধ্যে ড্রেক প্যাসেজ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এটি দক্ষিণ আমেরিকার শেষ প্রান্ত এবং অ্যান্টার্কটিকার মধ্যে অবস্থিত। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তাল ও বিপজ্জনক সমুদ্র হিসেবে পরিচিত। জাহাজ, নাবিক, এবং বিজ্ঞানীদের জন্য ড্রেক প্যাসেজ একটি আতঙ্কের নাম, কারণ প্রতি বছর এখানে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয় বা বিধ্বস্ত হয়। এমনকি এই অঞ্চলের আবহাওয়া এতটাই খারাপ এই অঞ্চলকে ডেভিল সি বা শয়তানের সমুদ্র বলে আখ্যা দেওয়া হয়।</p> <p>ড্রেক প্যাসেজের বিস্তৃতি প্রায় ৮০০ কিলোমিটার— দক্ষিণ আমেরিকার কেপ হর্ন এবং অ্যান্টার্কটিকার শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি প্যাসিফিক মহাসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে প্রধান সংযোগকারী পথ। এই এলাকায় স্থলভাগের অভাব এবং সরু প্রণালীর কারণে এখানে ঢেউ এবং বাতাসের গতি মারাত্মকভাবে বেশি হয়ে থাকে। এখানে সমুদ্রের গভীরতা প্রায় ৩,৫০০ মিটার থেকে শুরু করে ৫,০০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা সমুদ্র চলাচলকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।</p> <p>ড্রেক প্যাসেজের সবচেয়ে বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্য হলো এর অনিশ্চিত আবহাওয়া। এখানে হঠাৎ করেই ঝড়ো হাওয়া এবং বিশাল ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে জাহাজ চলাচলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। হঠাৎ করেই বাতাসের গতি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং ঢেউ প্রায় ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এই অবস্থা জাহাজকে অস্থিতিশীল করে তোলে এবং যেকোনো সময় ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।</p> <p>প্রতি বছর এই ড্রেক প্যাসেজে প্রায় ৮০০ জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই আবহাওয়ার অস্থিতিশীলতা, ঢেউয়ের উচ্চতা এবং সমুদ্রের প্রবল স্রোতকে দায়ী করেন। অনেক জাহাজের নিখোঁজ হওয়ার পর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে অনেকের কাছে এগুলো রহস্যময় ঘটনা বলে মনে হয়।</p> <p>১৯৫৪ সালের আগস্ট মাসে মেরি সেলেস্ট নামের বিখ্যাত জাহাজ, যার নাম ড্রেক প্যাসেজে যাত্রা করেছিল। এরপর থেকে আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনাটি সেই সময় পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল এবং ড্রেক প্যাসেজের ভয়াবহতার একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।</p> <p>বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ড্রেক প্যাসেজের এই ভয়াবহতার কারণ হলো এর ভৌগোলিক অবস্থান এবং সমুদ্রের স্রোত। এখানে সমুদ্রের স্রোতের গতি অত্যন্ত বেশি, যা আটলান্টিক এবং প্রশান্দ মহাসাগরের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন আনে। এছাড়া, দক্ষিণ মহাসাগরের চরম শীতল পানি এবং উত্তরের তুলনামূলক উষ্ণ পানি মিলিত হওয়ার ফলে অনেকসময় সাইক্লোন বা ভয়ংকর ঝড় সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক জাহাজেআক্রান্ত হয়ে হারিয়ে যায়।</p> <p>ড্রেক প্যাসেজ থেকে ফিরে আসা অনেক নাবিকের মতে, এখানে এমন সময় আসে যখন ঢেউ এবং বাতাসের কারণে জাহাজকে স্থির রাখা সম্ভব হয় না। জাহাজের প্রায় ৫০ শতাংশ ঢেউয়ের নিচে চলে যায় এবং এর ফলে জাহাজগুলো বিধ্বস্ত হয়।</p> <p>অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও, ড্রেক প্যাসেজ এখনো অনেক অভিযাত্রী এবং বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিরাট আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে অ্যান্টার্কটিকা-অভিযাত্রীদের জন্য এটি একমাত্র সমুদ্রপথ। তবে তাদের প্রতিটি মুহূর্তেই সতর্ক থাকতে হয়, কারণ সামান্য ভুল বা অবহেলা জাহাজ ও জীবনের জন্য মারাত্মক হতে পারে।</p> <p>ড্রেক প্যাসেজ নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রপথগুলোর একটি। এখানকার জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি, এবং এই অঞ্চলটি এক গভীর রহস্য হয়ে রয়েছে।</p> <p>সূত্র: ব্রিটানিকা</p>