<p style="text-align:justify">নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পারে ছোট্ট এক গ্রাম মানিকপুর। এই গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান কখনো নদীতে মাছ ধরে, কখনো বা কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে অভাবের ঘর। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি রেখে সিদ্দিকুর বেরিয়ে পড়েন একটু সচ্ছল জীবনের খোঁজে। ২০১৩ সালের জুনে পা বাড়িয়েছিলেন মালয়েশিয়ার পথে। বিশ্বাস করে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ধরেছিলেন ইব্রাহিম নকিব নামের স্থানীয় এক দালালের হাত। কিন্তু নকিব তাঁকে নিয়ে যান এক অনিশ্চিত বিপত্সংকুল পথে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তাপমাত্রা বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731134114-04755f4ce11dfb85110dffe497a4c97f.jfif" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তাপমাত্রা বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/09/1444542" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">ছয় মাস পর স্ত্রী বিলকিসকে ফোনে জানিয়েছিলেন, বিমানবন্দরের বদলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল টেকনাফে, বিমানের বদলে তুলে দেওয়া হয় গরুর ট্রলারে। বিলকিসের সঙ্গে সেটাই ছিল স্বামীর শেষ কথা। তিনি আর স্বামীর সন্ধান পাননি। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১১টি বছর। আজও স্বামীর পথ চেয়ে আছেন।</p> <p style="text-align:justify">কৃষক সিদ্দিকুর একা নন, তাঁর মতো পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে এই উপজেলার আরো বহু মানুষকে। ভাগ্যক্রমে কেউ মালয়েশিয়ায় পৌঁছে যান, অনেকেরই সলিলসমাধি ঘটে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সাগরে। আবার অনেকের ঠিকানা মাঝপথে মায়ানমার কিংবা থাইল্যান্ডে দালালদের নিষ্ঠুর টর্চার সেলে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আসিফ নজরুলকে হেনস্থা, তীব্র প্রতিবাদ বিচারকদের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731133794-9df9467592929e57378f9cc3e1beb630.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আসিফ নজরুলকে হেনস্থা, তীব্র প্রতিবাদ বিচারকদের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Court/2024/11/09/1444540" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এখানকার আরো কয়েকটি বাড়ি ঘুরে কালের কণ্ঠ জানতে পারে, দালাল নকীবের চক্র জাল পেতে রেখেছে পুরো আড়াইহাজার উপজেলায়। তাঁর দলে আছে অন্তত ৬০ জনের বিশাল মাঠকর্মী। এই মাঠকর্মীদের কাজ হলো গ্রামের অভাবী সহজ-সরল মানুষ বাছাই করা। এরপর চটকদার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা। বিনিময়ে মাঠকর্মীদের পকেটও গরম হয়। কালের কণ্ঠ পুরো উপজেলা ঘুরে ৭৯টি পরিবারের সন্ধান পেয়েছে, যাদের পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম পুরুষ মানুষটি সচ্ছল জীবনের খোঁজে বেরিয়ে হারিয়ে গেছেন প্রায় চিরতরে, যাঁদের বিপথে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম কুশীলব নকীব।</p> <p style="text-align:justify">কালের কণ্ঠ অনুসন্ধানে নেমে জানতে যে কে এই নকীব। মানিকপুর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে দিঘলদী গ্রামে নকীবের বাড়ি। বাড়ি তো নয়, সুনসান নিশ্চল গ্রামের ভেতরে আলিশান এক ত্রিতল বাড়ি। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, এই বাড়িতে গত সাত-আট বছর ধরে কোনো মানুষ থাকে না। দেড় থেকে দুই দশক আগে নকীব ছিলেন তাঁত শ্রমিক। তাঁতকল অধ্যুষিত আড়াইহাজারের শ্রমিকরা এমন বাড়ির মালিক হওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেন না। অথচ নকীব এমন চার-চারটি বাড়ি গড়েছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="উত্তপ্ত মণিপুর, তিন সন্তানের মাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা!" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731133145-a4dba9b67cf54c1c9da7b162dfbc1b74.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>উত্তপ্ত মণিপুর, তিন সন্তানের মাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা!</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/11/09/1444538" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">দিঘলদী গ্রামে নকীবের একে একে তিনটি বাড়িতে সরেজমিনে গেছেন কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদক। বাকি দুটির একটি দোতলা, আরেকটি তিনতলা। তিনটি বাড়ির কোনোটিতেই কেউ থাকে না। এমনকি ভাড়াও দেওয়া হয় না। ইব্রাহিম নকীবের নামে দিঘলদী মৌজাতেই সন্ধান মেলে আরো প্রায় ১৫ একর জমির। এ ছাড়া ফাউসা বাজারে তাঁর রয়েছে একটি বাণিজ্যিক ভবন, যেখানে রয়েছে তিনটি দোকান। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, মানুষ বেচার কারবার শুরু করেই যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে বদলে গেছে নকীবের জীবন।</p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে মাঠকর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলা দালাল নকীবের সাম্রাজ্যের চেয়ে আরো বড় এক চক্রের সন্ধান পেল কালের কণ্ঠ। এই চক্রের নেতৃত্বে আছেন ঈসমাইল হোসেন। বিশনন্দী গ্রামের ঈসমাইল ২০০১ সালে শ্রমিক হিসেবে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে দেশে ফিরে তিনি গড়ে তোলেন আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসমাইলের চক্রে মায়ানমার ও মালয়েশিয়ার ১০ থেকে ১২ জন নাগরিক যুক্ত রয়েছেন, যাঁরা আড়াইহাজার থেকে শিকার সংগ্রহ করেন এবং পরে তাদের মায়ানমারে বন্দি করে মুক্তিপণ আদায় করেন। মুক্তিপণ না পেলে অনেক ক্ষেত্রেই বন্দিকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়। গত আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ্যেই সহযোগীদের নিয়ে মানবপাচার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলেন ঈসমাইল। কিন্তু এর পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। বিশনন্দী গ্রামের যে পৈতৃক বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন ঈসমাইল, সেখানে গিয়ে দেখা যায় সেটি তালাবদ্ধ। কোনো মানুষ সেখানে থাকে না। তারা কোথায় গেছে প্রতিবেশীরাও জানে না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="এইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল ১৪ নভেম্বর" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731131996-64df4f1335ba28db8d35458bbdfced78.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>এইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল ১৪ নভেম্বর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2024/11/09/1444536" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">কালের কণ্ঠ’র দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য এবং ভুক্তভোগীদের ভাষ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনিশ্চিত সমুদ্রপথে নামিয়ে দেওয়ার পর স্থানীয় দালালরা লাপাত্তা হয়ে যায়। কিন্তু অভিবাসীদের ঠেলে দেওয়া হয় মরণপণ এক সংগ্রামে। সাগরে ভাসতে ভাসতে পথের কষ্টে, খাদ্যাভাবে, নির্যাতনে অনেকেই প্রাণ হারান। তাঁদের কঙ্কালসার মৃতদেহ ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় সমুদ্রে। কেউ বা ধরা পড়েন পথিমধ্যে কোনো দেশে। কিংবা ধরা পড়েন মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে। ফলাফল কারাবাস। কেউ বা আন্তর্জাতিক অপহরণ চক্রের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন কিংবা তাদের হাতেই প্রাণ হারিয়েছেন। ওদিকে বাংলাদেশে থাকা তাঁদের দরিদ্র পরিবার মুক্তিপণের অর্থ জোগাতে গিয়ে হয়েছে সর্বস্বান্ত। কেউ বা মুক্তিপণের টাকা পাই পাই করে বুঝিয়ে দেওয়ার পরও ফেরত পেয়েছেন লাশ।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া—পর পর চারটি সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ। পরস্পর লাগোয়া চারটি দেশই হয় বঙ্গোপসাগর, নয়তো আন্দামান সাগরের উপকূলবর্তী। এই উপকূলই হচ্ছে পাচারকারীচক্রের রুট, যার শুরু বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূলে। শেষ হয় মায়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া উপকূলে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731131071-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/09/1444534" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">পাচারচক্রে ফেঁসে গিয়ে ভাগ্যক্রমে ফিরে আসতে পেরেছেন, এমন অন্তত ৭০ জনের সঙ্গে কথা বলতে সমর্থ হয় কালের কণ্ঠ। তাঁদের তথ্য মতে, আড়াইহাজার থেকে পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে থাইল্যান্ডে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এ জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক টর্চার সেল। মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে এসব টর্চার সেল রয়েছে, যেখানে এখনো অনেক বাংলাদেশি বন্দি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।<br />  </p>