<p>আমলা বা সরকারের মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের কোর কোর্সসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে থমকে যায় দেশীয় অর্থে বিদেশ প্রশিক্ষণ। প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ৮৫ শতাংশই ধরা ছিল বিদেশে প্রশিক্ষণে। কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠাতে দুইবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েও লাভ হয়নি। অবশেষে প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণ বাদ দিয়েই প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন করা হচ্ছে। সেই টাকা বিয়ামের উন্নয়নে খরচের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।</p> <p>গত ১২ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহেনা পারভীনের সভাপতিত্বে প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পটিতে বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য রাখা অব্যয়িত অর্থে আরো বেশি কর্মকর্তার দেশীয় প্রশিক্ষণ এবং বিয়ামের কক্সবাজার ও বগুড়া আঞ্চলিক কেন্দ্রের উন্নয়নে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়।</p> <p>প্রকল্পটিতে বিদেশ প্রশিক্ষণ বাদ যাওয়ার বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক আরিফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রকল্পের বাকি বিদেশ প্রশিক্ষণ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই টাকায় দেশেই আরো বেশিসংখ্যাক কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং বিয়ামের কক্সবাজার ও বগুড়া আঞ্চলিক কেন্দ্রের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।</p> <p>বিদেশ প্রশিক্ষণের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের অ্যাডমিন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এগুলোতে মূলত প্রশিক্ষণের নামে প্রমোদভ্রমণই বেশি হয়। সেখানে দু-একটা ট্রেনিং সেশন ছাড়া কিছুই হয় না, যা দেশেই করা যায়। কোনো কোনো প্রশিক্ষণে সেই দেশের কিছু নিয়ম-কানুন তুলে ধরা হলেও আমাদের দেশে তার প্রয়োগ নেই।</p> <p>প্রকল্পটির প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, বিয়াম ফাউন্ডেশনের কোর কোর্সসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের শুরুতে কিছু কাজ হলেও ২০২০ সালে করোনার পর থেকে প্রকল্পের বড় খরচ বৈদেশিক প্রশিক্ষণ আটকে যায়। মহামারি শুরুর আগে দুটি বিদেশ প্রশিক্ষণ করাতে পারে বিয়াম। এরপর দুই দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করেও সরকারি সিদ্ধান্তে সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ সফর বন্ধ থাকায় বিদেশ প্রশিক্ষণে বরাদ্দ রাখা ৩১ কোটি ২১ লাখ টাকা আটকে যায়।</p> <p>জানা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষের দিকে চলে আসায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির দশম সভায় সরকারি অর্থে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় প্রকল্পের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের অবশিষ্ট অর্থ বিয়ামের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যবহারের লক্ষ্যে ডিপিপি সংশোধনসহ প্রকল্পের মেয়াদ তৃতীয়বার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।</p> <p>প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশনের ৬০টি হোস্টেল কক্ষ সংস্কার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩৬টি হোস্টেল কক্ষ সংস্কার প্রয়োজন। বগুড়া ও কক্সবাজার আঞ্চলিক কেন্দ্র দুটির ভবনগুলো পুরনো হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ৬০ জনের বেশি প্রশিক্ষণার্থী রাখা সম্ভব হচ্ছে না, এ লক্ষ্যে এই ভবন সম্প্রসারণ/সংস্থান প্রস্তাব করা হয়েছে।</p> <p>জানা গেছে, সর্বশেষ অনুমোদিত ব্যয় অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ৩০.৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটিতে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।</p> <p>প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল কার্যকর, কর্মদক্ষ ও নিবেদিত মানবসম্পদ গঠনের মাধ্যমে বিয়াম ফাউন্ডেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে বিয়াম অনুষদ সদস্যবৃন্দসহ সরকারের মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদান।</p>