<p style="text-align:justify"><strong>পৈতৃক সূত্রে রংপুরের হরিদেবপুরের আবুল কালামের পেশা কৃষি। কিন্তু চিরাচরিত ধান-পাটের কৃষি থেকে বেরিয়ে খুঁজে নেন লাভের কৃষি। দুই একর জমিতে শুরু করেন পেঁপের আবাদ। তার পর থেকে শুধু লাভ আর লাভ</strong></p> <p style="text-align:justify">মাত্র দুই একর জমি থেকে বছরে লাভ পাঁচ লাখ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">বলছি রংপুরের হরিদেবপুর উপজেলার পাঁচপড়া গ্রামের আবুল কালামের কথা। বছর দশেক আগেও রংপুরের ওই অঞ্চলে ছিল তামাকের চাষ। এখন তা কমে মাঠজুড়ে রকমারি ফসল। ধানের পাশাপাশি বেড়েছে সবজি ও ফলের চাষ। কৃষক এখন অনেক সচেতন। তাঁরা বুঝে গেছেন চাষের সূত্র, লাভের হিসাব।</p> <p style="text-align:justify">এমন একজন কৃষক আবুল কালাম। পৈতৃক সূত্রে আবুল কালামের পেশা কৃষি। কিন্তু চিরাচরিত ধান-পাটের কৃষি থেকে বেরিয়ে খুঁজে নেন লাভের কৃষি। দুই একর জমিতে শুরু করেন পেঁপের আবাদ।</p> <p style="text-align:justify">পেঁপেই বদলে দিয়েছে আবুল কালামের দিন। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন কাঁচা হোক, পাকা হোক, পেঁপের চাহিদা রয়েছে সব সময়ই। চারা রোপণের তিন মাস থেকে ফলন পাওয়া শুরু। কাঁচা পেঁপে বিক্রি হয় সবজি হিসেবে। তবে পাকা পেঁপের জন্য অপেক্ষা করতে হয় পুরো একটি বছর।</p> <p style="text-align:justify">কালামের দুই একর জমিতে দুই হাজার ২০০টি পেঁপেগাছ। একবার গাছ লাগানোর পর তিন বছর ধরে পেঁপে পাওয়া যায়। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দুই একর জমিতে পেঁপে চাষ করতে খরচ কেমন হয়? তিনি তিন বছরের মোট খরচের একটা হিসাব দিলেন। মূল খরচটা বাঁশে, প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর এক লাখ টাকার মতো খরচ হয় চারা, সার ও সেচে। প্রতিবছর ৫০ হাজার করে তিন বছরে শ্রমিক খরচ দেড় লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে মোট খরচ প্রায় চার লাখ টাকা। পেঁপে বিক্রি করে তিন বছরে খরচ বাদে লাভ থাকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর লাভ পাঁচ লাখ টাকা। পাইকাররা তাঁর ক্ষেত থেকেই পেঁপে নিয়ে যান।</p> <p style="text-align:justify">পেঁপের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ চাষ করেন কালাম। খরচ মূলত সাথি ফসল থেকে উঠে যায়। পেঁপেতে শুধুই লাভ। আবুল কালাম বলেন, পেঁপে চাষে তেমন সমস্যা হয় না। রোগবালাই তেমন নেই। মাঝেমাধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। তখন স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেন।</p> <p style="text-align:justify">কালামের বাগানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর সদর উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, পেঁপেতে মূলত রোগবালাই ও কীটের আক্রমণ এই দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। সেই দুই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে জৈবিক বালাইনাশক ও কীট প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষার চেয়ে প্রতিরোধব্যবস্থাই শ্রেয়।</p> <p style="text-align:justify">আবুল কালাম বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর পেঁপে চাষের এ জমিতে ধান চাষ করে জমিকে একটু ভিন্নতা দেন। তারপর আবার পেঁপে চাষ করেন। এতে ফলন ভালো পাওয়া যায়। আজকের তরুণ কৃষকরা শিখে নিচ্ছেন কৃষিতে টিকে থাকার নানা কৌশল। একদিকে তাঁরা রচনা করছেন কৃষির নতুন অর্থনৈতিক বলয়, অন্যদিকে জোগান দিচ্ছেন অনেকখানি পুষ্টি চাহিদার। পাশাপাশি কৃষি ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।</p> <p style="text-align:justify">আবুল কালামের এই পেঁপে বাগানে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। এর বাইরে অস্থায়ী শ্রমিকও কাজ করেন। কৃষিতে প্রকৃত লাভ পেতে হলে দেশের বাজারের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হবে আমাদের—এ সত্যও উপলব্ধি করছেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, সরকার যদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিত, তবে গ্যাপ নীতিমালা অনুযায়ী পেঁপে চাষ করার মধ্য দিয়ে বিদেশে রপ্তানি উপযোগী করে চাষাবাদ করতে পারতেন।</p>