<p>বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা সোহেল মণ্ডল। এই অভিনেতাকে সবাই চিনেছে চঞ্চল চৌধুরীর ‘তাকদীর’ দিয়ে। আন্ডার কনস্ট্রাকশন, মুসাফির, আয়নাবাজিতে অভিনয় করে সোহেল মণ্ডল যা অর্জন করতে পারেননি, সেসব তিনি অর্জন করেছেন শুধু এক ভাইসা সম্বোধনে। এরপর কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি নাটক, চলচ্চিত্র এবং ওয়েব ফিল্মে। জিতেছেন কলকাতার সম্মানসূচক ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আহসান সারোয়ারের সিনেমা ‘রংঢং’। সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল। এটা ছাড়াও অভিনেতার আরো কয়েকটি নাটক সম্প্রতি আলোচিত হয়েছে। বর্তমান কাজের ব্যস্ততা ও হালচাল নিয়ে অভিনেতা কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। শুনেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>ফার্মগেট নয়, ফারামগেট</strong></p> <p>১৫ নভেম্বর বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে রাশিদুল কবির রিমনের নাটক ‘ফারামগেট’। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল ও সামিরা খান মাহি। কিন্তু নাটকের নাম ‘ফার্মগেট’ না হয়ে ‘ফারামগেট’ কেন? “ফার্মগেট এলাকার মানুষের জীবনাচরণ নিয়ে গল্প। তারা তো আধুনিক মানুষের মতো শুদ্ধ করে ‘ফার্মগেট’ বলে না, ফারামগেট বলে। সে কারণে নাটকের নামটিও ‘ফারামগেট’ রাখা হয়েছে”, বললেন সোহেল। সেই সঙ্গে গল্পের কিছুটা আভাসও দিলেন।</p> <p>জানালেন, গল্পটা এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণকে ঘিরে এগিয়েছে, যার জন্ম দারিদ্র্যের মধ্যে। তবে নিজেকে বড় অবস্থানে নিতে চায়। কখনো লেগুনার হেল্পার, কখনো টিকিট ব্ল্যাকার, যখন যা পায় তাই করে। এক তরুণী তাকে ভালোবাসে। কিন্তু ভালোবাসাকে এড়িয়ে যেতে চায় সে। এভাবে একটা পরিণতির দিকে এগোয় গল্পটা।</p> <p><strong>ফার্মগেটে প্রথম স্মৃতি</strong></p> <p>পড়া কিংবা চাকরির জন্য যারা ঢাকায় আসে, তাদের বেশির ভাগের প্রথম ঠিকানা হয় ফার্মগেট। সোহেল মণ্ডলের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই। তিনি বলেন, ‘আমার ছোটবেলা ঢাকায়ই কেটেছিল। তবে মা-বাবার সঙ্গে ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিলাম। ২০০৫ সালের দিকে আবার পড়াশোনার জন্য ঢাকায় ফিরি। তখন ফার্মগেটেই উঠেছিলাম। তেজতুরীবাজারে থাকতাম। পাশেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং, সেখানে ক্লাস করেছি।’ </p> <p>দুই দশক আগের সেই ফার্মগেট আর এখনকার ফার্মগেটের মধ্যে কেমন তফাত দেখেন? সোহেলের জবাব, ‘অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তখন মেট্রো রেল ছিল না, ফার্মগেটের পার্কটা ছিল, সেখানে খেলাধুলা করা যেত, এখন সেখানে মেট্রো রেলের স্টেশন। ওভারব্রিজটা নতুন করে করা হয়েছে। আনন্দ সিনেমা হল তখন দর্শকের আনাগোনায় গমগম করত। কিছু জিনিস যেমন—কোচিং সেন্টার, বাসস্ট্যান্ড—এসব একই রকম আছে। তবে মানুষের আনাগোনা, অবকাঠামোয় অনেক পরিবর্তন এসেছে।’ </p> <p><strong>নাটকে আরো যা</strong></p> <p>সোহেল জানান, সম্প্রতি আলোক হাসানের নির্মাণে একটি নাটক করেছেন। যেখানে তাঁর সহশিল্পী সাফা কবির। এতে সোহেল আছেন নৈশ প্রহরী চরিত্রে, আর সাফা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গল্পে দুজন স্বামী-স্ত্রী। কাজটি করতে গিয়ে জীবন নিয়ে কোনো উপলব্ধি এসেছে কি না, জানতে চাইলে অভিনেতা বলেন, ‘চরিত্রটার সঙ্গে আমার জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং উপলব্ধি করার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, ওই মানুষগুলোর জীবন, তাদের সংগ্রাম, চাওয়া-পাওয়া এসব জানার সুযোগ পেয়েছি।’ </p> <p><strong>বাকিটা ইতিহাস</strong></p> <p>বর্তমানে সোহেলের হাতে রয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘বাকিটা ইতিহাস’-এর কাজ। পরিচালনায় শুভ পাল। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হচ্ছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবিটি। এ ছবি নিয়ে সোহেলের ভাষ্য, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র করছি আমি। সংগত কারণে বলছি না। ঐতিহাসিক একটা চরিত্র, তবে সেটাকে সরাসরি নয়, তার অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।’</p> <p><strong>অপেক্ষা</strong></p> <p>৮ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘রংঢং’। এ ছবিতে আছেন সোহেল মণ্ডলও। দীর্ঘ ৯ বছর আগে করেছিলেন শুটিং। সে অপেক্ষা ফুরিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। এখন অপেক্ষা ‘বনলতা সেন’-এর। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের এই ছবির কাজ শেষ। তবে মুক্তির কোনো বার্তা এখনো দেননি নির্মাতা। নতুন ছবি ও ওটিটি প্রজেক্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলেও অভিনেতার কণ্ঠে পাওয়া গেল অপেক্ষার সুর। বললেন, “নতুন কিছু ছবি একেবারে আলাপের পর্যায়ে আছে। আসলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্রের জায়গাটা তো এখনো প্রায় থমকে আছে। ফলে কী করা হবে, তা এখনো বলা মুশকিল। আর গত এক বছরে ‘বনলতা সেন’ ও ‘শ্যামা কাব্য’ নিয়ে ব্যস্ততা গেছে। এ কারণে প্রস্তাব পেলেও ওটিটির কাজ খুব একটা করতে পারিনি।” </p> <p><strong>ভিসা জটিলতা</strong></p> <p>বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘মায়ার জঞ্জাল’-এ অভিনয় করে সেরা নবাগত অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (বাংলা) পেয়েছেন সোহেল মণ্ডল। তারও আগে থেকে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কাজের দর্শক তৈরি হয়েছে। সে সুবাদে সেখানকার একটি ছবিতেও যুক্ত হয়েছিলেন। তবে ভিসা জটিলতায় যেতে পারেননি। আরো কিছু ছবির ব্যাপারে কথা হলেও এগোতে পারেননি একই জটিলতায়।</p>