<p>বাংলাদেশের জনপ্রিয় গায়ক মনির খান। ক্যারিয়ারে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর গান উপহার দিয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী। বেশ কিছু সিনেমায়ও গান করেছেন মনির খান। তবে হাসিনা আমলে বেশ কঠিন সময় গিয়েছিল এই গায়কের জীবনে। রাজনৈতিক কারণে তিনি ছিলেন অবহেলিত। দীর্ঘ দুঃশাসনের পর দেশের মানুষ যেমন মুক্তি পেয়েছ অনুরূপভাবেই কণ্টকমুক্ত হয়েছেন গুণী এই শিল্পীও। এখন প্রতিনিয়তই নতুন গান প্রকাশ করছেন মনির খান। কনসার্ট করছেন দেশ ও দেশের বাইরে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফের রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।</p> <p><strong>সংগীতজীবনে ৩৫ বছর পার করেছেন এই বছর। দীর্ঘ এই সংগীতযাত্রা কেমন ছিল?</strong></p> <p>১৯৮৯ সালে খুলনা বেতারে আধুনিক গানের অডিশন দিয়েই পেশাদার শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি। এরপর ঢাকায় এসে অনেক পরিশ্রম করেছি। গানের প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ রয়েছে। সব সময় ভাবতাম, লেগে থাকলে একদিন সাফল্য আসবেই। দেখেন, আমাকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র সাত বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালে প্রথম একক অ্যালবাম ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ সারা দেশে সাড়া ফেলল। আর আমাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক একক অ্যালবাম, মিক্সড অ্যালবাম, প্লেব্যাক—সবই করেছি। এখনো তো নিয়মিত গান করেই চলেছি।</p> <p><strong>তারকা হওয়ার পর নিশ্চয়ই আপনার দৈনন্দিন জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছিল?</strong></p> <p>মনির খানকে যাঁরা চেনেন তাঁরা ভালো করেই জানেন, আমি অহংকারী নই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে চলি। জীবন তো দুই দিনের! অহংকার করে লাভ কী বলেন? যারা ক্যারিয়ারের শুরুতে আমার পাশে ছিলেন, এখনো নিয়মিত তাঁদের খোঁজখবর নিই। কোথাও কনসার্ট করতে গেলে ভক্তরা ছবি তুলতে চাইলে এড়িয়ে চলি না। নিজেও অনেক সময় তাঁদের ফোন নিয়ে সেলফি তুলে দিই। আমার আজকের মনির খান হওয়ার পেছনে তো তাঁদের অবদানটাই বেশি। এখনো নিয়ম করে গ্রামের বাড়ি যাই। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আড্ডা দিই, গল্প করি। আমার কাছে সবার ভালোবাসা পাওয়াটাই মুখ্য, নিজেকে বড় করে অন্যকে ছোট করার ইচ্ছা কখনোই পোষণ করি না।</p> <p><strong>প্লেব্যাকেও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ২০০১, ২০০২ ও ২০০৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন। এরপর আর প্লেব্যাকে সেভাবে পাওয়া যায়নি, কেন?</strong></p> <p>গত দেড় দশকে চলচ্চিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে যাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন তাঁরা এখন আর এই পেশায় নেই। প্রযোজকরাও অন্য পেশায় ব্যস্ত। এখন তো বছরে ১০টা বাণিজ্যিক ছবিই নির্মিত হয় না। যে কটি ছবি হয় তার বেশির ভাগ নির্মাতা নাটক থেকে এসেছেন। আমি তাঁদের মেধাকে ছোট করছি না, তবে বাণিজ্যিক ছবি না হলে গান আসবে কোথা থেকে। তার পরও যে নির্মাতারা মনে করছেন গানটি আমি গাইলে ভালো হবে, তাঁরা ডাকছেন।</p> <p><strong>রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে রাজনীতি ছেড়েও দিয়েছিলেন। এখন তো আবার ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রস্তুতি কেমন নিচ্ছেন?</strong></p> <p>একবার চলন্ত গাড়ি থেমে গেলে সেটা চালু করতে একটু সময় তো লাগবেই। আগের গতিতে ফেরত আসতে গিয়ার পরিবর্তন করতে হয়, পিকআপ জোরে দিতে হয়। আশপাশে কেউ ওভারটেক করছে কি না, সেটাও খেয়াল রাখতে হয়। আমি এখন থেমে থাকা গাড়িটা আবার স্টার্ট দিয়েছি। দেখি কখন লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।</p> <p><strong>প্রতিনিয়ত নতুন গান প্রকাশ করছেন। এমন প্রাণশক্তি পান কোত্থেকে?</strong></p> <p>এখনো দৈনিক দু-তিন ঘণ্টা প্র্যাকটিস করি। যখনই সময় পাই হারমোনিয়াম নিয়ে বসি। গানই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। সতর্ক থাকি যেন আমার মধ্যে অলসতা না ভর করে, অনীহা না তৈরি হয়। বয়সের ভারে অনেক শিল্পীই এখন গাইতে পারছেন না। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এখনো গাওয়ার মতো শক্তি দিয়েছেন। সেটাকে কেন কাজে লাগাব না! ভক্তরা অপেক্ষায় থাকেন নতুন গানের জন্য। তাঁদেরও তো বিমুখ করতে পারব না।</p> <p><strong>শোনা যায়, বাংলাদেশে শিল্পীদের মধ্যে ইউটিউব থেকে সবচেয়ে বেশি রয়ালটি আপনি পান। কতটা সত্য?</strong></p> <p>সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে একটা সম্মানজনক টাকা আসে প্রতি মাসে। আমার দুটি ইউটিউব চ্যানেলে গেলে দেখবেন, কোনো গান ভাইরাল না হলেও একটা মাঝামাঝি ভিউ থাকে। পাঁচ দিনে এক কোটি ভিউ না হলেও প্রতিটি গানই মানসম্পন্ন। কেউ না কেউ পছন্দ করছেন। প্রতিদিনই ভিউ বাড়ছে গানগুলোর। আমিও মাস শেষে ভালো অঙ্কের অর্থ পাচ্ছি।</p> <p><strong>বর্তমান গানের বাজার কেমন মনে করছেন?</strong></p> <p>এখন গানের বাজার অন্ধকার। আগে অ্যালবাম প্রকাশিত হলে পোস্টার-ব্যানার হতো। অ্যালবামটি কিনে কেউ কাউকে উপহারও দিতে পারতেন। এখন গান তৈরি হয় ইউটিউবের জন্য। একটা করে গান প্রকাশিত হচ্ছে, শিল্পী সেটা আপলোড দিচ্ছেন। কোনো পাবলিসিটিও নেই। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে ভাইরাল খোঁজা। গানের সুর কী হবে, কথা কী হবে—সেসব না ভেবে আগে ভাইরাল টপিক খুঁজছেন সবাই। ফলে গানটা হিট করলেও বড়জোর এক মাস মানুষ শুনছে। তারপর ভুলে যাচ্ছে। এভাবে চললে আগামী দিনে গানের জগতে আরো অন্ধকার চলে আসবে।</p>