<p>রাজধানীর বঙ্গবাজারে কাপড় দেখতে গিয়ে সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়াসহ দুই সাংবাদিক। এ সময় তার সঙ্গে থাকা জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক নাহিদ সাব্বির, এক শিক্ষার্থী ও একজন ব্যবসায়ীও হামলার শিকার হন। </p> <p>মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের তিন তলায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।</p> <p>সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়াকে কক্ষের মেঝেতে ফেলে মাথায়, পিঠে, কোমরে, পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদকে দোতলায় মারার পর ভবনের ছাদে তুলে পেটানো হয়। তিনি বাম পায়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া এক শিক্ষার্থীর ডান হাতের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলা হয়। মারধরের একপর্যায়ে আল সাদীর মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায় আক্রমণকারীরা। অন্যদিকে নাহিদের মোবাইল, মানিব্যাগ, বাইকের চাবি, প্রেস আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা।</p> <p>ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আল সাদী ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি এবং আমার কলিগ নাহিদ ভাই বঙ্গবাজারে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে কাপড় দেখতে গিয়েছিলাম। তখন মার্কেটের মালিকপক্ষের কেউ আমাদের চিনতে পেরে বলে, সজল ভাই ওপরে আছেন। তখন আমরা ওপরে গিয়ে দেখি, একটা পক্ষ দরজা ভাঙচুর করছে। তারা মার্কেটের অন্য পক্ষের লোক। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে কাউন্সিলর চামেলির ভাই স্বপন ও স্বামী টেবু।’ </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যখন সজল ভাইয়ের অফিসে যাই, তখন টেবুর ও স্বপনের নেতৃত্বে উপস্থিত আমাদের সবার ওপর হামলা করা হয়। আমরা সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর তারা হামলা করে। এমনকি আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে আমাদের ওপর বেশি হামলা করা হয়। বের হয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে আসি। পুলিশের সামনেও তারা আমাদের মারার চেষ্টা করে, কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।’</p> <p>মার্কেটের ব্যবসায়ী বাঁধন বলেন, এই মার্কেটে আমার দোকান আছে। আমি মালিকের (সজলের) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন মালিকের আরেক পক্ষ যারা আওয়ামী লীগ করত, তারা দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা কয়েকজন বাথরুমে অবস্থান নিলে তারা দরজা ভেঙে হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা করে।</p> <p>এদিকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বঙ্গবাজারে চাঁদাবাজির বিরোধীতা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার ওপর হামলা করা হয়েছে। এতদিন নির্যাতকের ভূমিকায় আওয়ামী লীগ ছিল। এখন আরেকটি দল এটা করার চেষ্টা করছে। তিনি রোকসানা ইসলাম চামেলি (শাহবাগ থানার ১৯ ও ২০ নাম্বার ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিল) ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম স্বপনের নেতৃত্বে যারা সাংবাদিক সাদীসহ আরো কয়েকজনের ওপর হামলা করেছে তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, বঙ্গবাজারে ইসলামীয়া মার্কেটে যখন চাঁদাবাজির লেনদেন চলছিল সাংবাদিক সাদী তাতে বাধা দেয়। তখন সাদীসহ আরো কয়েকজনকে মারধর করে চাঁদাবাজরা। তিনি এসব সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে রাষ্ট্র সকল ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।</p> <p>এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক নেতা আল সাদী ভূঁইয়া এবং অন্যান্যদেরকে এহেন ন্যাক্কারজনক শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে।’</p>