<p>গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামর পটিয়ার অধিকাংশ আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে, তাদের কেউ কেউ ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো সরব রয়েছেন।</p> <p>জানা যায়, পটিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একচ্ছত্র দাপটে গত সাড়ে ১৫ বছর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা মাঠেই দাঁড়াতে পারেননি। বিচ্ছিন্ন কিছু দলীয় কর্মসূচি পালনের বাইরে অনেকটা অনলাইনভিত্তিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে তারা। তবে ৫ আগস্টের পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকেই আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত।</p> <p>আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই গা-ঢাকা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলের কর্মীরাও এখন মামলায় অজ্ঞাতনামা মামলায় আসামি হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তবে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর একাংশ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব রয়েছেন।</p> <p>৪ আগস্ট দুপুরে ছাত্র জনতার মিছিলে প্রকাশ্যে দিবালোকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুলি, হামলা, ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুরো পটিয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন বেশ কয়েক জন ছাত্র। এর আগে ১৮ জুলাই উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।</p> <p>ইতিমধ্যে এসব ঘটনার জেরে পটিয়া থানার বেশ কয়েকটি বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামালা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিটি মামলার হুকুমদাদা, মদদদাতা ও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্ধনদাতা হিসেবে সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীসহ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, সাবেক পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী, ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলরসহ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার এজহারভুক্ত আসামি ও অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠালেও তারা অনেকেই জামিনে বের হয়েছেন। তবে জামিন নিয়ে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কু‌ড়িগ্রা‌মে বাড়‌ছে শী‌তের তীব্রতা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731904725-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কু‌ড়িগ্রা‌মে বাড়‌ছে শী‌তের তীব্রতা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/18/1447932" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এরপরও ৫ আগস্টের পর কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি-ঘরে হামলা করেননি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বিষয়টিকে পটিয়ার সর্বস্তরের মানুষ ভালোভাবে দেখছেন।</p> <p>উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। তারা নিজেদের গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।</p> <p>উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কেই ঘরছাড়া দলের নেতাকর্মীরা।’</p> <p>বিএনপি কাউকে হামলা কিংবা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের কৃতকর্মের ভয়ে আত্মগোপনে থাকছেন। অপরাধের বিচার আইন-আদালতের বিষয়। পটিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে শুরু থেকেই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে সোচ্চার রয়েছেন।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731917030-a4dba9b67cf54c1c9da7b162dfbc1b74.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/18/1447968" target="_blank"> </a></div> </div> <p>পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, ‘আমরা কোনো নিরীহ মানুষকে আটক করছি না। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, ওয়ারেন্ট আছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’</p> <p>তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে রেখে খোদ স্থানীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ দলটির সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তারা তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর পর্যন্ত নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাদের ওপর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।</p> <p>যুবলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছবি পোস্ট করে, আমাদেরকে ব্যবহার করে যারা কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সময় আসলে তাদেরকেও হিসাব দিতে হবে। খবর নিচ্ছেন না তো? খবর নিতে বাধ্য হবেন। আওয়ামী লীগ বিক্রি করেছেন ১৫ বছর ধরে আর এখন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কারো খবর নিচ্ছেন না। এর জবাব দিতে হবে আপনাদের। রেডি থাকেন জবাব দেওয়ার জন্য।</p> <p>আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইউছুপ খান তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, যেসব সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে মিছিল মিটিংয়ে আসতেন, বর্তমানে যারা কর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না, কাউকে পুলিশে ধরলে সিনিয়র নেতার নাম বলে দেবেন।</p> <p>সাবেক দুই সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর ছবি পোস্ট করে সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোফরান রানা তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বাবা পাপ করলে নাকি ছেলেকেই পরবর্তীতে সেই পাপের খেসারত দিতে হয়! পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হয় ছেলেদের! তাই এখন হচ্ছে ! আজ শুধু তাদের (দুই সংসদ সদস্য) কারণেই  দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা আজ মামলা খেয়ে ঘরছাড়া হয়েছে। তাদের দেখানো পথেই চলছে পটিয়ার বর্তমানের রাজনীতি। বহাল তবিয়তে আছে যারা ডানের উজির ছিলেন, বাঁয়ের উজির ছিলেন, ধান্ধাবাজি করেছেন, বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছেন, বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন, টেন্ডারের নামে  খাল খননের টাকা লুটেপুটে খেয়েছেন, খালের মাটি বিক্রি করেছেন, সর্বশেষ যারা মাস্তানি করেছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বীরগঞ্জে নতুন আলুর কেজি ১২০ টাকা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731909360-6fd33470dea458ab90e18c964caa6eb9.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বীরগঞ্জে নতুন আলুর কেজি ১২০ টাকা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/18/1447946" target="_blank"> </a></div> </div> <p>তিনি আরো লিখেছেন, আজ সেই অসহায় মানুষগুলো আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছে—খাল খনন করতে গিয়ে যাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল, যাদের জায়গা অধিগ্রহণের টাকা দিবেন বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা লোপাট করেছেন, আমাদের মতো কর্মীদেরকে যারা হয়রানি করেছে, মামলা দিয়েছে তাদের বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। তবে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে সরকার পরিবর্তনের পর অনেক মামলার আসামি হয়েছি। তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। এগুলো আমার জন্য বড় সার্টিফিকেট।</p> <p>জানি না আর সরকার কখনো আসবে কিনা, আসলেও মহান রাব্বুল আলামিন আপনাদের চেহারা যাতে পটিয়াবাসীকে না দেখায়। কারণ আপনারা মানুষের ওপর অনেক অনেক জুলুম করেছেন। যা মানুষ মুখ বুঝে সহ্য করেছে, কাউকে বলতে পারেনি। আমরা আপনাদের অভিভাবক বলতাম সত্যি, মাটি ও মানুষের নেতা বলতাম সত্যি, তবে তা মন থেকে নয়, নিজের ভয় থেকে বলতাম। মন থেকে ঘৃণা করতাম।’</p> <p>যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম তার ফেসবুক পেজে সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে লিখেছেন, ‘বয়োজ্যেষ্ঠ মুরব্বি সব সময় শ্রদ্ধার পাত্র। আপনি যেখানে থাকুন মহান সৃষ্টিকর্তা ভালো রাখুক’। কিন্তু তার এ পোস্টে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতাদের কেউ কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করেন। সেখানে কেউ লিখেছেন, ‘মুরব্বি অভিশপ্ত এক মানব।’ কেউ লিখেছেন, ‘তিনি ভারতে আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।’ কেউ লিখেছেন, ‘ওনি মারা গেছে মনে হয়।’ আবার আরেকজন লিখেছেন, ‘পটিয়ার ইতিহাসের এক কলঙ্কিত ও ঘৃণিত ব্যক্তি, যার চেহারা কিংবা ছবি দেখলে ঘৃণা হয়।’</p> <p>জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাজিম উদ্দীন তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বিগত ১৬ বছর দলের নমিনেশন থেকে শুরু করে পদ পদবীসহ ভিন্ন দলের লোকের কাছে সব কিছুই বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা!</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বিআইডাব্লিউটিসির টিকিট কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731908691-794cdb9c73f8c687c66ee249c67e263a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বিআইডাব্লিউটিসির টিকিট কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/18/1447943" target="_blank"> </a></div> </div> <p>নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোবাশ্বের আলম বলেন, ‘আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করেছি। রাজনীতি করে নিজের জন্য কোনোকিছুই করিনি। শুধু দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। দলের কিছু দুর্নীতিবাজ দুষ্কৃতকারীদের জন্য পুরো দল আজ বিপদগ্রস্ত। নেতারা তো আমাদের সমর্থন নিয়ে বহুকিছুই পেলেন। কিন্তু বিনিময়ে কী পেলাম আমরা কর্মীরা? আজ দলের এই ক্রান্তিলগ্নে নেতারা পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা ভুলেও কেউ খোঁজখবর নিচ্ছেন না।’</p>