<p>আরশেদুল আলম বাচ্চু। প্রায় ২৫ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস হয়েছিলেন তিনি। এরপর ওই কলেজে আর ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। এক যুগ আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগ সমর্থিত এই নেতা আড়াই বছর আগে মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী হলেও সফল হননি। তবে বিপুল অর্থসম্পদের ঠিকই মালিক বনে গেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি বাচ্চুকে। গত সাড়ে ১৫ বছরে নামে-বেনামে অন্তত কয়েক শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।</p> <p>শুধু সম্পদের পাহাড় করেছেন তাই নয়, ছাত্রসংসদের নেতৃত্বে থাকায় কলেজ ও আশপাশে তাঁর ‘ভয়ংকর’ দাপটে সবাই তটস্থ থাকত। কলেজে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন একাধিক পক্ষ-উপপক্ষ ছিল। এ ছাড়া নগরের আরো কয়েকটি কলেজে তাঁর অনুসারী ছিল। বাচ্চু ছাত্রসংসদের নেতা হলেও নগরে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁর অনুসারীদেরও প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। লালদীঘি এলাকায় ১৪ দলের এক সভা পণ্ডের ঘটনায় বাচ্চুর কর্মীদের দায়ী করেছিল খোদ আওয়ামী লীগ।</p> <p>৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রের মুখে অভিজাত একটি মার্কেটের দোকান দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলা হওয়ার আগেই পালিয়ে গেছেন বাচ্চু। কেউ কেউ বলছেন, বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। </p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংসদের একাধিক নেতা জানান, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটিতে স্থান না পেলেও বাচ্চু সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির একাধিক পদেও স্থান করে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন দলের নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির সদস্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হিসেবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবার ছবি তুলে ওই ছবি চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট ও সড়কের পাশে বিশালাকৃতির ডিজিটাল ব্যানারে টানিয়ে দিয়েছিলেন।</p> <p>ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতা ও সাবেক কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে এসব প্রচার করে নিজেকে বড় মাপের নেতা হিসেবে জাহির করতেন বাচ্চু। </p> <p>বাচ্চু গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (নগর আংশিক ও বোয়ালখালী) আসনে নির্বাচন করতে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সম্পদের হিসাবের সুনির্দিষ্ট তথ্য না মিললেও দল ও সংগঠনের ঘনিষ্ঠজনদের মুখে মুখে রয়েছে বাচ্চুর আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কাহিনি।</p> <p>নাম প্রকাশ না করে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন নেতা জানান, নগরের এমইএস কলেজের অদূরে জিইসি এলাকার অভিজাত বিপণিবিতান সেন্ট্রাল প্লাজা ঘিরে একচেটিয়া বিলবোর্ড স্থাপন করেই মাসে ৮-১০ লাখ টাকা আয় করছেন। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বিলবোর্ড বসিয়ে আওয়ামী লীগের শাসনামলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বাচ্চু। গত এক দশকে কিনেছেন সাত-আটটি বিশাল ফ্ল্যাট। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে বাটাগলিতে দুটি রয়েছে। সেন্ট্রাল প্লাজা ও ইউনেসকো সেন্টারে রয়েছে তাঁর একাধিক অফিস এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। রয়েছে অত্যাধুনিক ফিশিং ট্রলারের ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের পটিয়া আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুনের সঙ্গে বিদেশ থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ ও আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট আনতেন বাচ্চু।    </p> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করার অভিযোগ রয়েছে বাচ্চুর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে মুরাদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ ফারুকের বাবা বাদী পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলার ২২ নম্বর আসামি বাচ্চু। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট নগরের চকবাজার থানায় ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছেন সেন্ট্রাল প্লাজার এক ব্যবসায়ী। মামলার বাদী মোস্তফা আলম কিশোর এজাহারে উল্লেখ করেন, বাচ্চু ও মোহাম্মদ হাফিজ উল্লাহ আমিন তিমোর ৩০১ ও ৩০২ নম্বর অফিস রুম টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহার করতেন।</p>