<p style="text-align:justify">নিস্তব্ধ ঘরের প্রতিটি জিনিসপত্র পরিপাটি করে সাজানো রয়েছে। বিছানার একপাশে বালিশ, পড়ার টেবিলে শেলফভর্তি বই। ঘরের একটা রুমের মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, তার পাশেই কাপড় ধোয়ার মেশিন। পানির ফিল্টারের ভেতরটা শুকনা, আর আয়রনে হালকা আস্তর জমে আছে।</p> <p style="text-align:justify">গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. রাকিবুল হোসেন। রাকিব ঢাকায় চাকরি করলেও, গ্রামের বাড়িতে তার ঘরটা সব সময় পরিপাটি করে সাজানো থাকতো। দেখলে মনে হয়, একটু পরেই বাড়িতে ফিরে আসবেন রাকিব। বাড়িতে তিনজনের বসবাস হলেও এখন চলছে নিঃসঙ্গতা। একসময় হাজারো নক্ষত্রের মতো যারা জ্বলেছিল সেই বিপ্লবে, তাদের মতই একজন ছিলেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এখন তার বাড়িতে সেই স্মৃতি আর বেদনা ভরা গল্প ছাড়া আর কিছুই নেই। নিহত হওয়ার ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও পরিবারের আর্তনাদ আজও থামেনি।</p> <p style="text-align:justify">ঝিনাইদহ পৌর এলাকার মহিষাকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দা বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক ও হাফিজা খাতুনের ছোট ছেলে ছিলেন রাকিব। ঢাকার বনানী এলাকার সুপার জুট মিলে চাকরি করতেন তিনি। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে ভাড়া বাসায় থাকতেন রাকিব। বড় ভাই ইকবাল হোসেন সোনালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত। </p> <p style="text-align:justify">রাকিবের বাবা আবু বকর সিদ্দিক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা মোবাইল করলে রাকিব তেমন একটা কথা বলতো না। ওই সময়টাতে সে আমাদের এড়িয়ে চলতো। রাকিব যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, সেটা আমাদের বুঝতে দেয়নি। আমি নিয়মিত রাকিবের মোটরসাইকেলটা যত্ন করে ধুয়ে মুছে রাখি। মোটরসাইকেলে হাত দিলেই মনে হয় আমি আমার রাকিবকে স্পর্শ করছি।’</p> <p style="text-align:justify">মা হাফিজা খাতুন বলেন, ‘ঢাকায় যখন ছাত্র আন্দোলন শুরু হল, তখন আমরা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাকিব আন্দোলনের কীভাবে অফিস করবে? কয়েকদিন তাকে মোবাইল করলেও সব সময় রিসিভ করতো না। এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাফিজা খাতুন।’ </p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ নিয়ে সব সময় ভাবতো রাকিব। যে কারণে সে আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিল।’ </p> <p style="text-align:justify">রাকিবের বন্ধু আবু সায়েম জানান, ‘১৫ জুলাই মোবাইলে রাকিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ও বলল, ছাত্রদের এই আন্দোলনে আমি যোগ দিয়েছি। পরে জেনেছি রাকিব একজন বয়স্ক নারীকে রাস্তা পার হতে সহায়তা করার সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়। গুলিটা তার গলায় লেগে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য মারা যায় রাকিব।’</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক শারমিন আক্তার জানান, ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ রাকিবের পরিবারের আমরা সবসময় খোঁজ নিচ্ছি। ইতিমধ্যে তার সমস্ত তথ্য কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে।’</p>