<p style="text-align:justify">বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবনের দুবলার চরে দুই দিন বাদেই শুঁটকির মৌসুম। বিশেষ টহল ফাঁড়ির অধীন চারটি চরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে শুঁটকি উৎপাদন। এ বছর সাড়ে সাত কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হচ্ছে পাঁচ মাসের এই কর্মযজ্ঞ।</p> <p style="text-align:justify">রবিবার (৩ নভেম্বর) থেকে বন বিভাগের অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে জেলে-বহদ্দাররা রওনা দেবেন নির্ধারিত চরে। তবে এ বছর শুঁটকি প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত জেলেদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।</p> <p style="text-align:justify">বন বিভাগ জানিয়েছে, চরে অবস্থানকারীদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, শিশু শ্রম বন্ধসহ বনের অভ্যন্তরে যাতে কেউ অপরাধ করে পার না পায় সে কারণেই আইডি কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৌসুমের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আইডি কার্ড দেওয়া শুরু হবে। আইডি কার্ডে দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">বন বিভাগ জানায়, শুঁটকি উৎপাদনকারী চরগুলোতে এ বছর জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ৯৮৫টি ঘর, ৫৭টি ডিপো ও ৯৩টি দোকানঘর স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে এই সংখ্যা। শুঁটকি উৎপাদনের লাইসেন্সধারী ১৭ জন বহদ্দার বা মহাজনের অধীনে দুবলার আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারা চরে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি জেলে ও শ্রমিক অবস্থান করবেন। তারা পাঁচ মাস ধরে সাগরে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত থাকবেন।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে দুবলা ফিশারমেন গ্রুপ ও একাধিক মহাজন সূত্রে জানা গেছে, নানা সংকট ও ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের তীরের দুর্গম এই চরগুলোতে শুঁটকি উৎপাদন করতে হয় জেলেদের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরাপদ খাবার পানি সংকট এবং চিকিৎসাসেবা না থাকা। ফলে পানিবাহিত নানা রোগ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর বহু জেলে ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়। সাগরতীরের এই চরগুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেও মৃত্যু হয় অনেকের।</p> <p style="text-align:justify">মাঝের কিল্লার ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের মো. জাহিদ বহদ্দার ও খুলনার ফরিদ আহমেদ জানান, চরগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা খাবার পানি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকা। তারা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব দিলেও জেলে-মহাজনদের এই সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।</p> <p style="text-align:justify">দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলে-মহানজনরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে রবিবার থেকে তারা চরে যাওয়া শুরু করবেন।</p> <p style="text-align:justify">আইডি কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সুবিধা হলো জেলেদের সঠিক পরিচয়টা জানা যাবে। কোন জেলে ছুটি নিয়ে যখন তার বাড়িতে যায়, তখন তাদের পথে পথে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়। তাদের কাছে বন বিভাগের এই আইডি কার্ড থাকলে হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, চরগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার পানি ও সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা না থাকা চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। আলোরকোলে র ্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র ্যাব) গত বছর একটি পানির প্লান্ট নির্মাণ করেছে। তা থেকে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয় তা জেলেদের তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে বালুর চরে কূপ খনন করে তাতে যে পানি জমে তাদিয়েই পিপাসা মেটায় জেলেরা। আর জেলেরা সাধারণ অসুস্থ হলে পল্লী চিকিৎসকই তাদের একমাত্র ভরসা। বড় ধরনের কিছু হলে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। এভাবে প্রতিবছর বহু জেলের মৃত্যু হয় বিভিন্ন চরে। তাই শুঁটকি মৌসুমে চরগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার পানি সরবরাহ ও অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান এই মৎস্যজীবী নেতা।</p> <p style="text-align:justify">পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা বিশেষ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মো. খলিলুর রহমান বলেন, শুঁটকি খাত থেকে এ মৌসুমে সাড়ে সাত কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর আয় হয়েছিল সাত কোটি ২৩ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকেই চরে ঘর তোলা এবং একই সঙ্গে সাগরে মৎস্য আহরণ শুরু করবেন জেলেরা। ঘর তোলার যাবতীয় মালামাল মহানজন-বহদ্দাররা তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে নিয়ে আসবেন। বনের কোনো সম্পদ ব্যবহার করতে পারবেন না।</p> <p style="text-align:justify">খাবার পানি সংকট, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও জানা এই বন কর্মকর্তা।</p>