<p>গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিএনপির দায়ের করা একটি বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয় উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামকে। তবে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম মামলায় এ শ্রমিক লীগ নেতার নাম থাকাকে ইন্টেনশনালি বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় ‘আসামি না করার গ্যারান্টিও দিয়েছেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম।</p> <p>মামলা-পরবর্তীতে শ্রমিক লীগ নেতা সামশুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলমের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের ৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। সেই কথোপকথনে ওঠে এসেছে এসব বিষয়। </p> <p>রেকর্ডটিতে শুরুতেই দুজনকে সালাম বিনিময় করতে শোনা যায়। এরপর খোরশেদ আলমকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সামশুল ইসলাম বলেন, গতকাল এটা কি হয়ে গেল? আমিতো গত ৬ মাসেও পটিয়া যাইনি।</p> <p>উত্তরে বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম বলেন, বুঝেছি বুঝেছি, এটা হলো যে ইন্টেনশন। আমি বলেছিলাম না? এরপর শ্রমিক লীগ নেতা সামশুল বলেন, এখন আপনি যাদের সন্দেহ করেছেন আমিও করছি, ওরা ৫০ লাখ টাকার চ্যালেঞ্জ করেছে মামলা ওরা দেয়নি। মামলা-টামলা সব করার দায়িত্ব খোরশেদ ভাইয়ের বলেছে।</p> <p>কথোপকথনে শ্রমিক লীগ নেতার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খোরশেদ আলম বলেন, আমি আল্লাহর ঘর ঘুরে এসেছি, আমি দুই নম্বর কথা বলি না। আমি আপনাকে বলেছি না? এটার দায়িত্ব আমি নিয়ে নিলাম। আপনি একটু করে এটিকে কন্ট্রোল করেন যেহেতু একটা বৈঠক হয়েছে আপনার সঙ্গে। এনাম ভাই বলেছে এটা টেকনিক্যালি কভার করবেন। আপনি আপাতত চুপ করে থাকেন।</p> <p>তখন বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে সামশুল ইসলাম আবার জিজ্ঞেস করেন, এখন মামলা তো আরো হচ্ছে, ওখানেও ঢুকিয়ে দিবেন নাকি। জবাবে খোরশেদ বলেন, না না, এটা নিশ্চিত থাকেন। বাকিগুলোর গ্যারান্টি আমি দিলাম। লোকালি প্লাস গ্রুপিং বিভিন্ন জায়গায় আছে।</p> <p>এসময় সামশুল ইসলাম বলেন, লোকালি তো ওভাবে আমি দেখছি না। এনাম-গিয়াস ছাড়া তো আমার বিরোধী আর মানুষ নেই।  এনাম গিয়াস এখন ব্যবসা খুঁজে। ১২ জনের সিন্ডিকেট একটা করেছে। ওরা প্রতিদিন ব্যবসা আলাদা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।</p> <p>আবারো দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খোরশেদ বলেন, এখন আমি যেটা বুঝাতে চাচ্ছি আপনাকে, এ বিষয় নিয়ে আমি পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়েছি।</p> <p>অডিও রেকর্ডের একপর্যায়ে আরো বলতে শোনা যায়, খোরশেদ আলমের কাছে পরামর্শ চেয়ে সামশুল ইসলাম জিজ্ঞেস করেছেন তিনি ঘরে থাকবেন নাকি সরে যাবেন। উত্তরে খোরশেদ বলেন, আপনাকে সরতে কে বলেছে? কোন ... (প্রকাশ অযোগ্য) বলেছে সরতে? ভাই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণে বলেছি না? এটা আমি বলব। আপনি স্বাভাবিক থাকেন, এখানে কোনো ঝামেলা নাই।</p> <p>এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা স্বাভাবিক নিয়মেই মামলা করেছে। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে বলল আমি অমুক। তার সঙ্গে আমার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। আমি কথা বলেছি, এখানে আপত্তিকর কী আছে আমি বুঝতে পারছি না।</p> <p>‘গ্রেপ্তার থেকে নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় ‘আসামি না করার গ্যারান্টির বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ বলেন, এটা ভুল। ফোনে উনি আমাকে বলেছে, আমিতো মামলার ৩৩ নম্বর আসামি। সামনেও মামলা হবে। মামলায় আমার নাম আসবে কি-না। তো আমি বলছি, আমি দেখব। এখন এটাতো আমার বিষয় না। যে ক্ষতিগ্রস্ত, সে মামলা করবে। আমিতো মামলায় ঢুকিয়ে দিব বলতে পারি না। আমি একটা দায়িত্বশীল পদে আছি। তার নম্বরটা আমার এখানে সেভ ছিল না। রিসিভ করার পরে কেটে দেওয়াটা অসৌজন্যতাবোধ। সেভ থাকলে আমি রিসিভ করতাম না। যেহেতু পটিয়ার মানুষ, উনি দুঃখের কথা বলেছে আমি শুনেছি।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে পটিয়া উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।</p> <p>গত ২০ আগস্ট বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী আহমেদ বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় পটিয়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বিতর্কিত সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে। এ মামলার ৩৩ নম্বরে রয়েছে উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামের নাম। </p>