<p style="text-align:justify">দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে গত কিছুদিনে। দুই দিন ধরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানিও কমছে। তবে ১০ জুলাইয়ের পর আবার বৃষ্টি বেড়ে নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। এতে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান গতকাল রবিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত নদ-নদীর পানি কমতে পারে। তবে এরপর আবার বৃষ্টি বেড়ে পানি বাড়তে পারে। ফলে কোনো কোনো অঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">পাউবোর তথ্যানুযায়ী, গতকাল দেশের মোট ৯ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ছিল। এগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ। গতকাল বিকেলে এসব জেলায় মোট ৯টি নদ-নদীর পানি ২০টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছিল।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে শেরপুরের নকলা উপজেলায় বাড়ির পাশে কলাগাছের ভেলায় চড়ে ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে এক মাদরাসাছাত্র। দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :</p> <p style="text-align:justify"><strong>কুড়িগ্রাম : </strong>কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বইছে বিপৎসীমার ওপরে।  দুধকুমারের ঢলের পানিতে নাগেশ্বরী উপজেলার কঢ়াকাটা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে সাত হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল।</p> <p style="text-align:justify">জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, এ পর্যন্ত ২৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ২২০টিতে পাঠদান বন্ধ।</p> <p style="text-align:justify">তিনটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, জেলার ৭১টি মাধ্যমিক স্কুল ও ৩২টি মাদরাসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) : </strong>উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৩১টি মৌজা বন্যাপ্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, বন্যার কারণে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>লালমনিরহাট :</strong> তিস্তা নদীর পানি উপচে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। গতকাল থেকে ধরলা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">গত শনিবার বিকেল থেকে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, ডাউয়াবাড়ী, গড্ডিমারী ও সিন্দুর্ণা, আদিতমারীর মহিষখোচা এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলোর অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কিছু রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>গঙ্গাচড়া (রংপুর) : </strong>শনিবার দিবাগত রাতে তিস্তায় ফের পানি বৃদ্ধি পেলে তীব্র স্রোতে হাসানটারী-ভাঙ্গাগড়ায় প্রায় ৫০ ফুট পাকা রাস্তা ভেঙে যায়। শেখপাড়া ব্রিজটিও ভেঙে গেছে। এতে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে, নতুন কিছু এলাকার ফসলি জমিও নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাড়ি ভেঙে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, নোহালী, গজঘণ্টা ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি মানুষজন উঁচু জায়গা, রাস্তার ওপর পলিথিন টাঙিয়ে গরু-ছাগল ও জিনিসপত্র নিয়ে কোনোরকমে মাথা গুঁজে আছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বগুড়া :</strong> সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি সামান্য কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ৮২টি গ্রামের ১১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়েছে ৬৮ হাজার ৪০০ মানুষ। পানিতে উপজেলার ছয় হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং আট হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলার ৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন।</p> <p style="text-align:justify">সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান রাসেল জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সারিয়াকান্দির ইছামারা, হাটশেরপুর, কর্ণিবাড়ী, সোনাতলার সুজাইতপুর এবং ধুনটের শহড়াবাড়ী বাঁধের এক হাজার মিটার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সোনাতলা উপজেলায় ৯ হাজার পরিবারের ৩১ হাজার ৫৩২ জন মানুষ পানিবন্দি। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, ৬৫৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার ৮৯৩টি কৃষক পরিবার।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সিরাজগঞ্জ :</strong> নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাঁত কারখানা, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে আবাদি জমির ফসল। কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এরই মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৮৫টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত এলাকার অনেকে বাঁধ ও উঁচু স্থান এবং অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) রোজিনা আক্তার জানান, রবিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় মোট ৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৬১টি প্রাথমিক এবং ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, জেলার ছয় হাজার ৪৯৭ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শেরপুর : </strong>নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের হাসনখিলা উত্তর পাড়া গ্রামে বাড়ির পাশে কলাগাছের ভেলায় চড়ে ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মাদরাসাছাত্র রিফাত (৮) মারা গেছে। শনিবার দুপুরে পানিতে ডোবার ১০ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান উরফা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে আলম তালুকদার ভুট্টো।</p> <p style="text-align:justify"><strong>রাজবাড়ী : </strong>পদ্মার পানি বিপত্সীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। এতে নিম্নাঞ্চলের চারটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। আবাদি ফসল, গোখাদ্যের চারণভূমিসহ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিনই পদ্মায় পানি বাড়ছে। পানি আর ১৫ সেন্টিমিটার বাড়লে বিপত্সীমা অতিক্রম করবে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শেরপুর : </strong>ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নামতে থাকায় নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া, কলসপাড়, মরিচপুরান ইউনিয়ন, সদরের গাজীরখামার এবং নকলার উরফা ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নকলা, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের আটটি ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) :</strong> চলমান বন্যায় কুলাউড়া পৌরসভার ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ও ১২ কিলোমিটার ড্রেন, এক হাজার ঘরবাড়ি, ১৮টি কালভার্ট, ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি কাঁচাবাজার, অনেক মসজিদ, পশুর খামার, পুকুর ও বিভিন্ন অফিসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ। গতকাল দুপুরে পৌরসভার হলরুমে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">পৌর মেয়র বলেন, অতীতে কুলাউড়ায়, বিশেষ করে পৌর এলাকায় বন্যা বা জলাবদ্ধতা এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে মানুষ পানিবন্দি থাকার পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুমান করা হচ্ছে, এটি আরো দীর্ঘায়িত হবে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ফুলপুর (ময়মনসিংহ) :</strong> ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ও সদর ইউনিয়নেই প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। এ ছাড়া ভাইটকান্দি, রামভদ্রপুর, রূপসী ও ছনধরা ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নিচু এলাকা জলমগ্ন, বেশির ভাগ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">খরিয়া ও কংস নদের পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কংস নদের ডেফুলিয়া-বাঁশতলা, সরচাপুর ও ঠাকুরবাখাই নদী এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষ নৌকায় ঘরের জিনিসপত্র, গবাদি পশু সরিয়ে নিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বন্যায় ভোগান্তি</strong></p> <figure class="image"><img alt="দীর্ঘায়িত হতে পারে বন্যা পরিস্থিতি" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/07.July/08-07-2024/10_kaler-kantho--08-7-2024.jpg" width="1000" /> <figcaption>১. নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানিতে গজারমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচের মাটি সরে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টি।   <strong>ছবি : কালের কণ্ঠ</strong></figcaption> </figure> <p style="text-align:justify"> </p> <hr /> <figure class="image"><img alt="দীর্ঘায়িত হতে পারে বন্যা পরিস্থিতি" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/07.July/08-07-2024/11_kaler-kantho--08-7-2024.jpg" width="1000" /> <figcaption>২. পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে শেরপুর সদরের ৬ নম্বর চরের অনেক বাসিন্দার বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। গতকালের তোলা।    <strong>ছবি : কালের কণ্ঠ</strong></figcaption> </figure> <p style="text-align:justify"> </p> <hr /> <figure class="image"><img alt="দীর্ঘায়িত হতে পারে বন্যা পরিস্থিতি" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/07.July/08-07-2024/12_kaler-kantho--08-7-2024.jpg" width="1000" /> <figcaption>৩. বন্যার পানিতে ডুবেছে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার সিতাইঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।   <strong>ছবি : কালের কণ্ঠ</strong></figcaption> </figure> <p style="text-align:justify"> </p> <hr /> <figure class="image"><img alt="দীর্ঘায়িত হতে পারে বন্যা পরিস্থিতি" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/07.July/08-07-2024/13_kaler-kantho--08-7-2024.jpg" width="1000" /> <figcaption>৪. পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় হাঁটা পথ তলিয়ে গেছে। তাই এখন সেই পথে খেয়ানৌকায় যাতায়াত করছে গ্রামবাসী। গতকাল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মাতীরবর্তী নতুনপাড়া গ্রামে।   <strong>ছবি : কালের কণ্ঠ</strong></figcaption> </figure> <p style="text-align:justify"> </p>