<p>মাসুমা রহমান নাবিলা, অভিনেত্রী ও উপস্থাপক ‘গ্র্যান্ড কামব্যাক’ বিষয়টা তার সঙ্গে বেশ ভালোই যায়। এ বছরই প্রায় আট বছর পর চলচ্চিত্রে ফিরলেন ব্লকবাস্টার মুভি দিয়ে। এবার রান্নার অনুষ্ঠান ‘রাঁধুনীর রান্নাঘর : বাংলার সেরা ১০০ রেসিপি’ দিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর ফিরছেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়। এই কামব্যাক-টা ‘গ্র্যান্ড’ হবে তো? কী ভাবছেন নাবিলা?</p> <p><strong>প্রশ্ন : অনেক দিন পর উপস্থাপনায় ফিরলেন।</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> হ্যাঁ, মাঝে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা, চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের ব্যস্ততা মিলিয়ে উপস্থাপনাটা করা হচ্ছিলো না। তবে এবার উপস্থাপনায় ফিরতে পেরে খুব খুশি। জানেনই তো, এই কাজটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি।</p> <p><strong>প্রশ্ন : আপনাকে কিন্তু রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় খুব বেশি দেখা যায়নি...।</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> ঠিক। উপস্থাপনায় ফেরাটাকে রিমার্কেবল করতে চেয়েছিলাম। তাই একটু অন্য রকমভাবেই ফিরলাম। আর এই সুযোগে আপনার মাধ্যমে দর্শকদেরও জানাতে চাই- ‘এই নাবিলা কিন্তু আগের নাবিলা না, পুরোই ডিফরেন্ট!’ হাহাহা।</p> <p><strong>প্রশ্ন : তাই? তাহলে রান্নার অনুষ্ঠানটাও নিশ্চয়ই ভিন্ন কিছু?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> অনেকটাই ভিন্ন। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রান্না নিয়ে ‘সেরা রাঁধুনী’র প্রতিযোগীদের দেওয়া ১০০ রেসিপিতে একটি বই সাজানো হয়। সেই বইয়ের রেসিপিগুলোরই বলা যায় ডিজিটাল ভার্সন এই কুকিং শো। বইয়ের আমেজ আলাদা, তবে যুগের চাহিদার সঙ্গে মিলে ডিজিটাল ফরম্যাটেও রেসিপিগুলো রাখা জরুরি। যারা বইটিতে রেসিপি দিয়েছিলেন, মোটামুটিভাবে তারাই এই রেসিপিগুলো রান্না করে দেখিয়েছেন। আমাদের এখানে কিন্তু রেসিপি বুকভিত্তিক কুকিং শো তেমন একটা দেখা যায় না, বাইরের দেশে অহরহ হয়।</p> <p><strong>প্রশ্ন : আমাদের দেশে রেসিপি বই বলতে একটা বইয়ের নামই শুধু মাথায় আসে। অধ্যাপক সিদ্দিকা কবীরের ‘রান্না খাদ্য পুষ্টি’। তার রেসিপি নিয়েও টিভি অনুষ্ঠান হয়েছে। রাঁধুনীর বই এবং এই রান্নার অনুষ্ঠানটি আমাদের রান্নার জগতে কি সে রকম প্রভাব ফেলতে পারবে? আপনার কী মনে হয়?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> শ্রদ্ধেয় সিদ্দিকা কবীর ম্যাডাম আমাদের রান্নার জগতে কিংবদন্তি। উনার বইয়ের সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই আসে না। প্রায় সবার বাড়িতে উনার বই আছে। আমাদের রান্নার অনুষ্ঠানটি নিয়ে শুধু বলব দেশে ও দেশের বাইরে যারা বাংলাদেশি রান্না এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্বাদের প্রতি আগ্রহী, তারা অনেক উপকৃত হবেন অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। বাইরের দেশে বাংলাদেশি ক্যুইজিন ব্যাপারটা কিন্তু সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের রেসিপিগুলোর মধ্যে এখনো চলমান কিছু রেসিপি যেমন আছে, তেমনই এমন রেসিপিও আছে যেগুলো প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। তাই শুধু আমাদের দেশেই না, পুরো বিশ্বেই আমাদের ঐতিহ্যবাহী স্বাদটাকে ছড়িয়ে দিতে কিছুটা হলেও আমাদের অনুষ্ঠানটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।</p> <p><strong>প্রশ্ন : অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতে গিয়ে বাংলার খাবার নিয়ে আপনার ধারণায় কী কী পরিবর্তন এলো?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> পুরো বিষয়টি বেশ ইন্টারেস্টিং। কোভিডের সময় সবাই যখন ঘরে বন্দি, তখন ‘রাঁধুনী’র পক্ষ থেকে সেরা রাঁধুনীর ১৭ জন প্রতিযোগীর কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু রেসিপি চাওয়া হয়। উনাদের সঙ্গে গল্পচ্ছলে শুনেছি, সেই হতাশার সময়ে এই কাজটা তাদের আলাদা একটা মোটিভেশন দিয়েছে। আমি না তাদের কাজের মধ্যে, রেসিপিগুলোর মধ্যে সেই উদ্যমটা দেখেছি। বাংলাদেশের রান্না, বাংলার স্বাদ নিয়ে কাজ করতে তাদের এই স্পৃহা, তাদের সদিচ্ছা, ডেডিকেশন, যেটাই বলি... এগুলো আমাকে আমাদের রান্নার প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলেছে। বাংলাদেশি খাবারের যে এত বৈচিত্র্য রয়েছে, তা-ও নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম।</p> <p><strong>প্রশ্ন : নতুন কয়টা জিনিস শিখলেন?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> (মনে করার চেষ্টা করে) ১২০ থেকে ১২০টা তো হবেই! মজা করলাম। আসলে প্রতি এপিসোডেই কমবেশি কিছু না কিছু শিখেছি। আমাদের নানা অঞ্চলের খাবারের মজাটাই এমন যে, অঞ্চলভেদে একই রান্নার রেসিপি-স্বাদ অনেকটাই বদলে যায়। এই বৈচিত্র্যের অনেক কিছুই শিখেছি। আবার যে ১৭ জন রাঁধুনি এসেছিলেন একেক দিন একেকজনের কাছ থেকে টিপস নিয়েছি।</p> <p><strong>প্রশ্ন : এখন আপনিও বিভিন্ন ধরনের রান্নার প্রতি আরো আগ্রহী হয়েছেন বলে ধরে নিতে পারি?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> রান্না তো আমি আগে থেকেই করি। তবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা নানা স্বাদের রেসিপিগুলো সম্পর্কে জানাটা আমার কাছে একটি রান্নার কোর্স করার মতো এক্সপেরিয়েন্স বলে আমি মনে করি।</p> <p><strong>প্রশ্ন : এই প্রগ্রামে কাজ করার সময়ের কোনো প্রিয় মুহূর্তের কথা যদি শেয়ার করতেন।</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> (হেসে) আমি খুব ফুডি। তাই এই অনুষ্ঠানে আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল খাবারের স্বাদ নেওয়ার সেগমেন্টটা। আরেকটা সিক্রেট শেয়ার করি... আমার কিন্তু শ্যুটিংয়ের খাবার বলতে গেলে খাওয়াই হতো না। সব সময় রাঁধুনিরা যা রান্না করতেন সেই ডিশগুলোই মজা করে খেতাম। আবার অনেক সময় বাসায় হাজবেন্ডের জন্যও জোর করে খাবার প্যাক করে দিত।</p> <p><strong>প্রশ্ন : বাংলার ১০০ সেরা রেসিপি তো পেলাম, ১০০ রেসিপির মধ্যে নাবিলার কাছে সেরা রেসিপি কোনটি?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> কী বলেন? সবগুলোই তো সেরা। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব? আমি নিশ্চিত, দর্শকরাও দেখে এই বিষয়টায় একমত হবেন। তবে এই মুহূর্তে যদি কোনো একটা রেসিপির নাম বলতে বলেন, তাহলে যে রেসিপিটি দিয়ে এই দীর্ঘ শুটিং শুরু করেছিলাম তার নাম বলতে পারি। বুটের ডাল দিয়ে গরুর মাংস রান্না! উফ; এখনো স্বাদ লেগে আছে। সাথে ছিল পাঁচফোড়নে ভুনা খিচুড়ি। অসাধারণ!</p> <p><strong>প্রশ্ন : আর অভিনেত্রী নাবিলার রান্না করা সেরা রেসিপি?</strong></p> <p><strong>নাবিলা :</strong> সেরা কি না জানি না। বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়িতে আসা গেস্টদের জন্য প্রথম বানিয়েছিলাম শাহি টুকরা। ইফতার আইটেম ছিল সেটি। সবাই এত প্রশংসা করেছিল যে কী বলব। আর আমার মেয়ে আমার বানানো পাস্তার বিশাল ভক্ত। আমি একটা ব্রেড পিৎজা করি, সেটাও পছন্দ করে খায়। আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ‘রাঁধুনীর রান্নাঘর : বাংলার সেরা ১০০ রেসিপি’ অনুষ্ঠানটির জন্য ও আপনার জন্য রইলো শুভ কামনা।</p> <p>- আপনাকেও ধন্যবাদ। পাঠকদের বলব, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নাগুলোকে নতুনভাবে চিনতে, জানতে ও শিখতে আমাদের অনুষ্ঠানটি দেখুন। টেলিভিশনের পাশাপাশি মাছরাঙা টেলিভিশন ও রাঁধুনীর ইউটিউব চ্যানেলেও দেখা যাবে।</p>