<p>নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুনর্গঠনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা দাবি করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।</p> <p>আগামী পাঁচ বছরকে জাতীয় সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করে ড. ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামানের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। এতে প্রধান বিচারপতি, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, নাগরিক ও রাজনীতিকদেরও সম্পৃক্ত করার কথা জানানো হয়েছে।</p> <p>বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আমিনুর রহমান মজুমদার, বিশেষ আলোচক হিসাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. আবদুল্লাহ আল ইউসুফ (অব.)  ও লে. কর্নেল এস এম আইয়ুব (অব.) উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>অনুষ্ঠানে ‘সিপাহী-জনতার ঐক্যে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ছয় দফা প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা কাঠামোতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।</p> <p>প্রথম দফায় সেনাবাহিনীকে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে বলা হয়।</p> <p>দ্বিতীয় দফায় একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করতে বলা হয় যার চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি ড. মুহম্মদ ইউনূস ও ভাইস চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান হবেন। এই পরিষদে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ও নাগরিকরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে পুরাতন সংবিধান বাতিল এবং ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করবে। </p> <p>তৃতীয় দফায় নতুন সংবিধান প্রণয়নে দ্রুত গণপরিষদ গঠন ও নির্বাচন পরিচালনা এবং পরবর্তীতে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান তত্ত্বাবধান করার প্রস্তাব রাখা হয়।</p> <p>চতুর্থ দফায় দেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা তথা ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, আমদানি ও রফতানির লেনদেন সামরিক বাহিনীর মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।</p> <p>পঞ্চম দফায় দেশের সব উপজেলা পর্যন্ত স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন করে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি হামলাসহ  জননিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে তাৎক্ষনিক সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সহায়তা নিতে সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>ষষ্ঠ দফায় সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিবাজ ও দেশ বিরোধীদের চিহ্নিত করে তাদের শূন্যপদে সাবেক দেশপ্রেমিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করতে প্রস্তাব রাখা হয়।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্য ড. আমিনুর রহমান মজুমদার বলেন,‘ মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে যখন মানুষ খেতে পায়নি তখন শেখ পরিবারের লোকেরা সোনার মুকুট মাথায় দিয়েছেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবিপ্লব এবং এর ধারাবাহিকতায় আসে ৭ নভেম্বর।’</p> <p>আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘একজন উপদেষ্টা বলেছেন আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। রক্তের দাগ শুকায়নি অথচ উনি এসব কথা বলছেন। আরও কয়েকজন এসব কথা বলেছেন। এতে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। অসুস্থ, পঙ্গুদের খবর কেউ নেয় না, তারা বসে বসে এ সমস্ত কথা বলে।’ </p> <p>ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডক্টর আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ (অব.) বলেন, ‘বাংলাদেশের পরনির্ভরশীল মানসিকতা দূর করতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ দূরীকরণে সেনাসহ যাবতীয় বাহিনীর সংস্কার করতে হবে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘বড় একটি দলে স্বৈরাচারকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা ছাড়তে হবে। নির্বাচনের আগে দেশকে সংস্কার করে নিতে ওই দলকে অপেক্ষা করতে হবে। তারা নিজেদের সংস্কারে কেন মনোযোগী হচ্ছে না? তারা কি আগের স্বৈরাচার স্টাইলে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়?’</p> <p>জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ এর আহ্বায়ক হাসান আরিফ বলেন, ‘প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য বাহিনীকে রাষ্ট্রীয় কাজে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় দলমত ভেদাভেদ ভুলে সেনারা দেশের স্বার্থে কাজ করবে।’ </p> <p>আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর, নাগরিক পরিষদ আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, রাশেদুর রহমান, জাতীয় বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ডা. জহিরুল ইসলাম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ডা. নাবিল আহমদ, সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক সানোয়ারা খাতুন প্রমুখ।</p>