<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার স্ত্রী নিরামিষভোজী হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে আমি কোনো দিক থেকেই অন্যদের থেকে আলাদা মনে করিনি। খোলাখুলি বললে, প্রথম দেখায় তার প্রতি আমার কোনো রকম আকষর্ণ জাগেনি। উচ্চতায় মাঝারি; ববকাট চুল খুব ছোট নয়, খুব লম্বাও নয়। ফ্যাকাসে রুগ্ন-রুগ্ন ত্বক; চোয়ালের হাড় খানিকটা উঁচু; তার সম্পর্কে যা যা জানার দরকার ছিল সবই পেয়ে গেলাম তার ফ্যাকাসে বাদামি চেহারায়। আমি একটা টেবিলে তার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আমার টেবিলের দিকে আসার সময় তার জুতা লক্ষ করলাম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালো জুতা কল্পনায় যতটা সাদামাটা হতে পারে তার ভালো উদাহরণ দেখলাম তার পায়ে। তার হাঁটার ভঙ্গিও একদম নিজস্ব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> খুব দ্রুত নয়, খুব ধীরগতিতেও নয়। খুব বিশাল পদক্ষেপে নয়, খুব ঢঙের ক্ষুদ্র পদক্ষেপেও নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাহোক, তার মধ্যে বিশেষ কোনো আকর্ষণ ছিল না; আবার তার মধ্যে তেমন কোনো খুঁতও ছিল না। সুতরাং আমাদের দুজনের বিয়ে না হওয়ারও কোনো কারণ ছিল না। তার মধ্যে আমি কোনো রকম সতেজতা কিংবা আকর্ষণ খুঁজে পাইনি কিংবা বিশেষ কোনো পরিশীলিত বিষয়ও দেখতে পাইনি তার মধ্যে। হয়তো সে কারণেই তার নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিত্ব আমার সঙ্গে একেবারে মাটিবর্তী হয়ে মিশে গেছে। তাকে জয় করার জন্য বুদ্ধিবৃত্তির ঝোঁকের ভান করার দরকার হয়নি। কিংবা যেসব ফিটফাট কেতার মানুষেরা ফ্যাশন ক্যাটালগের জন্য পোজ দিয়ে থাকে তাদের সঙ্গে সে আমাকে তুলনা করে থাকতে পারলে দুশ্চিন্তা করারও কিছু ছিল না। আমাদের সাক্ষাতের সময় দু-একবার আমার বিলম্ব হয়ে থাকলেও সে কখনো অভিমান করেনি। বয়স বিশের কোঠার মাঝামাঝি পৌঁছতে পেটে চর্বি জমা শুরু করা, হাড্ডিচর্মসার পা এবং আমার সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও হৃষ্টপুষ্ট না হওয়া বাহু, আমার শিশ্নের আকার নিয়ে চলমান হীনম্মন্যতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসবের কোনো কিছুতেই তার তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমার অস্থির হওয়ার কিছু ছিল না বলে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারতাম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জীবনের মধ্যম পন্থার প্রতিই আমার সব সময়ের টান ছিল। স্কুলে আমার সমবয়সীদের ওপর সুযোগ নেওয়ার চেয়ে যারা আমার চেয়ে দু-তিন বছরের ছোট ছিল কিংবা আমি যাদের পালের গোদা হতে পারতাম শুধু তাদের ওপর খবরদারি করা ছিল আমার পছন্দ। পরবর্তীতে যে কলেজে আমার প্রয়োজনের তুলনায় বড় কোনো বৃত্তি পাওয়া যেতে পারে সেখানেই আবেদন করার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমার ওপরে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পরিশ্রমের সঙ্গে পালন করার বিনিময়ে যেখানে মোটামুটি ভদ্রগোছের মাসিক বেতন পাওয়া যেতে পারে তেমন একটা চাকরিতে স্থির হয়েছি। বিশেষ করে সে কম্পানির ক্ষুদ্র আকার থেকেই বোঝা গিয়েছে, এখানে আমার সাধারণ দক্ষতার মূল্যায়ন হতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুতরাং জগতের একজন সাদামাটা নারীকে আমি বিয়ে করব, সেটাই তো স্বাভাবিক। আর যারা দেখতে সুন্দর, বুদ্ধিমতী, চোখে লাগার মতো সংবেদনশীল, ধনী পরিবারের মেয়ে যারা তাদের বিয়ে করলে তারা শুধু আমার যত্নে সাজানো অস্তিত্বটাই ছিন্নভিন্ন করে দিত। অন্যদিকে আমার প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে চলতে সে পুরোপুরি আমার সাধারণ স্ত্রী হয়ে উঠেছে; কোনো কিছুতেই তার বিরক্তিকর রকমের চপলতা প্রকাশ পায়নি। ভাত, স্যুপ এবং নিয়মিতই একটু মাছের তরকারি তৈরি করার জন্য সে প্রতিদিন ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠত। একদম কিশোরীবেলা থেকে ছোটখাটো খণ্ডকালীন কাজ করে সে পরিবারের উপার্জনের সঙ্গে নিজের উপার্জন যোগ করত। এক বছর যে কম্পিউটার গ্রাফিক্স কলেজে পড়েছিল সেখানেই সে সহকারী শিক্ষকের চাকরি শুরু করে। একটা মানহুয়া কমিক প্রকাশনার সঙ্গে উপচুক্তিতে তাদের স্পিচ-বাবল লেখার কাজ করে; কাজটা সে বাড়ি থেকেই করতে পারত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সে খুব কম কথা বলত। আমার কাছে তার তেমন কিছু চাওয়ার ছিল না বললেই চলে। আমি যত দেরি করেই বাড়ি ফিরতাম না কেন তার জন্য সে কখনোই ঝগড়া করার চেষ্টা করত না। এমনকি আমাদের দুজনের ছুটির দিন কখনো এক হয়ে গেলেও দুজনে একসঙ্গে কোথাও বাইরে যাওয়ার কথা বলবে, এমনটা তার কখনো মনেই হয়নি। আমি বিকেলবেলা রিমোট হাতে টিভি রুমে আলস্যে সময় কাটাতাম; নিজের দরজা-বন্ধ রুমের মধ্যেই আবদ্ধ থাকত সে। খুব সম্ভবত সে বই পড়ে সময় কাটাত। বই পড়াই ছিল তার একমাত্র শখ। কী কারণে সে শুধু পড়ার মধ্যেই ডুবে থাকত সেটা আমার কাছে একদম অপরিমেয় ছিল। অবশ্য আমার জন্য বই পড়া ছিল খুব নিরানন্দের কাজ; বইয়ের মলাটের নিচে কী আছে, দেখার মতো ধৈর্য আমার কখনোই হয়নি। শুধু খাওয়ার সময় রুমের দরজা খুলে নীরবে বাইরে এসে খাবার তৈরি করত সে। নিশ্চয়ই এ রকম স্ত্রী এবং এ রকম জীবনযাপন মানেই হলো, আমার দিনের মধ্যে কোনো মুহূর্তেই একটু চমক নেই। অন্যদিকে যে স্ত্রীদের বন্ধু কিংবা সহকর্মীর কাছ থেকে সারা দিন যখন-তখন ফোনকল আসতেই থাকে, কিংবা ন্যাকামির কারণে ক্ষণে ক্ষণে স্বামীর সঙ্গে চিৎকার করা ঝগড়া শুরু হয়ে যায়, তেমন বউ পেলে এবং এভাবে সে ক্লান্ত হয়ে পড়লে আমি বরং কৃতজ্ঞ হতাম।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু একটা বিষয়েই আমার স্ত্রী অস্বাভাবিক ছিল : সে ব্রা বা কাচুলি পরতে চাইত না। কৈশোর সবে পার হয়েছি; সে সময় তার সঙ্গে অভিসারে যাওয়া শুরু আমার। আমি প্রায়ই তার পিঠে হাত দিয়ে দেখতাম, তার সোয়েটারের নিচে ব্রার ফিতা টের পাওয়া যায় কি না। বিষয়টার অর্থ বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আমার উত্তেজনা তৈরি হতো। সে আমাকে কিছু বলতে চায় কি না বোঝার জন্য, তার মনোভাব বোঝার জন্য তার দিকে নতুন দৃষ্টিতে দু-এক মিনিট তাকিয়ে থাকতাম। আমার পর্যবেক্ষণের ফলাফল হলো, আসলে সে আমাকে কোনো রকম ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টাই করেনি। যদি না দিয়ে থাকে, তাহলে তার এ রকম চালচলনের মানে কি শুধু তার আলস্য নাকি সম্পর্কের বিষয়ে তার মাথাব্যথাই তেমন ছিল না? কোনো সমাধান খুঁজে পাইনি আমি। এমনকি তার স্তনের গড়ন এমন গোলগাল ছিল না যে ব্রা না পরলেও চলে। আমার মনে হতো, সে তো পুরু প্যাডযুক্ত ব্রা পরলেই পারে, যাতে পরিচিতজনদের সামনে আমার মুখ রক্ষা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনকি গরমের সময় ব্রা পরতে আমি যখন তাকে রাজি করাতাম তখনো বাড়ি থেকে বের হওয়ার কয়েক মিনিট পরই হুক খুলে ফেলত সে। খুলে ফেলা হুক তার পাতলা ও হালকা রঙের টপসের নিচ থেকে পরিষ্কার দেখা যেত; কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে সামান্যতম মাথা ঘামাত না সে। এ রকম গুমোট গরমে ব্রার ওপরে গেঞ্জি পরতে আমি তাকে বকা দেওয়ার মতো করে বারবার বলেছি। নিজের মতামতের পক্ষে সে শুধু বলত, ব্রা তার সহ্য হয় না; কারণ ব্রা তার স্তনের ওপর শক্ত হয়ে চেপে বসে থাকে। তার যুক্তি হলো, আমি যেহেতু নিজে ব্রা পরি না, তাহলে আমি বুঝতে পারব না ব্রা পরা কতটা আটকাবস্থার  মতো। তার পরও যেহেতু আমি জানতাম, অন্য মহিলাদের ব্রার বিপক্ষে কোনো কথা নেই সেহেতু তার এই অতিমাত্রার সংবেদনশীলতার প্রতি এক পর্যায়ে আমার সন্দেহ জাগতে থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্য সব দিক থেকেই আমাদের বিবাহিত জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। আমাদের বিবাহিত জীবন পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পথে প্রায়। দাম্পত্যজীবন শুরু করার জন্য আমরা যেহেতু একদম পাগলপারা ছিলাম না সেহেতু বিবাহিত জীবন বিষিয়ে তোলার মতো ক্লান্তি আর একঘেয়েমির পর্যায়ে পড়ব, তেমন আশঙ্কাও আমাদের ছিল না। আমাদের নিরাপদ একটা জায়গা তৈরি করার আগ পর্যন্ত আমরা সন্তান নেব না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং গত শরতে সেটাও সম্ভব হয়েছে বলে একমাত্র প্রত্যাশা ছিল, কখন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ডাক শুনতে পাব। গত ফেব্রুয়ারির এক দিন পর্যন্ত সব কিছৃ এমনই চলছিল। সেদিন হঠাৎ দেখলাম, আমার স্ত্রী দিনের বেলায় রাতের গাউন পরে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে। আগে কখনো কল্পনাও করিনি, আমাদের বিবাহিত জীবন এমন সাংঘাতিক একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। (আংশিক)</span></span></span></span></p>