<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপশাসন নিয়ে আমেরিকার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক জন স্টেইনবেকের উক্তিটি ছিল এ রকম : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখানে একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা চোখের পানিতেও আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন না। এখানে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যা নিন্দার সব ভাষা অতিক্রম করে গেছে। এখানে একটি ব্যর্থতা ঘটেছে, যা আমাদের সব সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> স্টেইনবেকের এই কালজয়ী উক্তিটি যদি বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও নিন্দিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইস্যুতে প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে কি তা বেমানান কিছু হবে? তবে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নিয়ে ১৭ অক্টোবর বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইনে একটি ঢাউস প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটির প্রতিটি প্যারা চোখের লোনা জলে ভেজা। এটার শিরোনাম : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যালোন ইন দ্য ডার্ক : দ্য নাইটমেয়ার অব বাংলাদেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স সিক্রেট আন্ডারগ্রাউন্ড প্রিজন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (অন্ধকারে একা : বাংলাদেশের গোপন ভূগর্ভস্থ কারাগারের দুঃস্বপ্ন)। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আয়নাঘর থেকে কয়েকজন বন্দি মুক্তি পান। তাঁদের জবানিতে প্রতিধ্বনিত হয়েছে আয়নাঘরের বুক হিম করা নির্যাতনের আবহ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটাই আয়নাঘর, যেখানে রাজনৈতিক বন্দিদের ভয়ে পাগল হয়ে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আটকে রাখা হতো। শেখ হাসিনা এখন আর গদিতে নেই। তাই আয়নাঘর থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন সৌভাগ্যবান তাঁদের হৃদয়বিদারক কাহিনিগুলো এই গ্রহবাসীর জন্য মেলে ধরতে পেরেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মীর আহমেদ কাশেম আরমানের কথাই ধরুন। ভূগর্ভস্থ জানালাহীন ছোট প্রকোষ্ঠে জীবনের আট বছর কাটিয়েছেন তিনি। তাঁর অন্ধকার রাত কখনোই শেষ হতো না। কারণ রাত-দিনের পার্থক্য বোঝা তাঁর পক্ষে ছিল বেশ কঠিন। ফজরের আজানের ক্ষীণ স্বর কানে এলে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন। নামাজে দাঁড়ালেও তা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিত প্রহরীরা। হাতকড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে অন্য রুমে নেওয়ার সময় তাঁর মনে হতো, এটাই বোধ হয় আমার আখেরি দিন। হয়তো বা তাঁর লাশ মিলবে নদীতে অথবা কোনো এঁদো গর্তে। কপাল ভালো, তাঁকে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার গোপন কারাগারে প্রাণ খোয়াতে হয়নি। তাঁকে রাজধানীর বাইরে একটি পতিত জমিতে বিশাল অনুগ্রহ করে জীবিত ছেড়ে দেওয়া হয়। আরমান তখনো জানতেন না যে শেখ হাসিনা আর গদিতে নেই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী ব্যারিস্টার আরমানকে ২০১৬ সালে অপহরণ করে। অথচ তাঁর নামে অপরাধের দায় ছিল না। টগবগে তরুণ আরমান, আট বছরেই তিনি বেশ বুড়িয়ে গেছেন, মাথার চুলও পাতলা হয়ে এসেছে। তাঁর সুশোভন চাপদাড়িও আর নেই। থুতনিতে কয়েকটি কাঁচা-পাকা দাড়ি ঝুলছে। স্ত্রী ও দুই সন্তানের চিন্তায় তিনি ছিলেন পাগলপ্রায়। সব সময় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতেন : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুনিয়াতে পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা না হলে অন্তত বেহেশতে আমার পরিবারের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দিয়ো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘরের অগণিত বন্দি বেঘোরে প্রাণ হারান। কেউ কেউ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকারও হন। আয়নাঘর ছিল সেনাবাহিনীর ডিটেনশন সেন্টার। এটার কোড নেম ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। ৫ আগস্টের পর আয়নাঘরের নির্যাতনের পরেও কোনো মতে বেঁচে যাওয়া কয়েক ব্যক্তি মুখ খুলেছেন। তবে হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে যাঁরা আয়নাঘরের দুঃসহ নির্যাতন ভোগের পর মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁরাও এই ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস করেননি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘর মূলত অনেক হতভাগ্যের নিজেদের শেষ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পরিবারগুলোর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অজানা কাহিনিতে ঠাসা। বিশেষত ৫ আগস্ট সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর একজন জানতে পারলেন, তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী দীর্ঘ অপেক্ষার পর কয়েক দিন আগে আরেকজনকে বিয়ে করেছেন। স্ত্রী ধরেই নিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী আর বেঁচে নেই। আরেকজন জানতে পারলেন, তাঁকে মুক্ত করতে বিভিন্নজনের দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে তাঁর বাবা মারাই গেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লেখ্য, জোরপূর্বক গুম করা ছিল শেখ হাসিনার নেওয়া কৌশলগুলোর অন্যতম। এ অপচেষ্টায় তাঁর অনুগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে অপহৃত শত শত মানুষের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ কোনো মন্তব্য করার জন্যও অনেককে আয়নাঘরে যেতে হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘরে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা কত, তা এখনো অজানা। তবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বহু স্বজন আজও তাঁদের ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছে। তাদের দাবি, নিখোঁজ স্বজনদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক, আর না পাওয়া গেলে গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা হোক।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিখোঁজ স্বজনের অপেক্ষায় থাকা এমন ব্যক্তিদের একজন তাসনিম শিপরা। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কী ঘটেছে, আমরা সেই জবাব চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তাসনিম জানান, তাঁর চাচা বেলাল হোসেন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন। সম্ভবত তিনি আর এ দুনিয়ায় নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক বন্দিদের তিনজনকে আয়নাঘরের একটা ছবি আঁকার অনুরোধ জানিয়েছিল দ্য টাইমস। তাঁদের আঁকা ছবিতে দেখা যায়, একটা লম্বা করিডর। আধাডজন কক্ষ। একটি অন্যটি থেকে দূরে, তবে মুখোমুখি। করিডরের দুই প্রান্তে শৌচাগার। একটি দাঁড়িয়ে ব্যবহারের, অন্যটি বসার। প্রতিটি কক্ষে ছিল একটি বড় এক্সস্ট ফ্যান। এমন ফ্যান থাকার কারণ, নিরাপত্তারক্ষীদের আলাপ যাতে শোনা না যায় এবং বন্দিদের মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তোলা যায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গোপন বন্দিশালায় বিরামহীন যন্ত্রণা ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। সাবেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা আযমীকেও দৃশ্যত তাঁর বাবার কারণে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমান আযমী আট বছর বন্দি ছিলেন। আযমীর অনুমান, ওই কয়েক বছরে অন্তত ৪১ হাজারবার তাঁর চোখ বাঁধা এবং হাতকড়া পরানো হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মারুফ জামান। ২০১৯ সালে তিনি আয়নাঘর থেকে ছাড়া পান। এর আগে এ বন্দিশালায় এক বছরের বেশি সময় ছিলেন তিনি। মারুফ জামান ও মুক্তি পাওয়া অন্য বন্দিরা বলেন, তাঁরা বন্দি অবস্থায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে থাকার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। কেননা ভোরবেলায় সেখানে কুচকাওয়াজের শব্দ শুনতেন তাঁরা। জানতেন, ধারেকাছেই কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন আছে আর সেখানকার জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক। সেখান থেকে প্রতি শুক্রবার ভেসে আসত বাচ্চাদের গানের সুর।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে তাঁর ভারতীয় স্বার্থরক্ষার বিষয়ে সমালোচনা করতেন মারুফ জামান। আয়নাঘরে জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁর মুখে অনবরত ঘুষি মারা হতো বলে জানান তিনি। এতে তাঁর দুটি দাঁত পড়ে যায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>