<p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শতবর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে সেই মানুষটির সামাজিক ভূমিকা আমরা স্মরণ করি। তাঁর রেখে যাওয়া সামাজিক অবদান স্মরণ করার মধ্য দিয়ে আগামী দিনের পথচলার ক্ষেত্রে আরো প্রাসঙ্গিক করে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। তেমনি শতবর্ষে দাঁড়িয়ে আজ আমরা এমন একজন সাহিত্যিককে স্মরণ করছি, যিনি ভাবনা, ভাষা, অনুভবের গভীরতা, প্রকাশভঙ্গি, জীবনবোধ, অভিজ্ঞতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক বোধ-বিশ্বাসে অনন্য। তিনি সমরেশ বসু।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কথাসাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম কথাসাহিত্যিক হলেন সমরেশ বসু। প্রথাগত বিদ্যা বা দারিদ্র্য যে মহান প্রতিভাকে কোনো দিন আটকে রাখতে পারে না তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ সমরেশ বসু। অবিভক্ত বাংলার রাজনগরে এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম। পিতা মোহিনীমোহন বসু তাঁর নাম দিয়েছিলেন সুরথনাথ। পরে তা সমরেশ বসুতে পরিণত হয়। ছোটবেলা থেকে বন্ধনহীন, চঞ্চল সমরেশের পড়াশোনার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। লেখাপড়া শিকেয় তুলে ঢাকার বিস্তীর্ণ শহরতলির আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াতেন সব সময়। মাত্র ১২ বছর বয়সে ৯ বছরের এক বালিকার প্রেমে পড়েন। ছেলের এই অকালপক্বতার কথা জানতে পেরে বাবা মোহিনীমোহন তাঁকে বড় দাদা মন্মথনাথের কাছে নৈহাটিতে পাঠিয়ে দেন। দাদা সেখানে স্কুলে ভর্তি করে দিলেও সমরেশের আচরণের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় না; এবং তিনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ফলস্বরূপ তাঁকে আবার ঢাকায় নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সমরেশের এমন আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বাবা মোহিনীমোহন তাঁকে ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কাজে লাগিয়ে দেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু ছোটবেলা থেকেই যিনি নিজেকে যাবতীয় বন্ধন থেকে মুক্ত করে রেখেছেন তাঁর পক্ষে মিলের বাঁধাধরা কাজ কিভাবে করা সম্ভব? তাই সেখানেও মন বসল না, আবার ফিরে গেলেন দাদার কাছে, নৈহাটিতে। সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পরই সমরেশ আক্রান্ত হলেন ম্যালেরিয়া ও জন্ডিসে। কিন্তু দাদা ছিলেন তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন। এ রকম অবস্থায় বন্ধু দেবশঙ্করের স্বামীবিচ্ছিন্না দিদি গৌরীর সেবায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং এই সূত্র ধরেই একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। গৌরীদেবী ছিলেন সমরেশের চেয়ে চার বছরের বড় এবং ব্রাহ্মণকন্যা। তা সত্ত্বেও সমাজের সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি গৌরীদেবীকে নিয়ে চলে যান আতপুরের বস্তিতে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভাব-অনটনের মধ্যে তাঁদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। সমরেশ বসু তখন পুরোপুরি বেকার, তাই টাকার জন্য তাঁকে অনেক নীচু কাজও করতে হয়েছে। কখনো সবজি বিক্রি করেছেন, আবার কখনো সাহেব-বাবুদের কোয়ার্টারে কোয়ার্টারে ডিম ফেরি করে বেড়িয়েছেন। নিজেই বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সপ্তাহে তিন-চার দিন আমাদের দুজনের খাওয়া জুটত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এরপর ১৯৪২ সালে তাঁর পরিচয় ঘটে কমিউনিস্ট নেতা সত্যপ্রসন্ন দাশগুপ্তর সঙ্গে। তিনি সমরেশকে চটকল এলাকায় কিছু কাজের দায়িত্ব দেন। সত্যপ্রসন্নর সংস্পর্শে আসার পরই তিনি কমিউনিস্ট ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করেন। সত্যবাবু সমরেশকে ইন্সপেক্টরেট অব স্মল আর্মসের ড্রয়িং অফিসে চাকরি দেন। ফলে অভাব যেমন কিছুটা কমে, তেমনি রাজনীতির আঁচ গায়ে এসে লাগে। এরপর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন। এই সময় সত্য মাস্টার এবং উদয়ন পাঠাগারের হাতের লেখা উদয়ন পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সমরেশ বসুর জীবন এক নতুন পথে বাঁক নেয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৪৪ সালে তিনি ও গৌরীদেবী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। কমিউনিস্ট পার্টির ঋণের কথা স্বীকার করে পরে সমরেশ বসু নিজেই বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসার পরই আমার চারপাশের জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে দৃষ্টি সজাগ হয়। আমার অভিজ্ঞাতর প্রসার ঘটে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিন্তু পার্টির প্রতি এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ছেদ পড়ে অল্প সময়েই। কারণ বোমা বিস্ফোরণে হঠাৎ সত্যপ্রসন্ন দাশগুপ্তর মৃত্যু ঘটে। তিনি মনে করেছিলেন, এটা কমিউনিস্ট পার্টির অন্তঃকারসাজি; এবং এই ঘটনায় পার্টির অন্য নেতাদের প্রতি তিনি ঘৃণায় ফেটে পড়েন। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁর চাকরিও চলে যায়। এরপর নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সাহিত্য রচনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কারাগারে বসেই লিখতে শুরু করেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উত্তরঙ্গ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সমরেশের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস এটি। উপন্যাসের উপাদান লেখক সংগ্রহ করেছিলেন ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির ইন্সপেক্টরেট অব স্মল আর্মসে চাকরি করার সময় (১৯৪৩-৪৯)। তা রূপ পেয়েছিল প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকার সময়। উপন্যাস লিখতে তিনি যাঁর কাছ থেকে বেশি সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি হলেন ৯০ বছর বয়স্ক নবকুমার দাস। তিনি গত শতকের ষষ্ঠ দশক থেকে একের পর এক চটকল তৈরি হতে দেখেছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি চটকলের মিস্ত্রি হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন, আজীবন মিস্ত্রি ছিলেন। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নয়নপুরের মাটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সমরেশের প্রথম লেখা উপন্যাস। সমরেশ নিজে উপন্যাসটির ভূমিকায় বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নয়নপুরের মাটিতে একটা লাইন আছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আহা! বাঁধা বীণার তারে বেসুর কি গভীর!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সেই সুর বাঁধারই প্রথম উন্মাদনা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নয়নপুরের মাটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। আমার প্রথম লেখা উপন্যাস। আমার লেখা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উত্তরঙ্গ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর বহু পূর্বে (১৯৪৬ সালে) এ বই আমি লিখেছি। অর্থাৎ সাহিত্য আসরের দরজার চৌকাঠটা তখন আমি দূর থেকে উঁকি মেরে দেখেছিলাম। এখন দরজার কাছে (বোধ হয় চৌকাঠটা পেরিয়ে?) এসেছি। ইচ্ছেটা আস্তে আস্তে আসরের মাঝখানে গিয়ে বসি। সুর বাঁধতে গিয়ে হয়তো পেরিয়ে গিয়েছে কোথাও তালের চৌহদ্দি, দিক-পাশ না ভেবে সে আপনার মনে এগিয়ে গেছে। একে যদি বেসুর বলা যায়, তবে বলি, জীবনের সুর-তালভঙ্গের বেদনাই না বার বার মানুষকে নতুন করে সুর বাঁধতে শিখিয়েছে। প্রায় বছর খানিক ধরে উপন্যাসটির অংশ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিচয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ছাপা হয়েছিল। নানান কারণে তা মাঝ পথেই থেমে যায়, অনেক দিন পরে আবার বই আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। এতে যদি কেউ ক্ষুণ্ন হন তো, সে দোষ আমারই। সাধারণ নিয়মে আর কাহিনীর চুম্বকটা হাজির করলাম না, ওটা পাঠকের হাতেই থাক। নতুন বলে ভূমিকা লেখার লোভ যতই থাক </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নয়নপুরের মাটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র গুণ ও স্বাদ যদি ভাল না হয়। তবে জানি সে বন্ধ্যাই থাকবে। সে বেদনাও আমার (১৪ই শ্রাবণ ১৩৫৯)।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর সমরেশের সাংসারিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। বিধান রায় বন্দি থাকাকালে যে ১৫০ টাকা দিতেন তা বন্ধ হলো। পার্টির পক্ষ থেকেও কোনো সুবিধাজনক ফল পাওয়া গেল না। এর মধ্যেই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উত্তরঙ্গ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাস প্রকাশ পেল। বইটির দাম ছিল তিন টাকা আট আনা। প্রথম উপন্যাস প্রকাশের দিন দপ্তরির বাড়ি থেকে ১৫টি বই নিয়ে নৈহাটিতে গেলেন, নৈহাটির </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বসন্ত কেবিনে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বসে বন্ধুদের কাছে বিক্রি করলেন সেই সব বই, পেলেন ৫২ টাকা। শোধ করলেন এক বছরের বাড়িভাড়া।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয় উপন্যাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিটি রোডের ধারে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তারপর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্রীমতী কাফে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গঙ্গা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপন্যাস সমরেশকে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গঙ্গা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সম্পর্কে সাগরময় ঘোষকে এক পত্রে সমরেশ লিখেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গঙ্গা উপন্যাসের ব্যাপারে, আমি যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">detail</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> দেবার চেষ্টা করেছি, সেটা অনেকের পছন্দ হয়নি, তার কারণ আর কিছুই নয়, আমি শৌখিন মজদুরির দুর্নামটা কাটাবার চেষ্টা করেছিলাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্ধু দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায় লিখেছেন তারও আগের কথা, যখন সুরথনাথ হয়েছেন সবে সমরেশ, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনে পড়ছে ও একটা নীলচে রঙের ডায়েরির মতো বাঁধানো খাতায় আর একটা নভেল লিখেছিল, নাম দিয়েছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অশ্রুমুখী অন্তরাগ্নি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তাও কালের গর্ভে কোথায় চলে গেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সমরেশ নিজেও তাঁর লেখা সম্পর্কে এ কথা স্বীকার করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্ধু জয়নাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গল্প লেখার সময়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার এ গল্পটা হবে অতীতের পুনরাবৃত্তি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে একটা গল্প লিখেছিলাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তরণি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পত্রিকায়। কয়েকটা গল্পই লিখেছিলাম। তার মধ্যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাতকড়ি মাসী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয়নাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গল্পটা আর খুঁজে পাইনি। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাতকড়ি মাসী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কে ভুলে থাকতে পারলেও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয়নাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কে ভুলতে পারিনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথম গল্প সংকলন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মরশুমের একদিন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুণিন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। গল্পটি দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর পার্টির বিরাগভাজন হন। পার্টির সঙ্গে ক্রমে সমরেশের দূরত্ব বাড়তে থাকে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমরেশ বসুর লেখা প্রচলিত ধারার বাইরে, তাঁর চরিত্রদের জীবন গতানুগতিক নয়, বেশ পরীক্ষামূলক আঙ্গিক, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সঙ্গে শ্রেণিহীন মানুষের ভিড়টা দেখা যায়, পরকীয়া প্রেমকে একটা অন্য মাত্রা দেওয়া যেন তাঁর লেখার মূল রহস্য। সমরেশ বসুর লেখা বিশ্বপরিক্রমা শেষে মনে হয়, এত গ্লানি-রিক্ততা ও অন্ধকার সত্ত্বেও জীবনের মতো রহস্যময় আর কিছুই নয়। মাটি ও মানুষ, অবলা প্রাণীর অজেয় ও অফুরন্ত প্রাণশক্তির ওপর অগাধ আস্থা পুনর্জন্ম দান করে, সেই সঙ্গে সম্ভাবনা নির্মাণ করে নতুন জন্মের, নতুন উৎস নির্মাণের। সমরেশের ভাষা-শব্দাবলি নিয়ে সচেতন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যতখানি না ধরা পড়েছে, তার চেয়ে লেখার শরীরে জীবনের ভাবমাধুর্য ফুটে উঠেছে, তিনি জীবনের তলানিটুকু ছেঁকে নিংড়ে লেখার মূল্যবোধে ও নৈতিকতায় প্রতিস্থাপন করেছেন। আসলে তাঁর সব রচনা, সব সাহিত্যকর্ম তাঁর জীবনযাপনের অঙ্গ। তাঁকে উত্কণ্ঠিত করে তুলত ব্যক্তির বিপন্নতা। নিজের জীবনের সংকটের মধ্য দিয়েই উপলব্ধি করতেন সেই বিপন্নতা, আর পর্বে পর্বে তা-ই প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর রচনায়। তৃতীয় পর্বে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টানাপড়েন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খণ্ডিতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিংবা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহাকালের রথের ঘোড়া</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আপাত দৃষ্টিতে নতুন পর্বের রচনা মনে হলেও মগ্ন পাঠক অবশ্যই আবিষ্কার করেন, জীবন ও সাহিত্যের বন্ধন সেখানেও শিথিল হয়নি। জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়েও তাঁর সেই ফেলে যাওয়া স্থান পূর্ণ হলো কি না, এই কথাটিই হয়তো ভাবার। সৃষ্টিকর্মের আবহে-আবেগে-বিতর্কে প্রাণবন্ত করে রাখা বাংলা সাহিত্যের জগতে কম কথা নয়। খুব কৃতী লেখক হলেই তা হয় না, তার জন্য গভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয়। এমন একজন লেখক হতে হয়, যিনি নিজের লেখা দিয়েই পাঠকের প্রত্যাশা সমানে নতুনভাবে তৈরি করে নিতে পারেন। একমাত্র তা হলেই তিনি পারেন এত দিন ধরে প্রাসঙ্গিক থাকতে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্যসূত্র ও ঋণস্বীকার : নবকুমার</span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বসু, আনন্দবাজার পত্রিকা, বেঙ্গলি গাইডেন্স ডট কম, মনোমৌসুমি ডট কম, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রজাপতি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার কথা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমরেশ বসু, আনন্দ পাবলিশার্স, সমরেশ বসু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহাকালের রথের ঘোড়া</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কানাইলাল মন্ডল, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভিন্ন ব্লগ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>