<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিক্ষার নানা সংস্কার ও অব্যাহত উন্নয়নের জন্য একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। এই কমিশনটি গঠনের উদ্দেশ্য হবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও অগ্রগতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা এবং নানা ধারা ও স্তরের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করা। এই শিক্ষা কমিশন একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, যার প্রধান কাজ হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং শিক্ষার প্রতিটি স্তরের জন্য সমন্বিত নীতিমালা তৈরি। বিজ্ঞজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে কেমন হবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্থায়ী শিক্ষা কমিশনটি। নিচে একটি আদর্শ স্থায়ী শিক্ষা সংস্কার কমিশনের গঠন, কার্যাবলি এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা হলো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. স্থায়ী শিক্ষা সংস্কার কমিশনের জন্য একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর কাঠামো নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কমিশনের কাঠামোকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমত, কমিশনের প্রধান হিসেবে একজন চেয়ারপারসন থাকবেন, যিনি অবশ্যই শিক্ষাবিজ্ঞানের, বিশেষ করে শিক্ষার কোনো একটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং যাঁর সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে। এর পাশাপাশি পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে থাকবেন শিক্ষার নানা স্তরের ও বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা। দ্বিতীয়ত, কমিশনকে বিভিন্ন শিক্ষাস্তর এবং বিষয়ভিত্তিক বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা,  মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক ও গণশিক্ষা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন, নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, ডিজিটাল ও অব্যাহত শিক্ষা। তৃতীয়ত, শিক্ষাক্ষেত্রের আরো উন্নয়নের জন্য কমিশনের পরামর্শক বোর্ড থাকবে, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিনিধি থাকবেন এবং শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সমবায়ে পরামর্শক পরিষদ তৈরি করতে হবে, যাতে নীতিনির্ধারণে তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া যায়। চতুর্থত, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে কোনো নীতি বা পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার আগে অংশীজনের, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফল বিচার-বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="প্রত্যাশিত শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা" height="271" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/15-10-2024/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="321" />২. কমিশনের প্রধান কাজগুলো কী হতে পারে, সেটিও আগেভাগে নির্ধারণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে একটি স্থায়ী শিক্ষা সংস্কার কমিশনের প্রধান কাজগুলো হতে পারে : ক. শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও পর্যালোচনা করা। স্থায়ী কমিশন নিয়মিতভাবে দেশের শিক্ষানীতির পর্যালোচনা করবে এবং শিক্ষা খাতে উদ্ভূত নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলায় মানানসই নীতিমালা প্রণয়ন করবে। শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় কমিশন আর যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবে, সেগুলো হলো শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার নানা ধারায় সমতা বিধান ও শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। খ. শিক্ষা কমিশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে শিক্ষাব্যবস্থার মান পর্যবেক্ষণ ও  মূল্যায়ন করা এবং শিক্ষার্থীদের ফলাফল ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষায় তাদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা। কমিশন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত শিক্ষার মান ঠিক আছে কি না, তা কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে। গ. শিক্ষা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ অব্যাহত কাজটি হলো শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং শিক্ষার বাজেট পরিকল্পনা করার পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের পরিকল্পনা করা। কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষা খাতে স্থায়ী উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হবে। এটি বিশেষভাবে প্রয়োজন, যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। শিক্ষা খাতে সুষ্ঠু অর্থায়ন এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দে কমিশন নীতিমালা তৈরি করবে। আর শিক্ষার প্রাণশক্তি শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণব্যবস্থা প্রবর্তনের নিয়ম-নীতি করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩. দেশ ও জনগণের কাছে কমিশনের সব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা ছাড়া এই স্থায়ী শিক্ষা সংস্কার কমিশনটি গঠনের সময় এর পরিচালক এবং পরিচালনা পরিষদ ও পরামর্শক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন ও নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ দিক বিবেচনা করা যেতে পারে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ, জনমত গ্রহণ এবং কমিশনের কাজের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। অব্যাহত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কমিশন একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তাদের কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা দিক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৪. এই শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমেই শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান যুগে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য কমিশন নতুন নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে শিক্ষায় প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে। যেমন ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে শেখার জন্য বিশেষায়িত নানা প্ল্যাটফরমের উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। এই স্থায়ী কমিশন একদিকে ডিজিটাল শিক্ষার প্ল্যাটফরম এবং অব্যাহত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে অনলাইন শিক্ষার সম্প্রসারণে কাজ করবে; অন্যদিকে কমিশন বিভিন্নমুখী গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণাকে উৎসাহিত করবে, যা শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫. শিক্ষার নীতিমালার স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। স্থায়ী শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যকে সফল করতে হলে এর কার্যকারিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এর কর্মপরিধিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি এ জন্য প্রয়োজন হবে নিরন্তর গবেষণা ও পর্যালোচনা, বিভাগীয় স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। শিক্ষাব্যবস্থার অব্যাহত উন্নয়নে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় গবেষণা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। এই শিক্ষা কমিশনের প্রতিটি বিভাগকে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নীতিমালা তৈরি এবং তা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ত্রিশঙ্কু অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে এই কমিশন শিক্ষার নীতি প্রণয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সমতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার যত তাড়াতাড়ি এই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা কমিশনটি গঠন করে শিক্ষা সংস্কারের কাজ শুরু করবে, ততই মঙ্গল। রাষ্ট্র সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তা সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শিক্ষা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">mahruf@ymail.com </span></span></span></span></p>