<p style="text-align:left"><span style="color:#c0392b"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মথ পোকার সামনের ডানার ওপর নিচের ডান ও বাঁ প্রান্তে দুটি গাঢ় রঙের ত্রিভুজ, সামনে মাথা ও ঘাড় এবং ডানার গোড়ার অংশে এমনভাবে সেই নস্যি-খয়েরি গাঢ় রং বিস্তৃত হয়েছে, যেন সেটিও একটি ত্রিভুজ। মাথা ও গ্রীবা গাঢ় চকোলেট রঙের, পেট ধূসর বাদামি। এদের বাচ্চা বা কিড়া বেশ সরু ও হালকা নীলাভ-ধূসর। কিড়া পাতা খায়, পাতার কিনারা থেকে খেতে খেতে পত্রফলকের মধ্যশিরার দিকে অগ্রসর হয়। মাঝে মাঝে পাতা ছিদ্র করেও খায়। এরা ধানক্ষেতের একটি গৌণ ক্ষতিকর পোকা</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পহেলা অগ্রহায়ণ। নবান্ন উৎসবের দিন। সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে রওনা হলাম মানিকগঞ্জের উদ্দেশে। হেমায়েতপুর থেকে সিংগাইর রোড ধরে হরিরামপুর যেতে পথের দুই পাশের গ্রামীণ দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি আমরা চার প্রকৃতিবন্ধু। মূল উদ্দেশ্য গাছপালার অনুসন্ধান। সুলতানপুরে সে কাজ সেরে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে ফের আরেক গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হলাম। মাঝে মাঝে চলছে ধানকাটা, পাকা ধানের গন্ধে হেমন্তের বাতাস আমোদিত। হঠাৎ একটা বিশেষ গাছ দেখে রহিম ভাই গাড়ি থামাতে বললেন, গাছটার নাম তেউরি মূল, ভীষণ ঔষধি গুণের নাকি গাছ। কলমির মতো সাদা ফুল ফোটা সে গাছটা দেখতেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। রাস্তার ঢাল ধরে নেমে সেই গাছের পাতা, লতা, ফুল ও ফল দেখতে দেখতেই হঠাৎ নজর পড়ল একটা কাকডুমুর পাতার ওপর। সোনারোদে ঝলমল করছে তকতকে সবুজ ডুমুর পাতা, কয়েকটা পাতা আড়াল করে রেখেছে সেই পাতাটিকে। সেই পাতার ওপরই বসে আছে একটা দুর্লভ পোকা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কী কাকতালীয় ব্যাপার! আসার পথে মাঠে মাঠে ধান কাটার দৃশ্য দেখে রবিন আর আনিস ভাইকে বলছিলাম প্রায় ১২ বছর আগে দেখা এই পোকাটির কথা, যে কথা কখনো লিখিনি। বলছিলাম, উত্তরবঙ্গের একটি ধানক্ষেতে এ রকমই এক হেমন্তের দিনে ধান কাটার সময় একটি পোকা দেখেছিলাম, যে পোকার আকৃতি ছিল ত্রিভুজের মতো, ডানায়ও ত্রিভুজের মতো দাগ। পোকার দেহে এমন জ্যামিতি সাধারণত আর দেখা যায় না। এরপর আর কোথাও কখনো সেই পোকার সঙ্গে দেখা হয়নি। প্রকৃতিমাতা ঠিকই প্রকৃতির সন্তানদের মনের আকুতি বুঝতে পারেন। যে পোকাটির জন্য এই দীর্ঘ সময়ের আফসোস, তিনি সহসাই যেন তা ঘুচিয়ে দিলেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেই পোকাটির আবার দেখা পেলাম হরিরামপুরে বালিরটেকের কাছে ভাটুরায়। মথ পোকা, তাই ডানা জোড়া মাটি বরাবর মেলে বসে আছে। সামনের ডানার ওপর নিচের ডান ও বাঁ প্রান্তে দুটি গাঢ় রঙের ত্রিভুজ, সামনে মাথা ও ঘাড় এবং ডানার গোড়ার অংশে এমনভাবে সেই নস্যি-খয়েরি গাঢ় রং বিস্তৃত হয়েছে যেন সেটিও একটি ত্রিভুজ। ওপরের সঙ্গে নিচের ত্রিভুজ দুটির মাঝে দুটি সাদা চওড়া সরলরেখা। ডানা ভাঁজ করার কারণে রেখা দুটি ইংরাজি ভি অক্ষরের রূপ ধরেছে। ওপর থেকে দেখাচ্ছে তিনটি বড় ত্রিভুজ। এ জন্যই বোধ হয় পোকাটির ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে ট্রায়াঙ্গুলার-স্ট্রাইপড মথ, কোনো বাংলা নাম পাওয়া যায়নি, বাংলা নাম রাখা যেতে পারে ত্রিকোণ-ডোরাকাটা মথ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেপিডোপ্টেরা বর্গের ইরেবিডি পরিবারের এই পোকার প্রজাতিগত নাম ঈযধষপরড়ঢ়ব সুমফড়হ.  পিয়েটার ক্রেমার ১৭৭৭ সালে সর্বপ্রথম এই প্রজাতি সম্পর্কে বিবরণ দেন। পোকাটি ওড়ার সময় ডানা চারটি দুই দিকে প্রসারিত করে, তখন সেই প্রসারিত ডানার বিস্তার হয় ৩৬ থেকে ৪০ মিলিমিটার। মাথা ও গ্রীবা গাঢ় চকোলেট রঙের, পেট ধূসর বাদামি। সামনের ডানা বেগুনি-ধূসর ঝালরযুক্ত। এদের বাচ্চা বা কিড়া বেশ সরু ও হালকা নীলাভ-ধূসর। কিড়া ঘোড়া পোকা ধরনের অর্থাৎ এরা হাঁটার সময় দেহের মাঝখানে কুঁজের মতো ঢেউ তুলে চলে। দেহের ওপর গাঢ় রঙের সরু রেখা লম্বালম্বিভাবে থাকে। কিড়া পাতা খায়, পাতার কিনারা থেকে খেতে খেতে পত্রফলকের মধ্যশিরার দিকে অগ্রসর হয়। মাঝে মাঝে পাতা ছিদ্র করেও খায়। এরা ধানক্ষেতের একটি গৌণ ক্ষতিকর পোকা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১২ সালে প্রথম এই পোকার দেখা পেয়েছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুরে এক ধানক্ষেতে। নভেম্বরের মাঝামাঝি ধান কাটার পর ক্ষেতের আইলের কোলে থাকা ধানগাছের গোড়া ও খড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই পোকাটি প্রথম আবিষ্কার করি। দিনের বেলায় এরা সাধারণত বের হতে চায় না, রাতে চলাচল করে বলে এদের বলা হয় নিশাচর পোকা। তখন তথ্য অনুসন্ধান করেও এই দেশে ধানের ১৭৫ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকার তালিকায় এই পোকাটি পাইনি। তখন ভেবেছিলাম, হয়তো এই পোকা ধানের কোনো ক্ষতিকর পোকা না। পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এই পোকার বাচ্চারা ধানগাছের পাতা খায়, অন্যান্য ফসলেরও পাতা খায়। ভারতের কর্ণাটকে উদয়নগিরিতে ২০১৫ সালে চিনার বা চিনাল (টক বাঙ্গি) ফসলের একটি পাতাখেকো পোকা হিসেবে একে শনাক্ত করা হয়েছিল। এমনকি ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের ধানক্ষেতে গিয়েও এ পোকার দেখা পেয়েছি। ফেসবুক গ্রুপের এক বন্ধুর পোস্ট থেকে জেনেছি, নেপালেও এই পোকা আছে। কিন্তু এই পোকাটি নিয়ে এ দেশে তেমন কোনো গবেষণা হয়েছে বলে মনে হয় না। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ প্রকাশিত উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের খণ্ড ২১-এ লেপিডোপ্টেরা বর্গের মধ্যে এই পোকার বর্ণনা খুঁজতে গিয়েও হতাশ হয়েছি। সেখানেও নেই এই পোকার উল্লেখ। অবশ্য এ ধরনের জ্ঞানকোষে বাংলাদেশের সব পোকামাকড়ই যে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>