<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জিম্মি ছিল রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ক্যান্টিনগুলো। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার পর সংগঠনটির নেতাকর্মীদের এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ক্যান্টিন মালিকরা। তাঁরা এখন ছাত্রলীগের জোর করে বাকি খাওয়া ও চাঁদাবাজির অর্থ ফেরত পাওয়ার দাবি করছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-২৪ আবাসিক হলের ক্যান্টিন সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আবাসিক হলটির ক্যান্টিন ম্যানেজার আব্দুল খালেক জানান, গত বছরের শুরুতে ক্যান্টিন ইজারা দেওয়া হবে জেনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পরে জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনুমতি ছাড়া ক্যান্টিন ইজারা নেওয়া সম্ভব নয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিজানুর রহমান। তাঁকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেওয়া হলে ক্যান্টিন ইজারা পাওয়া যাবে জানালে বাধ্য হয়ে ওই টাকা দিতে হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি আবাসিক হল নবাব সিরাজউদ্দৌলা হল। ওই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ না করায় হল ক্যান্টিনে বাকি জমেছে ১২ লাখ টাকা, যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনিক হোসেন দুর্জয়ের সর্বোচ্চ বাকি জমেছে চার লাখ ৯৪ হাজার টাকা। পাওনা টাকার পুরো তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অনিক ছাড়াও ছাত্রলীগ কমিটির সহসম্পাদক এ কে এম তমাল আব্দুল্লাহর কাছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক মোক্তার হোসেনের কাছে ৬৬ হাজার ৮৭০ টাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিদোয়ানের কাছে ৫৬ হাজার ৮০০ টাকাসহ অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নামে বিপুল অর্থ বকেয়া রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রলীগের এই সদস্যরা প্রভাব খাটিয়ে মাসের পর মাস খাবার রুমে নিয়ে যেতেন। কারো ভাই বা কারো বন্ধুকে অবৈধভাবে হলে রেখে ক্যান্টিন থেকে বকেয়ায় নেওয়া খাবার খাওয়াতেন। টাকা চাইলে ক্যান্টিন থেকে ম্যানেজারকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নবাব সিরাজউদ্দৌলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা তালিকা পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যে অনেকে টাকা দিয়েছে। সর্বোচ্চ বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট ও অন্য ডকুমেন্টস জমা রাখা হয়েছে। আর যারা হলে নেই তাদেরও টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। না পরিশোধ করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ক্লিয়ারেন্স আটকে দেওয়া হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবাসিক হলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নিয়মিত বাকিতে খাবার খাওয়া, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্যান্টিন মালিককে হত্যার হুমকির অভিযোগ করা হয়েছে। হলটির আগের ক্যান্টিন মালিক জাহিদ অভিযোগ করে বলেন, মাসে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হতো ছাত্রলীগ নজরুল হল শাখা সভাপতি সজিব ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুলকে। পরে ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর গলায় রামদা ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আগের প্রক্টরিয়াল বডি বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। এ ছাড়া সজিব ২০১৮ সালের পর থেকে কখনো খাওয়ার বিল পরিশোধ করেননি। লিখিত হিসাব অনুযায়ী, সজিবের কাছে বকেয়া পাওনা তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৮০ টাকা। এ ছাড়া আরিফুল তাঁর জন্মদিনে ক্যান্টিনে ছোট ভাইদের জন্য খাবারের আয়োজন করতেন। এসব খাবারেরও কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি। বকেয়া টাকা ফেরত চেয়ে ক্যান্টিন মালিক জাহিদ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদাবাজি এবং বকেয়া টাকা মিলিয়ে ১০ লাখ টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। অন্তত বকেয়া টাকা ফেরত পেতে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদুর রহমান মিঠু তাঁর সহযোগীদের ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। বিনিময়ে মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন প্রগ্রামে অংশ নিতে হতো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে টিউশনি করতাম। আর সভাপতি মিঠুর সঙ্গে রাজনীতি করতাম। বিভিন্ন সময় প্রগ্রামে ডাকলে টিউশনির জন্য যেতে পারতাম না। পরে মিঠু আমাকে টিউশনি বন্ধ করতে বলে ক্যান্টিনে আমার খাওয়ার বিল সে পরিশোধ করে দিবে বলে জানায়। এভাবে তার সহযোগীদের ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিত মিঠু। ক্যান্টিন মালিকদের তার কথার বাইরে যাওয়ার সাহস ছিল না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কবি নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা নজরুল হলের ক্যান্টিনের বকেয়া এবং চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যেই বকেয় অর্থ দ্রুত ফেরত দিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও বাকি খাওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনের খাবারের মান সব সময় খারাপ ছিল। ছাত্রলীগের অন্যায়ের ভুক্তভোগী হতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই একই কাজ যেন নতুন করে আর না হয় সে দাবি শিক্ষার্থীদের।</span></span></span></span></p>