<p><span style="color:#e74c3c">শাবুলবুলি নাম হলেও এ পাখিকে কিন্তু বুলবুল পরিবারের সদস্য মনে করবেন না। শাবুলবুলি হলো ‘রাজন’ নামের অন্য এক পরিবারের সদস্য। রাজন-শাবুলবুলি পাখিরা পতঙ্গভুক; আর বুলবুলগুলো হলো ফলভুক। শাবুলবুলির ইংরেজি নামটি বেশ জুতসই : ‘প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’, অর্থাৎ স্বর্গীয় পতঙ্গভুক</span></p> <p>       </p> <p>চমক দেওয়ার মতো যত পাখি আছে এ দেশে, তার মধ্যে শাবুলবুলিই যে বেশি বিস্ময়কর তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে শাবুলবুলির মেয়েটা মোটেও আজব নয়; শুধু ছেলেটির গড়ন আর ধরনধারণ অসাধারণ ও অদ্ভুত। মেয়ে শাবুলবুলির আট ইঞ্চি লম্বা দেহের ইঞ্চি তিনেক হলো লেজ। ছেলের দেহটাও মেয়ের সমান; কিন্তু তার লেজ হলো দেড় ফুট লম্বা! তার পাঁচ ইঞ্চি দেহের সঙ্গে লাগানো মাত্রাহীন এই লেজটি সর্বক্ষণ ফিতার মতো বাতাসে উড়তে থাকে। ছোট্ট এই পাখির এমন বেয়াড়া ও বাহারি লেজের কী প্রয়োজন ছিল তা কেউ জানে না।</p> <p>আরো আজব ব্যাপার হলো, ছেলের দেহ ও লেজের পালকগুলো নাটকীয়ভাবে রং বদলায়। এক ঋতুতে তার রং হয় মেয়ের পালকের মতো লালচে বাদামি; অন্য ঋতুতে ধবধবে সাদা। পালকের রঙে এমন আমূল পরিবর্তনেরই বা কী প্রয়োজন ছিল, সেটাও আমাদের বোধগম্যের অতীত। এক জোড়া শাবুলবুলিকে বাঁশবনে বাসা করতে দেখে আমরা একবার আড়াল থেকে তাদের ঘরকন্নার ছবি তুলেছিলাম। কঞ্চির গায়ে শুকনা ঘাস পেঁচিয়ে মজবুত একটি বাসা গড়েছিল শাবুলবুলি দম্পতি। তারপর সেই বাসার গায়ে লাগিয়েছিল ৫০ থেকে ৬০টি মাকড়সা-ডিমের পরিত্যক্ত থলি। মরা ঘাসের বাসায় সাদা থলির ওই নকশা ওরা কেন করে তাও আমাদের জানা নেই। কিন্তু নকশাটা শাবুলবুলির কাছে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ না হলে কি সারা বন খুঁজে ওই দুর্লভ বস্তু ওরা সংগ্রহ করত! মোরগ কিংবা ময়ূরের মতো যেসব পুরুষ পাখির পালকে জাঁকজমক থাকে তারা সচরাচর বাসা বাঁধা, ডিমে তা দেওয়া, ছানা পালন করা ইত্যাদি কাজে কোনো অবদান রাখে না। কিন্তু চেহারায় জাঁকজমক যতই থাক না কেন, পুরুষ শাবুলবুলি ঘরকন্নার সব কাজে সাগ্রহে অংশ নেয়।</p> <p>শাবুলবুলি নাম হলেও এই পাখিকে কিন্তু বুলবুল পরিবারের সদস্য মনে করবেন না। শাবুলবুলি হলো ‘রাজন’ নামের অন্য এক পরিবারের সদস্য। রাজন-শাবুলবুলি পাখিরা পতঙ্গভুক; আর বুলবুলগুলো হলো ফলভুক। শাবুলবুলির ইংরেজি নামটি বেশ জুতসই : ‘প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’, অর্থাৎ স্বর্গীয় পতঙ্গভুক। ভারতের অনেক ভাষাতেই শাবুলবুলির নাম ‘দুধরাজ’ এবং দুধরাজই মধ্য প্রদেশের স্টেটবার্ড। বাংলাদেশে দুধরাজের চেয়ে শাবুলবুলি বা শাহী-বুলবুলি নামই বেশি চলে। তবে সম্প্রতি এই নাম কিছুটা পরিমার্জন করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। গবেষণায় জানা গেছে যে এখানে তিনটি পৃথক প্রজাতির শাবুলবুলি রয়েছে, যদিও চেহারায় মিল আছে বলে আগে এদের এক প্রজাতি ধরা হতো। এখন তিন প্রজাতিকে আলাদাভাবে চিনতে হবে এবং তিনটি পৃথক নামও দিতে হবে। একটি প্রজাতি গ্রীষ্মে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে থাকে, যার নাম দেওয়া হয়েছে বাংলায় ‘দেশি-শাবুলবুলি’ এবং ইংরেজিতে ‘ইন্ডিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’। এ পাখির ঝুঁটি খুব লম্বা এবং ছেলেটির গলা ও বুক ধবধবে সাদা। আরেকটি প্রজাতি শীতে রাজশাহী, সিলেট ও ঢাকা বিভাগে থাকে, যার নাম হয়েছে বাংলায় ‘উদয়ী-শাবুলবুলি’ এবং ইংরেজিতে ‘অরিয়েন্টাল প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’। এ পাখির ঝুঁটি কম লম্বা এবং ছেলেটির গলা কিছুটা কালচে। তৃতীয় প্রজাতিটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে দেখা গেছে, যার নাম বাংলায় ‘চীনা-শাবুলবুলি’ এবং ইংরেজিতে ‘চায়নিজ প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’ রাখা হয়েছে। এ পাখির ঝুঁটি বেশ ছোট এবং ছেলের গলা ও বুক অনেকটা কালচে।</p> <p> </p> <p> </p>