<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উম্মে আইমান হাবশিয়া (রা.)। তাঁর আসল নাম বারাকাহ। তবে তিনি উম্মে আইমান নামে বেশি পরিচিত। পৈতৃক সূত্রে নবীজি (সা.) তাঁকে দাসী হিসেবে পেয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে নবীজির বাবা আব্দুলাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মিরাস হিসেবে উম্মে আইমান, পাঁচটি উট ও ছাগলের পাল রেখে যান। পরবর্তী সময়ে উত্তরাধিকারসূত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) এগুলো লাভ করেছেন। নবীজির মায়ের মৃত্যুর পর উম্মে আইমানই তাঁর দেখাশোনা করেছেন। প্রিয় নবীর লালন-পালন ও যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মায়ের ভূমিকা পালন করেন এবং নবীজির শৈশবের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সঙ্গীও ছিলেন তিনি। তা ছাড়া নবীজির প্রতি তিনি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন এবং নবীজি (সা.)-ও তাঁকে মায়ের মতো সম্মান করতেন। কখনো কখনো মা বলেও ডাকতেন আর বলতেন, ইনি হলেন আমার পরিবারের অংশ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উম্মে আইমান প্রথম নারী মুসলিমদের অন্যতম। ইসলামের প্রতি তাঁর অটল আস্থা ও ভালোবাসা ছিল প্রবল। কারণ  ইসলাম গ্রহণের পর তিনি অনেক কষ্ট ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন। তবু তিনি সামান্য সময়ের জন্যও তাঁর ঈমান থেকে বিচ্যুত হননি। এমনকি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে চরম ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন, যা ইসলামের ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উম্মে আইমানের প্রথম বিবাহ হয় উবায়দ ইবনে হারিসের সঙ্গে। তাঁদের একজন পুত্রসন্তান হয়। যার নাম আইমান। সেখান থেকেই তিনি উম্মে আইমান নামে পরিচিতি লাভ করেন। হুনাইনের যুদ্ধে তাঁর স্বামী উবায়দ শহীদ হন। পরে জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ঘরে বিখ্যাত সাহাবি উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) জন্ম লাভ করেন। তিনি হুব্বুর রাসুল বা রাসুলের প্রিয়ভাজনরূপে পরিচিত ছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মহীয়সী এই নারী ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছিল। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে পরিমিত হাসি বা মজার মাধ্যমে সহজ পন্থায় তাঁকে ইলম শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। একবারের ঘটনা। উম্মে আইমান (রা.) নবীজি (সা.)-এর দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে একটি বাহনজন্তু দিন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে বাহন হিসেবে উটনীর বাচ্চা দেব। উম্মে আইমান বিস্মিত হয়ে বললেন, উটের বাচ্চা তো আমাকে বহন করতে পারবে না। আমি তো চাইওনি। নবীজি (সা.) বললেন, আমি তো আপনাকে তা-ই দেব। (উট তো উটনীরই বাচ্চা) অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে মজা করছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তা ছাড়া ইলম শিক্ষার সহজতার জন্য নবীজি (সা.) অনেক বিষয়ে তাঁকে ছাড় দিতেন। তিনি দোয়ার মধ্যে হরফের উচ্চারণে ভুল করতেন। নবী করিম (সা.) তাঁকে দোয়া করা থেকে অবসর দিয়েছেন। একবার সালাম দিতে গিয়ে ভুল করেছেন। তখন শুধু পুরো সালামের স্থানে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আস সালাম</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। তার পরও ইলমে ওহির জ্ঞানার্জনে ছিল তাঁর অন্য রকম ভালোবাসা। নবীজির ইন্তেকালের পর তিনি খুব কাঁদছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনিও কাঁদছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের কারণে কাঁদছি না। আমি তো জানিই কোনো একদিন তিনি ইন্তেকাল করবেন। আমি তো কাঁদছি ওহির জন্য। আজ থেকে আসমানের সঙ্গে আমাদের এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বয়স ও স্মৃতিশক্তির বাধা ডিঙিয়ে তিনিও হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে পাঁচটি হাদিস সনদসহ বর্ণিত হয়েছে। পাশাপাশি বহু যুদ্ধেও তিনি মুসলিমদের পাশে ছিলেন এবং তাঁদের সহায়তা করেছিলেন, বিশেষ করে উহুদ ও খন্দক যুদ্ধে মুসলিম সেনাদের পানি পান করানো এবং আহতদের সেবা করার দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ইসলামের জন্য উম্মে আইমানের কষ্ট, ত্যাগ, ও সাহসিকতা আজও মুসলিম উম্মাহকে অনুপ্রাণিত করে। নবী করিম (সা.)-এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং ইসলামের জন্য তাঁর অমূল্য অবদান সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইলমপিয়াসি এই নারী মুহাদ্দিস উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে ইন্তেকাল করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/৪৮১, </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আততবাকাতুল কুবরা : ১/৮০, ৩/৪৮০, ৮/১৮০-১৮১)</span></span></span></span></span></p> <p> </p>