<p>মহানবী (সা.)-এর মূল নাম মুহাম্মদ। এটি তাঁর সমধিক প্রসিদ্ধ নাম। তাওরাতে এ নামেই তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটি নাম হলো আহমদ। আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) তাঁকে এ নামে ডাকতেন। আরো কিছু নাম হলো আল-মুতাওয়াক্কিল, আল-মাহি, আল-হাশের, আল-আকিব, আল-মুক্বাফফি, নবিয়্যুর রহমাহ, নবিয়্যুল মালহামা, আল-ফাতিহ, নবিয়্যুত তাওবাহ, আল-আমিন ইত্যাদি।</p> <p>জুবায়ের বিন মুতইম (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) আমাদের কাছে তাঁর অনেক নাম উল্লেখ করেছেন। অতএব, তিনি বলেছেন, আমি মুহাম্মদ। আমি আহমদ। আমি আল-মাহি, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কুফর মিটিয়ে দিয়েছেন। আমি আল-হাশের, আমার সামনে কিয়ামতের দিন মানুষকে জমায়েত করা হবে। আমি আল-আকিব, যার পরে আর কোনো নবী নেই। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৩২; মুসলিম, হাদিস : ২৩৫৪)</p> <p>মুহাম্মদ অর্থ প্রশংসিত। এটি মাহমুদ শব্দের চেয়ে বেশি অলংকারপূর্ণ। আহমদ শব্দটি প্রশংসাবোধক আরবি ‘হামদুন’ শব্দমূল থেকে আধিক্যবাচক ক্রিয়া। অর্থ সমধিক প্রশংসিত। আল-মুতাওয়াক্কিল নামের ব্যাপারে কথা হলো—সহিহ বুখারিতে আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাওরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুণাবলি পাঠ করেছি। (আল্লাহ তাআলা বলেন) মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার বান্দা ও রাসুল। আমি তাঁকে মুতাওয়াক্কিল নাম দিয়েছি, যিনি কঠোর ও রূঢ় নন। বাজারে হৈচৈকারী নন। মন্দের প্রতিদান মন্দ দ্বারা দেন না, বরং ক্ষমা ও মার্জনা করেন। আমি তাঁকে মৃত্যু দেব না, যতক্ষণ না তাঁর দ্বারা বক্র জাতিকে সোজা করব তথা যতক্ষণ না তারা বলবে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ২১২৫)</p> <p>তিনি এই নামের বেশি হকদার। কেননা তিনি দ্বিন প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর ওপর এমন তাওয়াক্কুল তথা নির্ভরশীল ছিলেন যে তাঁর মতো অন্য কেউ ছিল না। </p> <p>আল-মাহি অর্থাৎ যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কুফরকে মিটিয়ে দিয়েছেন। নবীজির মাধ্যমে যতটুকু কুফর মেটানো হয়েছে সৃষ্টির অন্য  কারো মাধ্যমে সেই পরিমাণ কুফর মেটানো হয়নি।</p> <p>আল-হাশের, হাশর অর্থ জমা করা, একত্র করা। অতএব, আল-হাশের অর্থ যার সম্মুখে মানুষকে জমায়েত করা হবে। কেমন যেন মানুষকে (কিয়ামতের দিন) একত্র করার জন্যই তাঁকে পাঠানো হয়েছে।</p> <p>আল-আকিব তথা যিনি নবীদের পরে এসেছেন। তাঁর পর কোনো নবী নেই। আকিব অর্থ শেষে আগমনকারী।</p> <p>আল-মুক্বাফফি মানে হলো অনুগামী। অর্থাৎ যিনি ছিলেন আগের রাসুলদের অনুগামী।</p> <p>নবীয়্যুত তাওবা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো—যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীবাসীর ওপর তাওবার দ্বার খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমে লোকদের ওপর এমনভাবে তাওবা গ্রহণ করেছেন এর আগে যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীবাসীর জন্য নেই।</p> <p>নবীয়্যুল মালহামা মানে হলো যুদ্ধের নবী। অর্থাৎ যাকে পাঠানো হয়েছে আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদ করার জন্য। অতএব, তিনি ও তাঁর উম্মত যত জিহাদ ও যুদ্ধ করেছেন অন্য কোনো নবী ও তদীয় উম্মত এত জিহাদ করেননি।</p> <p>আর নবীয়্যুর রহমাহ অর্থ হলো রহমতের নবী। অর্থাৎ তাঁকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীবাসী তথা মুমিন-কাফির-নির্বিশেষে সবার জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন।</p> <p>আল-ফাতিহ অর্থ উন্মোচনকারী। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বারা হিদায়াতের দরজা খুলে দিয়েছেন। অন্ধ চক্ষু, বধির কর্ণ ও মোড়কবদ্ধ অন্তর উন্মোচন করে দিয়েছেন।</p> <p>আল-আমিন তথা বিশ্বস্ত। তিনি পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হকদার এই নামের। কারণ তিনি আল্লাহর ওহি ও দ্বিনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত। তিনি আকাশে বিশ্বস্ত। বিশ্বস্ত পৃথিবীতেও। এ কারণেই আরবের কাফিররা নবুয়তের আগে তাঁকে এই নামে ডাকত। (মুখতাসারু যাদিল মাআদ, পৃষ্ঠা-২৭-২৯)</p> <p> </p>