<p>চলে গেল বছরের সেরা মাস ‘রমজান’। রমজানের বিদায়ে মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় দেখা যাচ্ছে না! রমজানের বিদায়ে কি নামাজও বিদায় হলো? রমজানের পর অনেকে নামাজ ছেড়ে দেন, এটা দুঃখজনক! বরং সারা বছর রমজানের অর্জনগুলো চর্চায় রাখতে হবে। যেমন—</p> <p>১. ধর্মভীরুতা : রমজান মানুষের মধ্যে ‘তাকওয়া’ (ধর্মভীরুতা) সৃষ্টি করেছিল। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ ‘আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় করো, যেমন ভয় করা উচিত এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’</p> <p>(সুরা : আল-ইমরান, আয়াত : ১০২)</p> <p>আয়াতে বর্ণিত ‘আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় করো’ এবং ‘মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ বাণীদ্বয় খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। আল্লামা বায়যাভির (রহ.) মতে, তাকওয়ার সোপান তিনটি—(ক) শিরক থেকে বিরত থাকা, (খ) সব পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা, (গ) পাপের ভয়ে বৈধ কাজও পরিহার করা।</p> <p>২. ধৈর্য : রমজান মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায়। শান্তিতে, সংগ্রামে, রোগ-যন্ত্রণায়, দুঃখ-শোক, ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তথা জীবনের সব প্রতিকূল ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনন্ত সংগ্রাম করাই প্রকৃত মনুষ্যত্বের প্রতীক। সুরা বাকারার  ১৫৫ ও ১৫৬ নম্বর আয়াতে ধৈর্য ধারণের ক্ষেত্রের বর্ণনা আছে : (ক) ভয়, (খ)  ক্ষুধা, (গ) সম্পদহানি, (ঘ) প্রাণহানি, (ঙ) শস্যহানি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা ধৈর্যশীল থাকে অভাব-অভিযোগে, রোগশোকে এবং রণক্ষেত্রে...।’</p> <p>(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)।</p> <p>মুফতি মুহাম্মদ শফির (রহ.) মতে, ধৈর্য বা সবর তিন প্রকার—</p> <p>ক) নফসকে (প্রবৃত্তি) হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা।</p> <p>খ) আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে নফসকে বাধ্য করা।</p> <p>গ) যেকোনো বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ করা।</p> <p>৩. সহানুভূতি : হাদিসের ভাষায় সহানুভূতির মাস রমজান। মহান আল্লাহর নির্দেশ ‘তোমরা ধৈর্য-সহিষ্ণুতা অবলম্বন করো এবং সহিষ্ণুতায় পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করো; সহিষ্ণুতার বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারো।’ (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ২০০) মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা সত্কর্ম ও ধর্মভীরুতায় একে অন্যকে সহযোগিতা (প্রতিযোগিতা) করবে...। আল্লাহকে ভয় করে চলো...।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)</p> <p>৪. পাপ পরিহার : রমজান মানুষের ষড়রিপুর বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয় নবীর (স.)-এর ভাষায় ‘রোজা ঢালস্বরূপ’। অথচ সিয়াম সাধনার দ্বারাও যারা মিথ্যা পরিহারের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তাদের পানাহার পরিত্যাগের কোনোই মূল্য নেই। প্রিয় নবী (স.) বলেন, তোমরা মিথ্যার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা, মিথ্যা পাপের দিকে এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। (বুখারি)</p> <p>৫. কথাবার্তায় সংযম : রোজা মানুষকে কথাবার্তায় সংযমী করে। আমরা যা কিছু বলি, যা কিছু করি মহান আল্লাহ সবই জানেন, দেখেন, বোঝেন এবং বলেন, ‘মানুষ যে কথাই বলুক না কেন, তার কাছে একজন দৃষ্টিপাতকারী প্রস্তুত থাকে।’ (সুরা : ক্বাফ আয়াত : ১৮)</p> <p>প্রিয় নবী (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি, তার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করা কুফরি। (বুখারি)</p> <p>এখন ভাবা উচিত রমজানের শিক্ষা আমাদের জীবনে কতটুকু?</p> <p>৬. তাওবা : তাওবার মাস রমজান। তাওবার গুরুত্ব অপরিসীম। রমজানের শিক্ষা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ না হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না...।’</p> <p>(সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)</p> <p>প্রিয় নবী (স.) বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান দোষ-ত্রুটিপূর্ণ ও অপরাধী, আর অপরাধীর মধ্যে ওই সব লোক উত্তম, যারা তাওবা করে। (তিরমিজি)</p> <p>৭. দোয়া : দোয়া কবুলের মাস রমজান। আমাদের কর্তব্য, সারা বছর সমর্পিত চিত্তে দোয়া করা। দোয়া অর্থ ডাকা বা চাওয়া। মহান আল্লাহর বাণী ‘যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)</p> <p>পবিত্র কোরআন, হাদিস ও বুজুর্গানের বহুল চর্চিত-পরীক্ষিত আমলে ‘দোয়ার শক্তি’র ধারণা মেলে। মহান আল্লাহর নির্দেশ—‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)</p> <p>৮. তিলাওয়াত : রমজানে আমরা নিয়মিত তিলাওয়াত করেছি। রমজানের পরও উচিত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস বজায় রাখা। পবিত্র কোরআন ও রমজানের প্রাণোচ্ছ্বাসে মুজাদ্দিদ আলফিসানির (রহ.) নিবেদন :</p> <p>‘এ আবে হায়াত থেকে পিপাসা চাহি না মিটাতে কভু</p> <p>এর মাঝে যেন হরদম মোর তৃষ্ণা বাড়ান প্রভু।’</p> <p> </p> <p>লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কাপাসিয়া ডিগ্রি  কলেজ, গাজীপুর</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>