<p>বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে এখনো অসন্তোষ রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ পাঁচ ঝুঁকি দেখছে জাপান। এসব সমস্যা সমাধান করা জরুরি বলে মনে করছেন জাপানি বিনিয়োগকারীরা। এই ব্যবসার পরিবেশ সংস্কারের এখনই সময় বলে তারা উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকে তারা সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।</p> <p>জাপানি উদ্যোক্তাদের মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ অনেক ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বড় পাঁচটি ঝুঁকি হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিনিয়োগ অনুমতি ও নিবন্ধন সনদ পেতে সময়ক্ষেপণ, জটিল কর প্রক্রিয়া, অস্বচ্ছ ও মানহীন আইনি ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও স্থানীয় সরকারের অস্বচ্ছ নীতি ব্যবস্থাপনা।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার এক সেমিনারে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। ‘বিনিয়োগ এবং ব্যাবসায়িক অংশীদারত্ব : বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা’ শিরোনামের এ সেমিনার রাজধানীর হোটেল শেরাটন বনানীতে অনুষ্ঠিত হয়। বিদেশি উদ্যোক্তাদের সংগঠন এফআইসিসিআই, জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জেট্রো, জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ইন ঢাকা (জেসিআইএডি) ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তা এবং তাদের প্রতিনিধিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>জাপানি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ সম্প্রসারণের কথা বললেও সেমিনারে বংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ এবং প্রতিবন্ধকতা শিরোনামে এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশের ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে ২৬.২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অসন্তুষ্ট। ৪৪.৬ শতাংশ কিছুটা অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে ২৪.৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান খুব সন্তুষ্ট। ৪.৬ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে এমন ৬১ শতাংশেরও বেশি জাপানি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এ দেশে সম্প্রসারণ করতে চায়। এ হার এ অঞ্চলের মধ্যে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বিদ্যমান বিনিয়োগের ১.১ শতাংশ হার সম্প্রসারণের পরিকল্পার কথা জানিয়েছেন তারা।</p> <p>প্রতিবেদনে এ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাঁচ বড় সম্ভাবনা এবং সাতটি প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান সংস্কার কার্যক্রমে এসব প্রতিবন্ধকতাকে অন্তর্ভুক্ত করে সমাধান করা হলে এ দেশে জাপানসহ অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ টানার বড় সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন জাপানি উদ্যোক্তারা।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আগের সম্প্রসারণ বা কোনো ধরনের সংকোচনের কথ চিন্তা করছে না। সাড়ে ৩ শতাংশ কম্পানি বিনিয়োগ সংকোচন করেছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়নি। অন্যান্য সব দেশ থেকেই বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছেন জাপানি উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫০টি কম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর এ হার বাড়ছে। প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশে জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি আনন্দ।</p> <p>বিনিয়োগে ৫টি সুবিধা : জাপানি উদ্যোক্তাদের মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক ঝুঁকি যেমন রয়েছে তেমনি অনেক সুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাঁচ সুবিধা হচ্ছে, এ দেশের সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায়। মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, স্থানীয়ভাবে স্টাফ নিয়োগের সুবিধা, জমির সহজপ্রাপ্যতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। এ ছাড়া স্থানীয় পণ্য সংগ্রহ করাও যায় তুলনামূলক সস্তায়। এসব সুবিধায় বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যয় জাপানের  উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগে স্থানীয় বাজার এবং রপ্তানির জন্য সম্ভাবনাময় বেশি কয়েকটি খাতের কথা বলেছেন জাপানের উদ্যোক্তারা। স্থানীয় বাজারের জন্য অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে সম্ভাবনাময় হিসেবে রয়েছে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের রাসায়নিক ও তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি।</p> <p>সেমিনারে বিনিয়োগ উন্নয়নে জাইকার পক্ষ থেকেও পৃথক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি তোমোহাইদ ইসিগুসি। এতেও ব্যবসা-বিনিয়োগের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।</p> <p>আলোচনায় প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশ আর সস্তা শ্রমের জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চায় না। সস্তা শ্রম আর জটিল বিনিয়োগ পরিবেশের বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সরকার। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম করা হচ্ছে।’</p> <p>বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মুহাম্মদ বিন হারুন বলেন, ‘বিডার সেবা উন্নয়নে অনেক টাস্কফোর্স করা হয়েছে। বিনিয়োগে বাধা দূর করতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে।’ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য বিডায় আসুন। আর কোথাও যেতে হবে না। বিডা বাকি কাজ সমন্বয় করবে।’</p>