<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতায় অবরুদ্ধ বা ক্রোককৃত অপরাধলব্ধ সম্পদের রিসিভারদের ওপর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত তদারকি করতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির অনুসন্ধান বা তদন্তের যেকোনো পর্যায়ে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে অপরাধলব্ধ সম্পদ অবরুদ্ধ বা ক্রোকের আইনি সক্ষমতা সংস্থাটির রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আদালতের আদেশে অপরাধলব্ধ সম্পদের রিসিভারের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, অন্যান্য সংস্থা, কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিদের। কিন্তু বিধি অনুসারে রিসিভার যথাযথভাবে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না তা পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। বাস্তবে স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে রিসিভারদের ওপর পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও তদারকি প্রায় অসম্ভব। আর এই সুযোগে রিসিভাররা অনেকেই তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্বে অবহেলা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মামলার চূড়ান্ত রায়ে কোনো কারণে আসামিরা খালাস পেলে ওই সব সম্পত্তি তাঁদের ফেরত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়ভার রিসিভারকে নিতে হবে। এমতাবস্থায় অবরুদ্ধ বা ক্রোককৃত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুদকের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপরাধলব্ধ সম্পদগুলো যেন নষ্ট না হয় এবং চূড়ান্ত রায়ের পর সম্পদগুলো যেন সহজেই বুঝিয়ে দেওয়া যায়, সে কারণেই আদালত রিসিভার নিয়োগ করেন। রিসিভাররা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির আয় ও ব্যয়ের হিসাব আদালতে জমা দেবেন। কোনো কারণে সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রিসিভাররা দায়ী থাকবেন। এ ছাড়া চূড়ান্ত রায়ে কোনো কারণে আসামি খালাস পেলে তাঁকে তাঁর সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে। ফলে ক্রোককৃত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সবাইকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিসিভার নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু দুদককে একা দায়িত্ব দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন অধিদপ্তরসহ আদালত যাকে উপযুক্ত মনে করেন তাকে রিসিভার নিয়োগ দেন। দুদক যেসব সম্পদের রিসিভারের দায়িত্ব নিয়েছে, সেগুলোর যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে দুদকের লোকবলের অভাব রয়েছে। কমিশনের স্বল্প লোকবলে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে দুদক ছাড়া অন্য রিসিভাররা যথাযথ কাজ করছে কি না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তার পূর্ণাঙ্গ তদারকি অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের অপর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জমি কিংবা ফ্ল্যাট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ধরনের সম্পদের ক্ষেত্রে রিসিভাররা সহজেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে যানবাহন কিংবা কল-কারখানার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যানবাহন বিকল হয়ে গেছে অথবা যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। আবার কাগজে-কলমে কিছুর অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুদকের এক মামলায় রাজধানীর সাবেক এক কাউন্সিলরের জিপ গাড়ি এখনো দুদকের গ্যারেজে পড়ে আছে। বিকল অবস্থায় পড়ে থাকলেও যন্ত্রাংশ চুরি হয়নি। অপরদিকে ২০১২ সালে আলোচিত এমএলএম কম্পানি ডেসটিনির মামলায় ডেসটিনির ৯২টি গাড়ির রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয় ডিএমপি কমিশনারকে। মূলত গাড়িগুলোর এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইন ও বিধিতে যা আছে </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ এবং সুনির্দিষ্ট অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের বিষয়াদি সম্পর্কে ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ পাস হয়। এরপর নানান সংশোধনীসহ ২০১৯ সালের ২০ জুন দুদক বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সেখানে অপরাধলব্ধ সম্পত্তি অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোকাদেশ, অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোকাদেশ জারি, এর মেয়াদ, এসব সম্পত্তির জন্য রিসিভার নিয়োগ ও তৃতীয় পক্ষ দাবিদারের অনুকূলে অবমুক্তকরণের বিষয়ে বলা হয়েছে। আর রিসিভার যথাযথভাবে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না তা কমিশন পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বল্পসংখ্যক লোকবল নিয়ে দুদকের প্রচেষ্টা </span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আদালতের নিয়োগ করা রিসিভারদের পর্যবেক্ষণ ও তদাকরি কাজের দায়িত্বটি মূলত দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের ওপর ন্যস্ত। এই ইউনিটটি মাত্র একজন পরিচালক, চারজন উপপরিচালক ও একজন সহকারী পরিচালকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আর এই ছয়জন কর্মকর্তার ওপর দেশজুড়ে নিয়োগ পাওয়া রিসিভারদের পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি অনেকটা দুরূহ। এরপর আদালত দুদকে রিসিভার নিয়োগ দিলে সেই কাজের সার্বিক দেখভালও করতে হয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটকে। যুগোপযোগী করতে এই ইউনিটকে আরো শক্তিশালী ও লোকবল বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হু হু করে বাড়ছে অপরাধলব্ধ সম্পদ : দুদকের সর্বশেষ প্রকাশিত দুদকবার্তায় বলা হয়, তিন মাসে (চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত) ১২টি নথিতে মোট ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার ৯৪১ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৭.৮০৩ একর জমি, ১৩টি বাড়ি, ২২টি ফ্ল্যাট, ৯টি প্লট ও স্থাপনা, একটি অ্যাগ্রো ফার্ম, একটি রিসোর্ট ও একটি অফিস স্পেস রয়েছে। অপরদিকে একই সময় ৯টি নথিতে ৬৩টি ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রে মোট ১০ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা ও ২০ হাজার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে এই সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের সংখ্যা আরো বহুগুণ বেড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড় মামলায় ব্যর্থতার নজির : আলোচিত এমএলএম কম্পানি ডেসটিনির রফিকুলসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই মামলা দুটি করা হয়। দুই মামলায় মোট চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ৪৬ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড এবং ডেসটিনির সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত। ২০১২ সালে ডেসটিনির ৯২টি সচল গাড়ির রিসিভার দেওয়া হয় ডিএমপি কমিশনারকে। বর্তমানে গাড়িগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পেরেছে কমিশনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। একইভাবে ঋণ কেলেংকারিতে আলোচিত হলমার্কে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হলেও বলতে গেলে প্রায় সব সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত।</span></span></span></span></p>