<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার চন্দ্র পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় আনুমানিক পাঁচ বিঘা জমির ওপর সাততলা বিশাল আধুনিক ভবন। এর মালিক রকিব উদ্দিন দেওয়ান রতন। এলাকায় তিনি পরিচিত রতন দেওয়ান নামে। ই৪৪/১ হোল্ডিংয়ের ওই ভবন ভাড়া নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেড। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই ভবনের দক্ষিণে কয়েক শ গজ দূরে রতন দেওয়ানের আরেকটি বিশাল ওয়্যারহাউস। এটিও একটি জুতা তৈরির কারখানার কাছে ভাড়া দেওয়া। পাশেই কয়েক একর জমির ওপর আটতলা বিশাল আরেকটি ভবন। এটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী জুতা তৈরির চায়না প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন স্কাই ফুটওয়্যারের কাছে। পাশের আরেকটি ভবন ভাড়া দেওয়া হয়েছে আগমনী সু কম্পানির কাছে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজানগরে রতন দেওয়ানের রয়েছে প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। বিশাল ওই রিসোর্টে রয়েছে সুইমিংপুল ও স্পা সুবিধা। এসব প্রতিষ্ঠানে রতন দেওয়ানের বিনিয়োগ প্রায় হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, কাগজে-কলমে রতন দেওয়ানের নামে হলেও বিনিয়োগের একটি বড় অংশের মালিক সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্রীমঙ্গল থানার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজপত্রে মালিক কে জানেন না, শুনেছেন প্যারাগন রিসোর্ট ডিবির হারুন স্যারের।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, ৭০ শতাংশের বেশি জমির ওপর প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। নির্মাণের সময় বেশ কিছু পরিমাণ খাসজমিও দখল করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালের শেষের দিকে উদ্বোধন করা হয়। সাততলা আধুনিক রিসোর্টে রয়েছে বিশাল লবি, ডিলাক্স, ডিলাক্স টুইন, সুপার ডিলাক্স, এক্সিকিউটিভ স্যুইট রুম, গেম অ্যান্ড কিড জোন, স্পা অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টার, সুইমিংপুল, বোর্ড মিটিং ও ব্যানকুইট হল এবং বিশাল রেস্টুরেন্ট।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরাও বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডিবির হারুন সাহেব। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) আবদুল মতিন সরকার জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিক কে তিনি তা জানেন না। রতন দেওয়ান প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ পরিবার নিয়ে প্রায়ই আসতেন। এক-দুই দিন থেকে চলে যেতেন। তিনি এলে আগে থেকেই অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আসতেন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের দেড় থেকে দুই মাস আগেও পরিবার নিয়ে এসে এক রাত থাকেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টরই পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রতন দেওয়ানের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায়। পরিবার নিয়ে তিনি বাস করেন রাজধানীর উত্তরায়। কালিয়াকৈরে তাঁদের পরিবার বিত্তশালী হিসেবে পরিচিত। বাবা ছিলেন অনেক জমির মালিক। মৌচাক এলাকায় তাঁদের তেলের পাম্প ছিল। এলাকায় ব্যাপক কলকারখানা গড়ে উঠলে বেড়ে যায় জমির দাম। এপেক্স ফুটওয়্যারের কাছে কিছু জমি বিক্রি এবং ওই টাকায়, পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় পাঁচতলা ভবন, একটি ওয়্যারহাউস ও একটি টাওয়েল কারখানা করেন রতন দেওয়ান। হারুন অর রশীদ গাজীপুরের পুলিশ সুপার হয়ে এলে বন্ধুত্ব হয় রতন দেওয়ানের সঙ্গে। এরপর এলাকায় তাঁর দাপট ও প্রতিপত্তি বেড়ে যায়।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালিয়াকৈরের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানায়, মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেড, গোল্ডেন স্কাই ফুটওয়্যার ও আগমনী সু স্থাপন করা হয়েছে পাঁচ-ছয় বছর আগে। ভবনগুলোর মালিক রতন দেওয়ান বলে তারা শুনেছে। কারখানা পরিচালনা কারা করেন জানা না থাকলেও বড় অনুষ্ঠান হলে ডিবির হারুনও আসতেন বলে শুনেছে। মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেডের সামনে ব্যবসা করেন আবদুল লতিফ মিয়া। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা গরিব মানুষ। আসল মালিক কে জানি না। তবে সবাই তো বলে এসব কারখানা রতন দেওয়ানের।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হারুন পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র জানায়, রতন দেওয়ানের চায়না জুতার কারখানা ও গার্মেন্টসে বেনামে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের শেয়ার রয়েছে। গত জুলাই মাসে কিছু শেয়ার স্ত্রী শিরিন আক্তারের নামে পবির্তন করার কথা ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৫ আগস্টের আগেই রতন দেওয়ান দেশ ছেড়েছেন  তাঁর স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রতন দেওয়ানের হয়ে কালিয়াকৈরে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তাঁর ছোট ভাই স্বপন দেওয়ান। বাসায় গিয়ে তাঁকেও পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের বিধাই গ্রামে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের পরিবারের ছয় বিঘা জমি রয়েছে বলে জানা গেছে।  স্থানীয় বাসিন্দারা বলে, ওই গ্রামের আবদুল মোতালেবের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে জমিটি কেনা হয়। পরে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামরুল ইসলাম জমি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। বছরে এক-দুবার জমি দেখতে আসতেন হারুন অর রশীদ। শ্রীপুরের ভাংনাহাটি গ্রামে এক আত্মীয়ের নামে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবুজপাতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে তাঁর আরো একটি রিসোর্ট রয়েছে। টঙ্গীর সাতাইশে মৌজায় নির্মাণাধীন জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড  গার্মেন্টসে এবং ছায়াকুঞ্জের গুশুলিয়া মৌজায় ১২ বিঘা জমিতে হারুন ও তাঁর পরিবারের নামে নির্মাণাধীন আবাসিক হোটেলের কথা বলা হলেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।</span></span></span></span></p>