<p>অন্যান্য নৌকার মতো ডিঙি নৌকায় পাটা, ছই, দাঁড়, পাল, মাস্তুল, নোঙর, দড়ি, লগি কিছুই থাকে না। শুধু থাকে গলুই আর বৈঠা। দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৯ থেকে ১০ মিটার। সেগুন, চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি কাঠে তৈরি হয় এই নৌকা। নদী বা হাওর-বাঁওড়ের তীরের মানুষজন নদী পারাপার, মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজে এটি ব্যবহার করে। উপকূল এলাকায় এই নৌকায় ভেসে ভেসে জেলেরা লইট্যা, চিটকিরি, পোপা, ফাইষ্যা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছ ধরেন। ডিঙির দামও কিছুটা কম, পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা।</p> <p>আকারে কিছুটা ছোট বলে এই নৌকা চালাতে একজন মাঝির বেশি লাগে না। গ্রামগঞ্জে অগভীর জলে এই নৌকা ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য বড় নৌকার মতো এতে মোটরযান সংযুক্ত করা হয় না বলে ডিঙির মাধ্যমে নদীদূষণের ঝুঁকিও থাকে না। ছোট আকৃতির এই বাহনটি যেমন নদীভিত্তিক অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তেমনি এটি বাংলার শিল্প-সাহিত্য ও গানে এক বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। ডিঙি নৌকা শুধু জনমানুষের প্রয়োজনের সময় ব্যবহার হয় তা নয়, এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বও আছে। গ্রামীণ জীবনের বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ ধরনের লম্বাটে ডিঙি নৌকাতে। নৌকাবাইচ দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে যেমন উত্তেজনার, তেমনি আনন্দের উৎস। দেশের অসংখ্য লোকগান, কবিতা, গল্প তৈরি হয়েছে নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে, যা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে ক্রমাগত।</p> <p>দিন দিন ডিঙি নৌকার ব্যবহার কমে আসছে। আধুনিক মোটরচালিত নৌকা, স্পিডবোট ও অন্যান্য জলযানের প্রচলনের কারণে গ্রামাঞ্চলেও এখন এর কদর বেশ কম। এদিকে কাঠের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ভালো মানের কাঠের অভাবও ডিঙি নৌকার উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করছে। তবু এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে, বিশেষ করে হাওর বা চরের মানুষের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহন।</p> <p> </p> <p>♦  আল সানি</p>