<p>ভারতের মণিপুরে ছয়টি মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে মেইতেইদের বিক্ষোভে পুড়ছে রাজ্যের ইম্ফল উপত্যকা। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে রবিবার দিল্লি ফিরে গেলেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এদিন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।</p> <p>এর আগে শনিবার ইম্ফলে তিন মন্ত্রী ও ছয় বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পরই মহারাষ্ট্রে প্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে দিল্লি ফিরলেন অমিত শাহ।</p> <p>শুক্র ও শনিবার মণিপুর থেকে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। মেইতেইরা মনে করছে, দেহগুলো জিরিবাম থেকে অপহৃত তিন নারী ও তিন শিশুর। তারা একই পরিবারের সদস্য ছিল। কুকি জঙ্গিরা তাদের অপহরণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া দেহের পরিচয় নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। ছয়টি দেহ উদ্ধারের পর থেকেই জিরিবাম জেলায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে মেইতেইরা। </p> <p>প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার পিডাব্লিউডি মন্ত্রী গোবিন্দাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। সে সময় মন্ত্রী, বিধায়ক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না। ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা প্রথমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। ইম্ফল পূর্বে লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের পৈতৃক বাড়িতেও হামলার অভিযোগ উঠেছে।</p> <p>এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও আসাম রাইফেলসের সেনাদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমন করতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা। তার পরও মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে যাওয়ার পথে অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে লোহার রড ফেলে রাখা হয়েছে। হামলাকারীদের দাবি, জিরিবাম জেলায় ছয়জনকে খুন করায় অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। জিরিবাম, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিমে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, চূড়াচাঁদপুরসহ মোট সাত জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব এলাকা থেকে মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একাধিক পিস্তল, কার্তুজ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।</p> <p>আনন্দবাজারের তথ্য অনুসারে, ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহের শুরুতে। মণিপুরের জিরিবামে কুকি জঙ্গি ও সিআরপিএফ সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই সময় একদল কুকি জঙ্গি মেইতেই সম্প্রদায়ের তিন নারী ও তিন শিশুকে অপহরণ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১০ কুকি জঙ্গি। যদিও কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহত ১০ জন ছিলেন ‘গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী’। তাদের দেহ মিজোরামে নিতে চেয়ে গত সোমবার থেকে শিলচরের হাসপাতালের মর্গ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল কুকিরা। শনিবার সকালে পুলিশ ১০ জনের দেহ নিয়ে কুকি অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুরের দিকে রওনা হলে তাদের ঘেরাও করে কুকিরা। বিক্ষোভ দমন করতে লাঠি চালায় পুলিশ। তার মধ্যে ছয়জনের দেহ উদ্ধার ঘিরে শুরু হয় মেইতেইদের বিক্ষোভ।</p>