<p>একসময় পুলিশ দলটি ছিল শিরোপাপ্রত্যাশীদের ‘সাইড কিক’, পয়েন্ট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি গোল পার্থক্য বাড়িয়ে নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ! কিন্তু দিন বদলেছে। পুলিশ ফুটবল ক্লাব নেতিবাচক সেই ইমেজ ঝেড়ে ফেলেছে। গত মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তৃতীয় হওয়া পুলিশ এফসি এবার ৪ নম্বরে আছে। তবে টানা দুই মৌসুমের আশাপ্রদ নৈপুণ্য দেখানো দলটি এখন শিরোপা জয়েরও স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নকে দিবাস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই।</p> <p>ঢাকার ফুটবলে অনেক আগে থেকেই খেলে আসছে দলটি। কিন্তু কখনোই সাফল্যের পেছনে ছোটেনি। লিগে টিকে থাকাই তাদের ছিল মূল লক্ষ্য। সেই পুলিশ এফসির নামই এখন বসুন্ধরা কিংস-আবাহনী কিংবা মোহামেডানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস লিগে একটি ম্যাচই হেরেছিল, সেটা এই পুলিশের কাছে। এবারও লিগের ফিরতি পর্বে গত শনিবার কিংসকে তাদেরই ঘরের মাঠে ২-২ গোলে রুখে দিয়েছে। টানা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে পুলিশের পারফরম্যান্স বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। এবারের লিগে ১৬ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে দলটি। খেলেছে ফেডারেশন কাপে সেমিফাইনালে এবং স্বাধীনতা কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। দলের মধ্যে একতা থাকার কারণেই পারফরম্যান্সের ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ও ডিআইজি রেজাউল হায়দার, ‘আমরা একটা ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকি, সেটা ডিসিপ্লিন। বাহিনীর টিম যখন-তখন খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হয়। যারা পুলিশের আর যারা বাইরের, তাদের আমরা আলাদা করি না। এতে খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়াটাও বাড়ে।’</p> <p>২০২১ সাল থেকে পুলিশের কোচ হিসেবে আছেন রুমানিয়ার উয়েফা প্রো লাইসেন্সধারী অ্যারিস্টিকা চিওবা। মাঠের সাফল্য পেতে এই কোচকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে জানালেন ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক, ‘আমাদের যিনি কোচ আছেন ওনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছি। সেরা একাদশ বা কে কখন খেলবে, সেটার সিদ্ধান্ত নিতে ম্যানেজমেন্ট থেকে কখনো হস্তক্ষেপ করি না। কোচ যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত। যাতে মাঠের কাজটা মাঠেই হয়।’ চিওবাও বলছেন, স্বাধীনতা পাওয়াতেই তাঁর কাজ সহজ হয়ে যায়, ‘আমার দলের কেউ আমার কাজে বাধা দেয় না। হ্যাঁ, ম্যানেজমেন্ট আমাকে পরামর্শ দেয় এবং আমি সেটা মেনেই কাজ করি। খেলোয়াড়রাও আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।’</p> <p>এই দলটির সুযোগ-সুবিধাও উন্নত মানের। আছে নিজস্ব অনুশীলন মাঠ, সুইমিংপুল, জিমসহ নিজস্ব হাসপাতাল। কোনো খেলোয়াড় চোটে পড়লে তাঁকে চিকিৎসা নিয়ে ভাবতে হয় না। ক্লাবই চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। এতে আর্থিক দিক নিয়ে চিন্তা না করে মাঠে সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিতে পারেন পুলিশের ফুটবলাররা। এই ক্লাবে ছয় বছর ধরে খেলছেন লেফট ব্যাক ঈসা ফয়সাল। পুলিশে খেলেই জাতীয় দলে প্রথমবার সুযোগ পান তিনি। এখন হাভিয়ের কাবরেরার দলের অন্যতম ফুটবলার হয়ে উঠেছেন। ক্লাবের অধিনায়কও তিনি। ঈসার আশা, অচিরেই পুলিশ এফসি শিরোপাও জিতবে, ‘আমাদের ক্লাবের যিনি সভাপতি আছেন (পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান), তিনি নিয়মিত মাঠে আসেন। আমাদের উত্সাহ দেন। এতে আমাদের ভালো করার আগ্রহটা বেড়ে যায়। যখন ক্লাবের উচ্চপদস্থ কেউ এভাবে উৎসাহ দেন, তখন আপনি এমনিতেই ভালো করতে চাইবেন। আমাদের এই দলেও তা-ই হয়েছে। এটা ঠিক, আমাদের দলে উঁচু মানের বিদেশি নেই। তবে আমরা যে পিছিয়ে, তা-ও না। সামনেই হয়তো আমাদের শিরোপা জিততে দেখতে পাবেন।’ </p> <p>আগামী মৌসুমে পরিকল্পনায় বদল আনতে চায় ক্লাবটি। তবে আর্থিক দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে রেজাউল হায়দারকে, ‘শক্তিশালী দল গড়তে হলে আর্থিক ব্যাপারটা সামনে চলে আসে। শীর্ষ অন্য দলের একজনের যে মূল্য, তা আমাদের চারজনের সমান হতে পারে! এর পরও আগামী বছর আমাদের পরিকল্পনা আছে আরো ভালো পর্যায়ে যাওয়ার।’ </p> <p>পুলিশ এফসি কিংবা অন্য কোনো দল এই ‘ভালো’র প্রতিযোগিতায় যত মন দিয়ে নামবে, ততই মঙ্গল দেশের ফুটবলের জন্য।</p>