<p>জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, গত দুই বছরে কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন এবং ২০২৩ সালে ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেটসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরু থেকে মালয়েশিয়া, ওমানসহ বেশ কয়েকটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এসব শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের জনশক্তি রপ্তানির ওপর। এ কারণে চলতি বছর জনশক্তি রপ্তানির রেকর্ড হারাতে পারে বাংলাদেশ।</p> <p>বিএমইটির তথ্য মতে, চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৪১৯ জন কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৪৩ হাজার ৪২৬ আর ২০২২ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৯১ হাজার ১৭।</p> <p>জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে চলতি বছর সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বজুড়ে ইতিবাচক যে ইমেজ রয়েছে সেটিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, যেসব দেশে দূতাবাস এবং প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন তাঁদের আহবান জানিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য সম্ভাব্য দেশের তালিকা করা যেতে পারে। আর রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তারা বলছেন, সিন্ডিকেটমুক্ত করে মালয়েশিয়া-ওমানে ফের শ্রমবাজার চালু এবং বিশেষ কনসুলেট অফিস স্থাপন করে ইউরোপের শ্রমবাজারের ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ করা গেলে বর্তমান পরিস্থিতি অতিক্রম করে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।</p> <p>মালয়েশিয়া-ওমানের শ্রমবাজার বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনশক্তি রপ্তানিতে শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেট, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ওমান এবং চলতি বছরের ৩১ মে থেকে বাংলাদেশের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।</p> <p>এই দুটি শ্রমবাজারে গত দুই বছর রেকর্ডসংখ্যক কর্মী গেছেন। বিএমইটির তথ্য মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমানে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ জন এবং মালয়েশিয়ায় ৫০ হাজার ৯০ জন কর্মী গেছেন। আর ২০২৩ সালে ওমানে এক লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩ জন এবং মালয়েশিয়ায় তিন লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী গেছেন। সরকারি হিসাবে চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৮টি দেশে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৪১৯ জন বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। শুধু ওমান ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া কমে গেছে।</p> <p>দ্রুততম সময়ে এ দুটি শ্রমবাজার চালু করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়া ও ওমানের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। সিন্ডিকেটমুক্ত করে আবারও শ্রমবাজার দুটি চালু করতে হবে। কারণ এ দুটি আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।’</p> <p><strong>বর্তমানে শ্রমবাজার সৌদিকেন্দ্রিক</strong></p> <p>বাংলাদেশের জন্য বর্তমানে একমাত্র সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত। প্রতিবছর দেশটিতে লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক যাচ্ছেন। এরপর বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া ও ওমানে গেলেও দেশ দুটির শ্রমবাজার বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য বন্ধ রয়েছে। এর বাইরে ১১টি শ্রমবাজারে কয়েক হাজার করে বাংলাদেশি কর্মী যান। বাকি শ্রমবাজারে যান নামমাত্র কর্মী। বিএমইটির তথ্য মতে, গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে গেছেন দুই লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৩ জন কর্মী। সেই জায়গায় চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গেছেন তিন লাখ এক হাজার ৮৮৩ জন কর্মী ।</p> <p><strong>৫টিতে বাড়ছে, কমছে ৫টিতে, সিঙ্গাপুর সমান</strong></p> <p>সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমান ছাড়া ১১টি শ্রমবাজারে শত থেকে হাজারের মধ্যে বাংলাদেশি কর্মী যান। এই শ্রমবাজারগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, জর্দান, লেবানন, লিবিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া।</p> <p>চলতি বছরের হিসাবে দেখা গেছে, এই ১১টি শ্রমবাজারের মধ্যে পাঁচটি শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। আর পাঁচটি শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমেছে। সিঙ্গাপুরে গত বছরের সমপরিমাণ কর্মী গেছেন। যে পাঁচটি শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়া বেড়েছে সেগুলো হলো কাতার, জর্দান, লেবানন, লিবিয়া ও জাপান। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী যাওয়া কমেছে।</p> <p>এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ কনসুলেট অফিসের মাধ্যমে কর্মীর ভিসা সহজ করতে হবে জানিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচলিত বাজারের বাইরে আমাদের বাজার হচ্ছে ইউরোপের বাজার। ইউরোপের বাজারের বড় সমস্যা, যেসব দেশ বাংলাদেশি কর্মী নেয় সেসব অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। এর ফলে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই সেখানে বিশেষ কনসুলেট অফিস করা যেতে পারে। তাহলে ইউরোপে আমাদের শ্রমবাজার পুরোদমে চালু করা যাবে।’</p>