<p>ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলাকে বিভক্ত করেছে গাজীখালী নদী। দুই জেলার সীমান্তবর্তীতে এ নদীর অবস্থান। কিন্তু এ নদীতে একটি সেতুর অভাবে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ‘মহিষালোহা জব্বারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’র শিক্ষার্থী দিন দিন কমে আসছিল। জনপ্রতিনিধিদের কাছে এ নদীর ওপর সেতু করার জন্য এলাকাবাসীর দাবি ছিল প্রায় তিন যুগের। কিন্তু আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের প্রতিশ্রতি। পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি কারো সহায়তা না পেয়ে অবশেষে এক এনজিও ব্যক্তিত্বের উদ্যোগে এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় গাজীখালী নদীর ওপর নির্মাণ করেছে একটি সেতু। নিজেদের অর্থায়নে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ৮ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মিত হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।</p> <p>তবে এ সেতু নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী ও মহিষালোহা জব্বারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। সেতু নির্মাণের তিনভাগের দুইভাগ অর্থ তিনিই দিয়েছেন। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাওয়াখোলা-মহিষালোহা মৈত্রী সেতু’। এটি নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা ও মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গাজীখালী নদীর ওপর।   </p> <p>এলাকাবাসী জানান, মহিষালোহা জব্বারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া, পারুহালা, মারাপারা, চারিপাড়া, কাওয়াখোলা, বড় নালাইসহ কয়েকটি গ্রামের। আগে বিদ্যালয়ে যেতে হতো গাজীখালী নদীতে খেয়া পার হয়ে। কোনো সময় খেয়া থাকতো আবার কোন সময় থাকতো না। আবার অনেক সময় বাঁশের সাকো ব্যবহার করা হতো। তা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ঝুঁকি ছিল। ফলে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেতু না থাকাতে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী দিন দিন কমে আসছিল। গাজীখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিগত ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের কাছে এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রতি আর আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন। কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা না পেয়ে গত তিন বছর ধরে এলাকাবাসীদের নিয়ে একাধিকবার সভা করেছেন সিরাজুল ইসলাম। পরে এলাকাবাসী ৬ লাখ টাকা তুলে দেন সিরাজুল ইসলামের কাছে। সেতুটি নির্মানে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে সেতুর উভয়পাশে এখনো রয়েছে গেছে কাঁচা রাস্তা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সেতুটি উদ্বোধন করেন সিরাজুল ইসলাম। </p> <p>এই সেতু দিয়ে বড় যানবাহন ছাড়া ভ্যান অটোরিকশা, প্রাইভেটকার পারাপার হলেও কোনও ঝুঁকি নেই। এ সেতু দিয়ে বর্তমানে সাটুরিয়া উপজেলার সটুরিয়া, ধানকোড়া, মহিষালোহা, গওলা, ছইনট্যা গ্রামের বাসিন্দা ও ধামরাই উপজেলার হাতকোড়া,পারুহালা, মারাপারা, চারিপাড়া, কাওয়াখোলা, বড় নালাইসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে। তাদের কৃষিপণ্য বাজারজাতকরনে বেশ সুবিধা হয়েছে। এর আগে সেতু না থাকায় মহিষালোহা জব্বারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মহিষালোহা হাফিজিয়া মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ  গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাদের কমপক্ষে তিন-চার কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে।</p> <p>স্থানীয় গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, সেখানে একটি সেতুর খুব দরকার ছিল কিন্তু আমরা জনপ্রতিনিধিরা তা করে দিতে পারিনি। কিন্তু প্রশিকার প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলাম উদ্যোগ নিয়ে সেতুটি নির্মাণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। তার সদিচ্ছাতেই মূলত সেতুটি নির্মিত হয়েছে। </p> <p>সেতু নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা কাওয়াখোলা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরে মহিষালোহা জব্বারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি। এখনো আমাদের এলাকার অনেক শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। কিন্তু গাজীখালী নদী পার হয়ে ছোটছোট ছেয়েমেয়েদের যেতে বেশ অসুবিধা হতো। এতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিন দিন কমে আসছিল। তাই নিজের বিবেকের তাড়নায় একটি সেতু করার উদ্যোগ গ্রহন করি এবং তাতে সফলও হয়েছি। </p>