<p>একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন। পেয়েছেন একুশে পদক। চিরসবুজ খ্যাত এ কাজের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই এই গুণী অভিনেতা লেখালেখি করেন ফেসবুকে।</p> <p>আফজাল হোসেন বুধবার (৩০ অক্টোবর) ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দেশের বর্তমান চিত্র নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি দেশ এবং দেশের মানুষের কথা তুলে ধরেছেন।</p> <p>ফেসবুকে অভিনেতার দীর্ঘ সেই স্ট্যাটাসটি তে তিনি লেখেন, ‘আমরা একটা দেশে বাস করি। দাবি করি, দেশটা আমাদের। দেশ আমাদের হলে কিছু দায় তো থাকে। দায় কী, কেন—অনেক মানুষ হয়তো বোঝে না। এই না বোঝা দোষের নয়। কিন্তু বুদ্ধিমান, বুঝদার মানুষদের কেনো কীর্তিকলাপে মানুষের জীবনে হয়রানি বেড়েই চলেছে! এ ভয়ানক বিপদ থেকে উদ্ধারের কী উপায়?’</p> <p>তিনি লেখেন, ‘দোকানে দরকারি জিনিস কিনতে গিয়ে মানুষ দামে ঠকছে। বুদ্ধি খাটিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া পণ্যের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে সেই পণ্য ক্রেতাকে কেনানো হচ্ছে। কেউ বলবে না, এইসব বুদ্ধির প্যাঁচ ভালো। সেদিন দেখতে পেলাম, পোশাকে চেহারায় ধর্ম পালনকারী একজন মানুষ—যার কাছে শুধু সততাই আশা করা উচিত, তিনি আসলে প্রচণ্ড অসৎ। জানা গেল, ডিমের দাম বৃদ্ধিতে এই ধর্মপালনকারী লোকটার হাত রয়েছে। এই রকমের মানুষকে নিজের ধনসম্পদ বৃদ্ধির অসৎ বুদ্ধি খাটাতে দেখলে আশা টিকে থাকে না।’</p> <p>তিনি লেখেন, ‘খাদ্যে প্রতারণা, ওষুধে, চিকিৎসায়, নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে, প্রাতিষ্ঠানিক সেবায়, শিক্ষায়, তথ্য প্রবাহে এমনকি সম্পর্কেও মানুষ অন্যায় বুদ্ধি খাটিয়ে জীবনযাপন জটিল করে তুলছে। সে জটিলতায় পড়ে মানুষের হয় করুণ দশা। কিছু মানুষ শুধুই নিজের সমৃদ্ধির জন্য দেশের সবার সঙ্গে ক্রমাগত অন্যায় বুদ্ধি খাটিয়ে খাটিয়ে- শেষমেশ কতটা লাভ হয়, কতটুকু হয় অর্জন?’</p> <p>তিনি বলেন, ‘তথ্য বের হয়ে আসে, অমুকে এত হাজার কোটি টাকা চাঁদা তুলে খেয়েছে। জানা যায়, অমুকে বিদেশে এত পরিমাণ টাকা সরিয়েছে—যার পরিমাণ ভাবাও অসম্ভব। এই জাতীয় মানুষগুলো মানসিকভাবে সুস্থ বলে কি ভাবা যায়? এ সব মানুষের প্রিয়জন, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনরা এই ঘটনা ছড়িয়ে গেলে কি রটনা ভেবে উড়িয়ে দিতে পারে? যে মানুষটা রোজ মিথ্যা খবর পরিবেশন করে করে দেখে পাঠক, দর্শকসংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে, কেমন অনুভব করে সে! গৌরববোধ করে। গৌরববোধই করে। প্রতারণা সাফল্য এনে দিচ্ছে বিবেচনা করে প্রতারণার মাত্রা দেয় বাড়িয়ে। এমনই তো অভিজ্ঞতা আমাদের।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘কত কত মানুষদের মরতে হলো। সবাই মরেছে সরল বিশ্বাসে। বিশ্বাস, দেশের ভালো হবে। মানুষ ভালো থাকবে। আমরা ভালো থাকবার মতো কথায়, খবরে লাভ হবে মনে করি না। লাভ দেখি উত্তেজনা ছড়ানোয়, হতাশ হওয়ার মতো গল্পে, বিবরণে। নানা রকমের প্রতারণার খাঁচায় একটা দেশ, দেশের মানুষেরা ক্রমশ আটকা পড়ে যাচ্ছে। এ এক নয়া সংকট। মানুষ বহুকাল ধরে দেখে আসছে—দেশ বদলের জন্য মানুষ নিজের প্রাণকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে। বেঁচে থাকারা এতটাই নির্লজ্জ এবং স্বার্থপর- মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের ওপর হেসে খেলে নিজের নিজের সাফল্য সৌধ নির্মাণ করতে চায়। এইসব অসভ্য চাওয়া পূর্ণ হয়ও। মানুষ কি এসবকে সাফল্য, পরম প্রাপ্তি ভাবতে পারে?’</p> <p>একদিনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘একদিনের একটা ঘটনা। কবরস্থানে এক পরিচিতজনের দাফন ক্রিয়া শেষ করে ফিরছি। ফেরার সময় এক কীর্তিমানের নাম দেখে সে কবরের পাশে আমরা কজনা দু'দণ্ড দাঁড়াই। তিনি আমাদের চেনা, কখনো পরিচয় হয়নি তবু মনে হয় কাছের ছিলেন। দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করি। তারপর মনে হয়, একটু ঘুরে দেখা যাক- আর কোন কোন নামি মানুষের কবর এ কবরস্থানে রয়েছে। দেখতে পাই—একটা কবরের পাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে মনোযোগ দিয়ে কী যেন দেখছে। কৌতূহলে আমরাও দাঁড়াই। একজন মহিলার কবর। নাম, ঠিকানা লেখা। কবে, কোন সনে মৃত্যু উল্লেখ করা আরো বড় করে উল্লেখ করা নামি, সফল স্বামীর নাম ও পরিচয়। বড় করে লেখা স্বামীর নামটা পড়ে দু-একজনকে অশোভন উক্তি করতে শুনি। ফেরার পথে মনে প্রশ্ন জাগে, টাকা-পয়সা, ক্ষমতা, সাফল্য- এসবের জন্য মানুষ কত বেপরোয়া। দুনিয়ায় কি এ জন্যেই আসা! সব পেতে চাওয়ায় আনন্দ আছে- সব কিছু পেয়ে যাওয়াই কি জীবনের সার্থকতা?’</p>