<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাবনার ঈশ্বরদীতে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে তা বিক্রির ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন এক যুবলীগ নেতা। ঈশ্বরদী ইপিজেড, নির্মীয়মাণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পাকশী রেলওয়ে, খাদ্য গোডাউনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই বালু সরবরাহ করছেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা হলেন পাকশী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুম ওরফে বালু মাসুম। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পাকশীর চররূপপুর ফটু মার্কেটের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে অন্তত ২৫-৩০ লাখ স্কয়ার ফুট বালু উত্তোলন করেছেন তিনি। যার বাজারমূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।</p> <p style="text-align:justify">সেসব বালু বর্তমানে স্তূপ আকারে জমা করে বিক্রি করছেন। আর এই কাজে সহযোগিতা করছেন পাকশী ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতা। বালু উত্তোলনের সময় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মোদক কুমার কান্তি (বর্তমানে পাবনার কামালপুর তদন্ত কেন্দ্রে বদলী) ও পাকশী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ ইমদাদুল হকসহ অন্য সদস্যরা।</p> <p style="text-align:justify">বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা জানান, আওয়ামী লীগের সময় মাসুম পদ্মা নদী থেকে ভরাট ও মোটা বালু উত্তোলন করতেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতাকে কমিশন দিয়ে ও নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করেন তিনি। সেই বালু বর্তমানে প্রতি ঘনফুট ৮ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু বিক্রি থেকে একটি অংশ পাকশী ইউনিয়ন বিএনপির কয়েকজন সাবেক নেতা ও যুবদল নেতাসহ অন্যান্যদের দিতে হচ্ছে। তাদের সঙ্গে চুক্তিতেই বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্রটি অভিযোগ করে জানান, ‘এর আগে ভরাটের বালু প্রতি ঘনফুট বিক্রয় হতো ৩ থেকে ৪ টাকায়। এত ভাগাভাগির কারণে সেই বালু এখন বিক্রয় হচ্ছে ৮ টাকা ঘনফুট দরে।</p> <p style="text-align:justify">চররূপপুর ফটু মার্কেট সংলগ্ন বালুমহাল সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপির সাবেক নেতাদের মোটা বালুর জন্য প্রতি ঘনফুটে চাঁদা দিতে হচ্ছে সাড়ে ৩ টাকা। আর ভরাট বালুর জন্য দিতে হচ্ছে ৮০ পয়সা।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর ফটু মার্কেট এলাকার মাসুদুর রহমান মাসুম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১০-১২ বছর ধরে বালুর ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। পদ্মা নদীর নিলামে কেনা চর থেকে নামমাত্র বালু ক্রয় করে স্তুপ করেন। অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু স্তুপ করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন তিনি। এরইমধ্যে প্রায় ৭০ লাখ টাকায় কিনেছেন ট্রাক, ট্র্যাক্টর ও ‘স্টিয়ারিং’ গাড়ি। আরো রয়েছে বালু ভরাটের জন্য দুটি ‘পেলুডা গাড়ি’। পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কিনেছেন প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ড্রেজার নৌকা। বালু আনলোডের জন্য কিনেছেন প্রায় ১৩ লাখ টাকা মূল্যের আনলোড মেশিন। হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। চলাফেরা করেন দলবলে। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালুই হচ্ছে বালু মাসুমের কোটিপতি হওয়ার আশ্চর্যপ্রদীপ।</p> <p style="text-align:justify">অনেকে ভেবেছিলেন সরকার পরিবর্তনের কারণে মাসুমের এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতাদের কমিশন দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।</p> <p style="text-align:justify">তবে পাকশী ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির কোনো কমিটি নেই। তার ওপর দলের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং।</p> <p style="text-align:justify">৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর যে যেভাবে পাচ্ছে সেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে সুবিধা নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজেই লোকজন নিয়ে গ্রুপ তৈরি করে কাজ-কর্ম করছেন। কাউকে সাংগঠনিকভাবে নিষেধ করা বা বাধা দেওয়ার মতো দায়িত্বশীল কেউ নেই। তাই এসব বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে কমিটি গঠন হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিঁয়াজো করে চলা বন্ধ করা সম্ভব হবে বলেও জানান বিএনপি নেতারা।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও পাকশী বিএনপির প্রবীণ নেতা মো. আব্দুস সোবহান জানান, আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির কোনো নেতা দখলবাজি, চাঁদাবাজি করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে নিষেধ রয়েছে। যদি কেউ করে, তাহলে দল এর দায়ভাব নেবে না।</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে লক্ষীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আকিবুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর তিনি ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেছেন। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে মাসুদুর রহমান মাসুমের বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এরইমধ্যে তা বন্ধ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।</p> <p style="text-align:justify">এসব বিষয়ে জানতে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী পাকশীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান ওরফে বালু মাসুমের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাকে বারবার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।</p> <p style="text-align:justify">তবে তার স্বজনরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে মাসুম অপরিচিতদের ফোন রিসিভ করেন না। জনসমক্ষে খুব একটা চলাফেরা করেন না। লোকজন রেখে বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।</p>