<p>মোহন রবিদাস চা বাগানের সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় লোকপ্রশাসন থেকে অজর্ন করেছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। সুযোগ থাকলেও যাননি সরকারি চাকরিতে। পড়াশোনা শেষে মোহন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টে (বিএলএসটি) কমিউনিটি জাস্টিস ফেলো এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। পাশাপাশি  চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে চলেছেন। বাবা মধু রবিদাস, মা লাখপতি রবিদাস চা-শ্রমিক ছিলেন। তাই শিকড়কে ভুলে যাননি কখনো। এবার ৩৫ বছর বয়সী মোহন রবিদাস ঢাকা থেকে গ্রামে এসে শুরু করেছেন কৃষিকাজ। এক সাথে ১১টি জাতের সফল ফলন ঘটিয়ে চমকে দিয়েছেন চা বাগানবাসীকে এবং পেয়েছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তার পরিচিতি। </p> <p>একজন আদর্শ কৃষকও বলা যায় মোহন রবিদাসকে। স্থানীয়রাও তার এমন সফলতায় খুশি। তিনি চা বাগানের পতিত সাত বিঘা জমিতে একসঙ্গে ১১ জাতের ধান চাষ করেছেন, যার অধিকাংশই বিদেশি। ফসলে রাসায়নিক কোনো ওষুধ প্রয়োগ করেননি। তারপর ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশাবাদী। </p> <p>স্থানীয় কৃষকরা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে প্রতিকূল পরিবেশে মোহন ১১ প্রকার ধান চাষ করেছেন। এ ধান আমাদের এলাকায় একেবারে নতুন। ধান কাটার পর অনেকেই বীজ সংগ্রহ করার চিন্তা করছেন। এসব ধান চাষ আগে এ এলাকায় কেউ কখনো করেনি। প্রথমবারের মতো ফলনও হয়েছে ভালো।</p> <p>শমসেরনগর গ্রামের কৃষক অমলিক রবিদাস ও নির্মল গাইন বলেন, তারা মোহন রবিদাসের ধানক্ষেত দেখছেন। পর্যবেক্ষণ করছেন। তাতে মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। বিভিন্ন রঙের এবং লম্বা ও চিকন বিভিন্ন আকারের ধান পাকতে শুরু করেছে। ইতি মধ্য মাঠে ধান কাটা চলছে। সবচেয়ে বেশি ভালো ফলন হয়েছে ব্রি১০৩ হাইব্রিড ধানের। এটি নতুন জাতের ধান। বাজারে বিক্রিও হয় বেশি দামে। আগামী বছর এ জাতের ধান আবাদ করার আগ্রহ অধিকাংশ কৃষকের।</p> <p>উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দেশে এক সাথে ১১টি জাত ধান রোপন বিরল। কৃষকরা সবোর্চ্চ ৫/৬টি ধানের জাত রোপন করেছেন। কিন্তু মোহন রবিদাস এক সাথে ১১ জাতের ধানচাষ এলাকায় সাড়া ফেলেছে। মোহন রবিদাসের পরীক্ষামূলক এ চাষ স্থানীয় কৃষিতে নতুন কিছু যোগ করবে। </p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল ক্ষেত। চারপাশে ধানের বিভিন্ন কালার। একেক প্লটে একেক প্রকার ধান। মাঠে মোহন রবিদাস নিজেই ধান কাটছেন। সঙ্গে আরো কয়েকজন চা শ্রমিক পাকা ধান কাটছেন। বাতাসে ধান দুলছে। চা বাগানের সমতল ভুমিতে ধানচাষ দেখে আশপাশের মানুষজন খুশি।</p> <p>সফল কৃষি উদ্যোক্তা মোহন রবিদাস জানান, প্রচলিত ধানের বাইরে গিয়ে বিদেশি জাতের ধান চাষের বিষয়টি তার মাথায় আসে। পরে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে সব মিলিয়ে ১১ জাতের ধানবীজ সংগ্রহ করেন। ক্যামেলিয়া গল্ফ মাঠের পাশে পতিত সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। পার্পেল রাইস, সুগন্ধি বাসমতি, ব্ল্যাক রাইস, সুগন্ধি কস্তুরি, রড (পাকিস্তানী), তুলসীমালা, ব্রি১০৩সহ ১১ জাতের বীজ রোপণ করেন চলতি আমন মৌসুমে। উঁচু জমি এ ধানগুলো চাষ করার জন্য খুব উপযোগী। প্রতি বিঘা জমিতে চারা, শ্রমিক, সার, কীটনাশকসহ খরচ হয়েছে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা করে। বর্তমানে মাঠে ধান কাটা চলছে।  কৃষকদের সুবিধার জন্য ধানের বীজ বিক্রি করবেন। যাতে এসব জাতের ধানবীজ স্থানীয় কৃষকরা সহজে পেতে পারেন। </p> <p>তিনি আরো জানান, ব্রি-১০৩ ধান বিভিন্ন স্থান থেকে  অনলাইনে বীজ অর্ডার দিচ্ছেন কৃষকরা। তিনি আশা করছেন ধান বিক্রি করে আয় হবে তার।</p> <p>কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষক মোহন রবিদাস ১১ জাতের ধানের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। এ জাতের ধান এ উপজেলার জন্য বিরল। অনেকে হয়তো এমন চাষ কখনো দেখেননি। এখানে অনেক গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এ জাতের ধান আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধান উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্য ঘাটতি কমবে। </p>