<p>ছাত্রসংগঠন হলেও মানিকগঞ্জে ছাত্রলীগ ছিল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের তল্পিবাহক। পরিবহন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি,  বালুমহালসহ বিভিন্ন খাতে ছাত্রলীগ নেতারা সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেকের লেঠেল বাহিনী হিসাবে কাজ করেছে। সেই সঙ্গে কামিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।</p> <p>শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে বেশ কয়েক দফায় মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তন হয়েছে। তবে সর্বশেষ যে কমিটি ছিল তাদের নিয়ে বিতর্ক ছিল সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ জেলা কমিটি গঠন হয় ২০২১ সালে। এর সভাপতি হন এস এ সিফাত কোরাইশী সুমন আর সাধারণ সম্পাদক হন রাজিউল ইসলাম। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছিল তারা সবাই ছিল জাহিদ মালেকের অনুসারী। কমিটিতে স্থান পাওয়াদের বিরুদ্ধে বিবাহিত, ধর্ষণ মামলা, মাদক ব্যবসা, মাদক গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগে নিয়ে প্রতিবাদ হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ধমকে দ্রুতই তা মিলিয়ে যায়।</p> <p>জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী সুমন ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রীর একান্ত অনুগত। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত দখলবাজিতে মন্ত্রীর অনুগত হিসেবে তার উপস্থিতি ছিল জোরালো। অভিযোগ আছে, এসব খাত থেকে গত তিন-চার বছরে সিফাত কোরাইশী সুমন কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অবৈধ কাজে সুপারিশের নামেও হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ যেন ‘টাকার কারখানা’, খালি পকেটে এসে নেতারা কোটিপতি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/26/1729942584-a8ad113e6ca82416c15537b4ca1c3d51.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ যেন ‘টাকার কারখানা’, খালি পকেটে এসে নেতারা কোটিপতি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2024/10/26/1439371" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সাধারণ সম্পাদক রাজিউল ইসলামেরও এসব খাত থেকে বড় ধরনের আয়-রোজগার ছিল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের মনোনয়ন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তখন নিউজ হয়েছে। এই দুজনের বিরুদ্ধে গত ৪ আগস্ট মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার মামলা হয়েছে।</p> <p>এই কামিটির সহসভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে সাটুরিয়া থানায় ২০১৯ সালে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা ছিল। ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিউল ছিলেন বিবাহিত। তার বিরুদ্ধে হরিরামপুর থানায় মাদক ও ছিনতাইএর একাধিক মামলা ছিল। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান মিমের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও ব্যবসার অভিযোগ ছিল। এসক্রান্ত একটি ভিডিও তখন সামাজিক যোগাযোগ ভাইরাল হয়।</p> <p>জেলা কমিটি ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটিতে স্থান পায় বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত বিতর্কিতরা। শিবালয় উপজেলা সদর উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগ কমিটিতে সভাপতি করা হয় সজিবুল রহমানকে। মাদকসেবী হিসেবে সে সর্বজন পরিচিত। মাদকদ্রব্য কেনার জন্য সে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির কাছে চাঁদা চাইতেন। না দিলে হামলা করা হতো নেতাকর্মীদের নিয়ে।</p> <p>অভিযুক্তরা বর্তমানে পলাতক থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘এরা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যা করেছে তাতে আমরা লজ্জিত। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনটিকে এরা পচিয়ে দিয়েছে।’</p> <p>সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, ছাত্রলীগ মানিকগঞ্জে একটা ভয়ংকর বাহিনী হিসেব পরিচিত হয়ে উঠেছিল। সাধারণ মানুষ তাদের ভয় পেত, ঘৃণা করত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে না পেরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পালিয়ে গা ঢাকা দেওয়া সেটাই প্রমাণ করে।<br />  </p>