<p>‘মা আমার জন্য দোয়া করিও। আমি মারা গেলে আমার লাশ দাফন করো না, রাজপথে রেখে দিও। দাবি আদায় হওয়ার পর দেশ শান্ত হলে লাশ নিও।’ ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আগে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে শেষ কথা হিসেবে এসব কথা বলেছিলেন রাজধানীর উত্তরায় নিহত টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শেখ ফাহমিন জাফর।</p> <p>বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) নিহত ফাহমিনের মা প্রায় বাকরুদ্ধ কাজী লুলুল মাকহমিন এসব কথা বলেন।</p> <p>শেখ ফাহমিন জাফরের বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার তারটিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম শেখ আবু জাফর। ফাহমিন মায়ের সঙ্গে দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর মাদরাসা রোডে বসবাস করতেন। সে টঙ্গী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র ছিল। তার বাবা রাজশাহীতে একটি  বীমা কম্পানিতে কর্মরত।</p> <p>ফাহমিনের মা বলেন, ‘সেদিন (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ফাহমিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে যায়, মা আমার জন্য দোয়া করো। আমি মারা গেলে আমার লাশ দাফন করো না, রাজপথে রেখে দিও। দাবি আদায় হওয়ার পর দেশ শান্ত হলে আমার লাশ নিও। আমার মতো অনেকের মৃত্যু হলে সবার লাশ রাজপথে থাকবে। অনেক মারাই তোমাকে সহযোগিতা করবে, চিন্তা করো না। এটাই ছিল আমার ছেলের শেষ কথা।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘এদিন বিকেল পৌনে ৩টার সময় খবর পাই ফাহমিন হাসপাতালে ভর্তি। আমি উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলের লাশ। তার সারা শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর জ্ঞান ফিরলে ছেলের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করি। ছেলের লাশের কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি। কেউ কোনো খবরও নেয়নি। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলাও করিনি। কারণ এখন মামলা  নেবে না। সময় হলে ছেলে হত্যার বিচার চাইব। প্রশাসনের কেউ যোগাযোগ করেনি। এখন ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। কখন দিন যায়, রাত হয়, জানি না।’ </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমার তিন ছেলের মধ্যে ফাহমিন ছিল সবার ছোট। সে খুব মেধাবী ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতাও লিখত আমার ছেলে। আজ সবই স্মৃতি হয়ে সব সময় আমার চোখে ভাসে।’</p> <p>টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফাহমিন তার মায়ের সঙ্গে ঢাকার দক্ষিণখান থানার গাওয়াইর মাদরাসা রোডে থাকত। টঙ্গী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করত। ফাহমিন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তারপর সে টঙ্গী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। তাদের মধ্যে শেখ ফাহমিন নিহত হয়।</p>