<p>মানুষ স্বভাবগতভাবে সুন্দরের পূজারি। আর এই সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল ও দাড়ি। যা নিয়ে মানুষের ভাবনারও শেষ নেই। ছেলেদের সৌন্দর্যের অনেকটাই বহন করে চুল-দাড়িতেই। তাই সৌন্দর্যবর্ধনে নরসুন্দরের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। </p> <p>চুল ও দাড়ি কেটে সুন্দর করা যাদের পেশা তারাই নরসুন্দর। তারা আমাদের কাছে নাপিত হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই খাটিয়ায় বসে চুল কাটা হারিয়ে যেতে বসেছে। পিঁড়িতে বা খাটিয়ায় বসে নরসুন্দরের হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কাটার রীতি  আবহমান কাল ধরে চলে এলেও সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামীণ ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।</p> <p>কালের বিবর্তনে আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে পরিবর্তন, গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক সেলুন, জেন্টস পার্লার, লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। তবে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন হাটবাজারে এখনো চোখে পড়ে চির চেনা পুরনো সেই দৃশ্য। স্বল্প খরচের কথা মাথায় রেখে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের কাছে চুল-দাড়ি কাটায়।</p> <p>উপজেলার পৌর বাজারে নরসুন্দর দুলাল শীল বলেন, ‘আমি সপ্তাহে পাঁচ দিন বীরগঞ্জ পৌর বাজারে বসি এবং দুই দিন হাটে ভ্রাম্যমাণভাবে কাজ করি। বংশানুক্রমে দীর্ঘ ৪০ থেকে ৪৫ বছর এই পেশায় নিয়োজিত আছি।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা চার-পাঁচ টাকা ছিল। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলত। কিন্তু বর্তমানে চুল কাটতে ২৫-৩০ টাকা, নাড়িয়া করতে ৩০ টাকা এবং দাড়ি ১৫-২০ টাকায় কেটেও গ্রাহক পাওয়া দুষ্কর। সারা দিনে ২০০-৩০০ টাকা উপার্জন হয়। তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই।’</p> <p>চুল কাটাতে আসা শামসুল আলম বাবুয়া বলেন, ‘আমি এখানেই দীর্ঘদিন ধরে চুল কাটাই। বর্তমানে আধুনিক সেলুন থাকলেও দাম অতিরিক্ত। এখানে সাশ্রয়ী এবং আমার ভালো লাগে, তাই এখানে আসি।’</p> <p>এ ব্যাপারে পৌর কাউন্সিলর মুক্তার হোসেন বলেন, ‘কালের বিবর্তনে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য হাটেবাজারে তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে একটা সময় ছিল বাবার হাত ধরে পিঁড়িতে বসে চুল কাটাতে যেতাম। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে সেলুন গড়ে উঠেছে । অধিকাংশ মানুষ এসব সেলুনে চুল কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমরা হাটেবাজারে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য দেখলেও এমন একটা সময় আসবে যখন নতুন প্রজন্মের কাছে এটা গল্পের মতো মনে হবে।’</p>