<p>যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার বৃহস্পতিবার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ফের শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীরা কয়েক মাস ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি পরিকল্পনা কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখছে।</p> <p>মার্কিন নির্বাচনের আগে দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকতে ব্লিনকেন মধ্যপ্রাচ্যে সফর করছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের  হামলার পর থেকে ওই অঞ্চলে তার একাদশ সফর এটি। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন।</p> <p>ব্লিনকেন বলেছেন, বছরব্যাপী চলা গাজা যুদ্ধের অবসান এবং ৭ অক্টোবর হামলায় জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য আলোচকরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আলোচনা আবার শুরু করবেন।</p> <p>কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-থানির সঙ্গে আলোচনা শেষে ব্লিনকেন বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তটি কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে কথা বলেছি।’ </p> <p>তিনি আরো বলেন, দুই পক্ষ একটি পরিকল্পনা খুঁজছে, ‘যাতে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, হামাস যেন ফের সংগঠিত না হতে পারে এবং ফিলিস্তিনিরা যেন তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন করতে পারে। এটি যুদ্ধ শেষ করার, জিম্মিদের বাড়ি ফেরানোর এবং গাজার জনগণের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরির সময়।’</p> <p>অন্যদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েলি ও মার্কিন প্রতিনিধিরা দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে ব্লিনকেন এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান।</p> <p>এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ মে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। সেখানে সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় জিম্মিদের মুক্তির জন্য আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আলোচনাগুলো থমকে যায়, যার একটি বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা-মিসর সীমান্তে ইসরায়েলি সেনা রাখার ওপর জোর।</p> <p>ইসরায়েল ও সৌদি আরব সফর শেষে ব্লিনকেন তার সফরের তৃতীয় গন্তব্যে বলেন, সিনওয়ার ছিলেন প্রধান বাধা এবং তার মৃত্যুর পর একটি সুযোগ এসেছে।</p> <p>এদিকে শেখ মোহাম্মদ বলেছেন, ‘কিভাবে এগিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে হামাসের কাছ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্টতা নেই।’ তবে সিনওয়ারের মৃত্যুর পর হামাসের সঙ্গে কাতারি মধ্যস্থতাকারীরা ‘ফের আলোচনায় যোগ’ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘হামাসের রাজনৈতিক অফিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কিছু বৈঠক হয়েছে।’ মিসর হামাসের সঙ্গে ‘অব্যাহত’ আলোচনা করছে বলেও জানান তিনি।</p> <p>মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিমি মুক্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনায় সিনওয়ার একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।</p> <p>সমালোচকরা বলছেন, বিষয়টি শুধু হামাসের নয়, বরং বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতাও, যারা ইসরায়েলের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। যদিও ইসরায়েল মার্কিন অস্ত্রের ধারাবাহিক সরবরাহ পেয়ে আসছে।</p> <p><strong>‘বিভিন্ন বিকল্প’</strong><br /> এদিকে হামাস এখনো সিনওয়ারের উত্তরসূরি নির্বাচন করেনি। হামাসের দুটি সূত্র এই সপ্তাহে জানায়, দলটি একজন নির্দিষ্ট নেতা নয় বরং দোহাভিত্তিক একটি নেতৃত্ব কমিটি গঠনের দিকে ঝুঁকছে।</p> <p>ব্লিনকেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ে ‘নতুন কাঠামো’ খুঁজতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছি, তবে (ইসরায়েলি) প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছেন, আমরাও এখনো নিশ্চিত নই যে হামাস আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত কি না। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ হলো আলোচকদের একত্র করা...আমরা অবশ্যই আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো জানতে পারব।’</p> <p>ব্লিনকেন গাজার পুনর্গঠন ও যুদ্ধোত্তর শাসন নিয়ে একটি পরিকল্পনার বিষয়ে আরো স্পষ্টতা খুঁজছেন, যা যুদ্ধের অবসানের প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য আরো ১৩৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মোট ১.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।</p> <p>হামাস ২০০৭ সালে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাতারে একটি অফিস বজায় রেখেছে, যা মূলত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন নিয়ে হয়েছিল। এই অফিসটি হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করেছে, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ ইরান। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন ঘাঁটির আতিথ্য করা কাতার গাজার শাসন পরিচালনা করতে হামাসকে অর্থায়ন করেছে।</p> <p>৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল ও জিম্মিদের ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা কাতারভিত্তিক হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ইরানে সফরের সময় জুলাইয়ে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।</p> <p>সূত্র : এএফপি</p>