<p>জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ রবিবার। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবাসন সংকটের সমাধান হয়নি। এমনকি কলেজ আমলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা হলগুলোও পুনরুদ্ধার করা যায়নি।</p> <p>জানা যায়, কলেজ আমলে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১১টি হল ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে বলতে গেলে সব হলই বেদখল হয়। ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে হল পুনরুদ্ধারে ব্যাপক আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আইনি জটিলতা থাকায় কোনো হলই দখলে নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।</p> <p>তবে বর্তমানে গোপীমোহন বসাক লেনের ৫/১, ২, ৩, ৪ ও ৬ নম্বর টিপু সুলতান রোডের নজরুল ইসলাম হলে কিছু শিক্ষার্থী ও ঈশ্বর দাস লেনের বাণী ভবন ও ইংলিশ রোডের মালিটোলার ৩৫, ৩৬, ৩৭ গোলাপ পাল লেনের হাবিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা থাকেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল নামে মেয়েদের একটি হল রয়েছে, যেখানে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে।</p> <p>আবাসনই বড় সমস্যা : আবাসনই প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাঁরা মনে করছেন, আবাসন সংকট কাটানো গেলে বড় বাঁচা বেঁচে যাবেন শিক্ষার্থীরা।</p> <p>ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মহসিন গালিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন আমার যা অবস্থা, বাড়িতে কিছু পাঠাতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু নিজেই তো চলতে পারছি না।’ নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক সময় সারা দিন না খেয়েও মা-বাবাকে বলি, আমি নিয়মিত খাই। অনেক ভালো আছি।’ আসলে আবাসন সংকটে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছি না।</p> <p>এক বছরেই ৫-৬ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন হতে পারে : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মনে করেন, এক বছরের মধ্যেই পাঁচ থেকে সাত হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সমস্যা সমাধান সম্ভব। ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারের পাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনা প্রায় সাত একর জমিতে দ্রুততার সঙ্গে টিনশেড তৈরি করা সম্ভব, যেখানে পাঁচ থেকে সাত হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা যাবে। তবে প্রায় ৪০ বছর ধরে হাতছাড়া পুরান ঢাকার হলগুলো উদ্ধারে গেলে আবারও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধবে বলে মনে করেন তিনি।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, পুরান ঢাকার বহু বড় ভবন রয়েছে। সেগুলো চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নিলে বহু শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা যাবে।</p> <p>জবি সংস্কার আন্দোলনের হল প্রতিনিধি নওশীন নাওয়ার জয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আবাসনের সমাধানে কাজ করছি। বেদখল হলগুলো নিয়েও কাজ করছি। তার মধ্যে আব্দুর রহমান হল অন্যতম। তিব্বত হল নিয়ে আপাতত আশা দেখছি না। কারাগারের পাশের জমিতে শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনের জন্য উপাচার্যকে বলেছি।’</p> <p>সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারাগারের পাশের জমি বেশ নিচু। অন্যদিকে অধিগ্রহণ বাকি থাকা ১১.৪০ শতকের অংশে কিছু আবাসন রয়েছে। অধিগ্রহণ শেষে আমাদের সেখানে আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেখানের রাস্তা অনেক সরু।’</p> <p>বেদখল হলগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আব্দুর রহমান হল নিয়ে কাজ করছি। শিগগিরই হলটি পেতে পারি। এ ছাড়া বাণী ভবন, হাবিবুর রহমান হল ও নজরুল ইসলাম হল সংস্কারের দিকে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।’</p>