<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কার্তিকের উত্তুরে বাতাসের ঝাপটা তেমন একটা প্রবল না হলেও প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে, শিশির ঝরার দিন চলে এসেছে। বিশ্বসংস্কৃতিতে শিশিরের আলাদা একটি তাৎপর্য রয়েছে। বিশেষত শিশিরের সঙ্গে কবি-সাহিত্যিকদের মনের টানের বিষয়টি যে সহজাত, তা অনেকেই মেনে নিয়েছেন। তবে সাদামাটাভাবে শরতের শিশির যেন কবি-সাহিত্যিকদের আত্মার আত্মীয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঠিক এভাবে বললে হয়তো সবটুকু বলা হয় না। কারণ বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে শিশিরের আত্মীয়তা অনেক পুরনো। আর বাংলা সাহিত্যের একটা অংশ জুড়েও আছে শিশিরের নরম স্পর্শ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশিরের জন্ম ও অন্তর্ধান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুটোই রহস্যে ঘেরা। কখন কোথা থেকে ঝরে পড়ে ঘাসে ঘাসে, গাছের পাতায় পরায় মুক্তোর মালা, কেউ জানে না। আবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে শিশির কোন সুদূরে মিলিয়ে যায়, তা-ও মানুষের দৃষ্টির বাইরে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওল্ড টেস্টামেন্ট মতে, শিশিরের উৎপত্তি এক রহস্যময় উৎ থেকে। ভদ্রতা, আকস্মিকতা আর অদৃশ্যতার রূপই হলো এই শিশির। সূর্যতাপে উবে যায় বলে এটা দ্রুত অন্তর্ধানের প্রতীক হিসেবে সেই প্রাচীনকাল থেকে বিবেচিত হয়ে আসছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ প্রথম থেকেই জানত, বৃষ্টি ও শিশিরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রাচীনকালে ইহুদিদের ধারণা ছিল, বৃষ্টি ও শিশির জেহোভার ইচ্ছানুসারে মেঘ থেকে জন্ম নেয়। কিন্তু কুয়াশা ও কুজ্ঝটিকার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কারণে তাদের পর্যবেক্ষণে প্রায়ই ভুল হয়ে যেত। এ অনুষঙ্গটি বাইবেল যুগে ও বাইবেল-উত্তর যুগের সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর বাংলা সাহিত্যে শিশির প্রেম, সুখকর স্পর্শ ও সৌন্দর্য অনুভূতির প্রতীক হিসেবে ঠাঁই নিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাতাসের জলীয় বাষ্প ধরে রাখার ক্ষমতার সীমা আছে। সেই সীমা বাতাসের তাপের ওপরও নির্ভর করে। বাতাস যদি বেশি গরম হয় তাহলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়ে, আর যদি বাতাস ঠাণ্ডা হয় তাহলে কম জলীয় বাষ্প ধারণ করে। একটা সময় বাতাস আর জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না। তখন তা শিশির হয়ে ঝরতে থাকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জন হ্যাস্টিংস সম্পাদিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ম্যান মিথ অ্যান্ড রিলিজিয়ন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের বিশ্বকোষে শিশির সম্পর্কে বলা হয়েছে : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশিরের আত্মাটি বাস করে স্বর্গের প্রান্তে, বৃষ্টির সঙ্গে রয়েছে যার নিবিড় সম্পর্ক। শীত আর গ্রীষ্মকে সারা জীবন অনুসরণ করে যায় শিশির।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাচীন হিব্রু সাহিত্যে শিশিরকে কল্পনার উপজীব্য বানানোর একটা প্রবল উৎসাহ ছিল। তাই হিব্রু সাহিত্যে শিশিরকে সব সময় তেজোবর্ধক, জীবনসঞ্চারী, নারীর উর্বরতা, আশীর্বাদ, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও পুনরুত্থানের প্রতীক হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। জেহোভা শপথ করে বলছেন : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি শিশিরবিন্দুর মতো ইসরাইলমুখো হয়ে থাকব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অন্যদিকে মুসা (আ.)-এর অনুগত যুবক যোদ্ধাদের সংখ্যা, প্রাণচাঞ্চল্য ও অত্যুত্কৃষ্টতার দিকটিকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোরের উদর হতে জন্ম নেওয়া</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিশিরকণার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জন মিল্টনও তাঁর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্যারাডাইস লস্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এ স্বর্গীয় দূতের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিশিরের উপমা টানতে ভুল করেননি। আবার প্রাচীন সাহিত্যগুলোতে শিশির পড়া বন্ধ হওয়াকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভয়ানক অভিশাপ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। গ্রিক পুরাণ মতে, শিশির হচ্ছে জিউস ও চাঁদের কন্যা। তাই গ্রিক ও লাতিন সাহিত্যে চাঁদ আর্দ্রতার অফুরান উৎ। উপনিষদ মতে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশিরকণা হচ্ছে স্বর্গীয় বীজ, যা পৃথিবী ও কৃষিপণ্যকে উর্বর করে এবং এটা জীবের শারীরিক সুস্থতারও সহায়ক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবহমানকাল থেকে আমাদের এই ষড়ঋতু আর হাজার নদী অঞ্চলের মানুষও বিশ্বাস করে, শিশির হচ্ছে কমনীয়তার প্রতীক। স্রষ্টার অপার করুণা। প্রকৃতির নিরুপম অলংকার।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসলে শিশির পৃথিবীর স্বেদবিন্দু। কোরআন, ওল্ড টেস্টামেন্ট ও বাইবেলে স্বর্গ থেকে ভেসে আসা যে মান্না-সালওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেই স্বর্গীয় খাদ্যের মতো শিশিরও রহস্যময়। কারণ মান্না-সালওয়ার মতো শিশিরও আকাশ থেকে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে ঝরতে থাকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা সকালে অথবা সন্ধ্যায় আকাশ থেকে নীরবে ঝরে পড়ে। তাপমাত্রা বেজায় রকম কম থাকলে শিশির হয়ে যায় বরফ। তখন ওটার নাম হয়ে যায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুষার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। গাছের পাতার ডগা থেকেও মাঝে মাঝে পানি ঝরে। ওটা শিশির নয়, বাড়তি আর্দ্রতা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাতে শিশিরকণা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, কারণ রাতে তাপমাত্রা কমে যায়। তবে শিশির সাধারণত এমন পরিমাণে তৈরি হয় না, যা মানুষ জলের উৎ হিসেবে সংগ্রহ করতে পারে। তার পরও হালে বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তির সাহায্যে শিশিরের চাষ হচ্ছে, যা কৃষির বিকাশে ভূমিকা রাখছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিজ্ঞান মতে, যে তাপমাত্রায় শিশির তৈরি হয় তা-ই শিশিরবিন্দু। অবস্থান, আবহাওয়া এবং দিনের সময়ের ওপর নির্ভর করে শিশিরবিন্দু ব্যাপকভাবে পাল্টে যেতে পারে। অন্যদিকে পৃষ্ঠটানের জন্য স্বল্প আয়তনের তরল পদার্থ সব সময় গোলকের আকৃতি ধারণের চেষ্টা চালায়। আর তরলের মুক্ততল স্থিতিস্থাপক পর্দার মতো কাজ করে এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সংকুচিত হয়ে থাকতে চায়। এ কারণে শিশিরকে সব সময় গোলাকৃতি দেখায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>